২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ১০:২৫

হজযাত্রীদের ওপর বিমানের খড়্গ

জনপ্রতি বিমান ভাড়া বেড়েছে ১৩ হাজার টাকা * প্যাকেজ-১ এ ৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা * প্যাকেজ-২ এ ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৪০ টাকা

জনপ্রতি ১৩ হাজার টাকা বিমান ভাড়া বাড়িয়ে চলতি বছরের হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত হজ প্যাকেজ-১ এ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। প্যাকেজ-২ এ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৪০ টাকা। প্যাকেজটি অনুমোদনের জন্য সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। আর বিমান ভাড়া বাড়ানোয় চরম ক্ষুব্ধ ধর্ম মন্ত্রণালয় ও এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)’। তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ বিমান সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হাজীদের ওপর এ খক্ষ চালাচ্ছে।
হজ প্যাকেজটি সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে জানিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আনিছুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘হজ প্যাকেজের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। বিমান ভাড়ার বিষয়ে শনিবার এ সচিব বলেন, বিমান ভাড়ার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আমলে নেয়া হয়নি। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা একমত ছিলাম না।’

জানা গেছে, ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে একজন সাধারণ যাত্রীর জন্য ৩৬ থেকে ৪০ হাজার টাকা নেয়া হয়। আর ওমরাহ যাত্রীর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৪৯ থেকে ৫২ হাজার টাকা রাখা হয়। একই দূরত্বে হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে সেই ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি টাকা। যা গত বছর ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা। অর্থাৎ এ বছর হজযাত্রী প্রতি বিমান ভাড়া বেড়েছে ১৩ হাজার টাকা।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম যুগান্তরকে বলেন, যাত্রীপ্রতি বিমান ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ১৩ হাজার টাকারও বেশি; যা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। কারণ ধর্ম মন্ত্রণালয় ও এজেন্সি মালিকরা বিমান ভাড়া বাড়ানোর চরম বিরোধিতা করেছে। তা সত্ত্বেও বিমান তাদের সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হাজীদের ওপর জুলুম করছে। কারণ একই দূরত্বের পথে যেখানে বিমান সাধারণ যাত্রীদের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছে সেখানে হাজীদের জন্য দ্বিগুণ হতে পারে। কিন্তু তিনগুণের বেশি হয় কোন যুক্তিতে? আর যারা সেবা দেবে, তারাই কেন ভাড়া নির্ধারণ করবে। সরকারের দায়িত্ব তাহলে কি? হাজীদের স্বার্থ কে দেখবে?
এসব অভিযোগ নাকচ করে বিমানের মুখপাত্র (জেনারেল ম্যানেজার) শাকিল মেরাজ যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের পর এ বছর ৪ দফায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সার্ভিস খাতে ৫ শতাংশ ভ্যাট বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া হজ ফ্লাইটগুলো যাবে ভর্তি হয়ে ফিরবে খালি, অতিরিক্ত সেবা ও জনবল নিয়োগ দিতে হয়। এসব কারণে এ বছর বিমান ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিবারের মতো এবারও দুটি হজ প্যাকেজ প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ১৭ হাজার টাকা বেশি প্রস্তাব করে প্যাকেজ-১ এ খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। গত বছর এ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা। ১২ হাজার টাকা বেশি প্রস্তাব করে প্যাকেজ-২ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৪০ টাকা। গত বছর ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৫ টাকা। একই প্যাকেজ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হজযাত্রীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। প্যাকেজের বাইরে প্রত্যেক হজযাত্রীকে কোরবানি খরচ বাবদ সাড়ে ১০ হাজার টাকার (৫৫০ রিয়াল) সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল নিজ দায়িত্বে সঙ্গে নিতে হবে। গত হজে যাত্রীদের প্রতিটি ট্রলি ব্যাগের মূল্য আড়াই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ হাজীকে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দামের নিুমানের ব্যাগ সরবরাহ করার অভিযোগ উঠে। কোনো কোনো এজেন্সি যাত্রীদের ট্রলিব্যাগ ছাড়াই হজে পাঠায় বলে অভিযোগ উঠে। এসব বিষয় বিবেচনায় এবার হজ প্যাকেজে ট্রলিব্যাগের কোনো ব্যয় নির্ধারণ করা হয়নি। সরকারের বেঁধে দেয়া শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট আয়তন, পরিমাপ ও কালারের ট্রলিব্যাগ সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সি যাত্রীদের সরবরাহ করবে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি সৌদি আরবের হজ কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মধ্যে হজ চুক্তি সম্পন্ন হয়। ২০১৮ সালের হজ পালনেচ্ছুদের নিবন্ধন শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ২০১৯ সালের হজ নিবন্ধনও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে হজে যাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ বাংলাদেশি। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২১ আগস্ট চলতি বছরের পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/21210