২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ১০:১৮

আড়াই মাসেও খুঁজে পাওয়া যায়নি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য রয়েছে গত আড়াই মাস ধরে। এ শূন্যতা নিয়েই চলেছে এ বছরের (২০১৮) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠান। আর ঢাকা বোর্ড হচ্ছে অন্যান্য বোর্ডগুলোর প্রধান সমন্বয়কারী।

এ বছরের এসএসসিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাও নজিরবিহীন। চেয়ারম্যান না থাকায় অন্য বোর্ডগুলোও এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। তারপরও গতকাল পর্যন্ত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি যিনি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ বোর্ডে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। বোর্ডের চেয়ারম্যানের শূন্য পদটিতে নিয়োগ দিয়ে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, বোর্ড চেয়ারম্যান পদের জন্য একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং আরেকজন সাবেক মন্ত্রীর তদবির জটিলতায় আটকে আছে চেয়ারম্যান পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া।
গত ৮ জানুয়ারি প্রফেসর মাহাবুবুর রহমানকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই বোর্ড চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়। বর্তমানে চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন বোর্ডের সচিব (সহযোগী অধ্যাপক) শাহেদুল খবীর চৌধুরী। পদাধিকার বলেই বোর্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বোর্ড সচিব। দেশের অন্য সব বোর্ডে চেয়ারম্যানরা হচ্ছেন অধ্যাপক পদ মর্যাদার। ফলে সহযোগী অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্ব পালন করায় এক ধরনের দূরত্ব ও সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে অন্য বোর্ডগুলোর সাথে। আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির বৈঠকেও বোর্ড চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত থাকছেন।

অন্য বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান না থাকায় প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়ছে অন্য বোর্ডগুলো। ঢাকা বোর্ড আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা, পরীক্ষার ফল, একাদশে ভর্তিসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আন্তঃবোর্ডের বৈঠকে হয়ে থাকে। পদাধিকার বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এসব বৈঠকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

শুধু চেয়ারম্যান নন, বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদাধিকার বলে আন্তঃবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে থাকেন। কিন্তু আড়াই মাসেও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ না হওয়ায় চরম জটিলতা তৈরি হয়েছে। আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে বলে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব বলছেন গত কয়েক দিন থেকে। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ভিত্তি কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে অন্য বোর্ড চেয়ারম্যানরা। এ ছাড়া এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও পরে অনলাইনে সারা দেশে একাদশ শ্রেণীর ভর্তির মতো কঠিন কাজের সমন্বয় করতে হবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে। এই কঠিন সময় বোর্ডের চেয়ারম্যান না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অন্য বোর্ডগুলো।
একাধিক বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে বোর্ড চেয়ারম্যানদের আন্তঃবোর্ড সভায় ডাকা হয়। কিন্তু জুনিয়র শাহেদুল খবীরের সাথে বৈঠক করতে অনীহা প্রকাশ করে আন্তঃবোর্ড সভায় অন্য বোর্ডগুলোর সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের পাঠান চেয়ারম্যানরা। সেখানেও শাহেদুল খবীরের সাথে বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বরিশাল বোর্ডের একজন কর্মকর্তা। এটি নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এ দুইজন। পরে সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

কর্মকর্তারা জানান, চেয়ারম্যান নিয়োগ না হওয়ার নেপথ্যে কাজ করছেন বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী নিজেই। আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত এ পদটি আকড়ে রেখে তিনি তাদের পছন্দের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র নিশ্চিত করতে চান। এসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের দায়ে বোর্ড থেকে সাতজনকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগ ৮ থেকে ১০ বছর ধরে বোর্ডের খুঁটি গেড়ে বসেছিলেন। কিন্তু বোর্ডের সিন্ডিকেটের মূল হোতা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে না সরানোয় বদলির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একসাথে সবাইকে বদলি করলে বোর্ড ফাঁকা হয়ে যায়। আর সচিব যেহেতু বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তাই শত অভিযোগ থাকার পরও তাকে বদলি করা হয়নি। তবে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার পর পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নেবে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। তবে নতুন চেয়ারম্যান করে নাগাদ নিয়োগ দেয়া হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/296748