ময়মনসিংহের খাগডহর ফেরিঘাট-সিরতা সড়কের কাটাখালের ওপর নির্মাণের পরই হেলে পড়া ব্রিজ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ১০:১৭

নির্মাণের পরই সেতু পরিত্যক্ত

সাইফুল মাহমুদ ময়মনসিংহ অফিস

ময়মনসিংহের খাগডহর ফেরিঘাট-সিরতা সড়কের কাটাখালের ওপর নির্মিত ৬০ ফুটের সেতুটি নির্মাণের পরই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। গত বছর নির্মাণের পর বন্যার পানির তোড়ে সেতুটি প্রায় দুই ফুট হেলে পড়ে। একই সাথে সেতুর দুই পাশের মাটিও সরে গেছে। সেতুটি যাতায়াতের একদিনও ব্যবহার হয়নি। এক বছর ধরে সেতুটি পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে। দুই পাশে মাটি না থাকলেও সেতুর ওপর ‘সাবধান’ সেতুটি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত; সাবধানে চলাচল করুন অনুরোধক্রমে কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে।

ময়মনসিংহ শহরতলীর খাগডহর ফেরিঘাট হয়ে সিরতা সড়ক পথে প্রতিদিনই জেলার ফুলপুর, তারাকান্দা ও সদর উপজেলার সিরতা, সারবাজার, বোরোরচরসহ ভাইটকান্দি হয়ে শেরপুর জেলার হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। ওই সব এলাকায় বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ২০১৬ সালের আগস্টে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কাটাখালে সেতুটি নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে। ওই বছরের ডিসেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জহিরুল হককে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে ৭৫ দিনের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্নের কথা থাকলেও ১৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর সেতু নির্মাণকাজ শেষ হতে জুলাই পার হয়ে যায়। বর্ষার আগ মুহূর্তে পাইলিং ছাড়াই সেতুর কাজ শুরু করলে গ্রামের মানুষ আপত্তি জানান। জেলখানা চরের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন সবুজ প্রকল্প কর্মকর্তা ও ঠিকাদারকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, যেভাবে ব্রিজ করছেন, এভাবে ব্রিজ হবে না। তখন তারা জানতে চান তাহলে কী করা যায়? জবাবে তিনি বলেছিলেন, পাইলিং করতে হবে। আরো বড় ব্রিজ করতে হবে। নইলে টিকবে না। তখন তারা (ঠিকাদার ও প্রকল্প কর্মকর্তা) তাকে বললেন, আগে হইতে দিবেন তো? অর্থাৎ আগে হোক, পরে ভেঙে গেলে তো সরকারই বুঝবে। এ কথা জানিয়ে তিনি বললেন, ‘আগেই বলেছিলাম ব্রিজটি টিকবে না, এখন তো আমার কথাই সত্যি হলো।’ প্রবীণ ওই ব্যক্তি আরো বলেন, শুকনো মওসুমে এটাকে নদীও বলা যায় না, খালও বলা যায় না। কিন্তু বর্ষায় পানিতে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে একাকার হয়ে যায়। প্রচণ্ড স্রেত থাকে। চলাচল সমস্যা হয়। এ দিকে নি¤œমানের কাজ করায় স্থানীয় যুবকেরাও সেতু নির্মাণে বাধা দিয়েছিলেন।
ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের ছাত্র মানিক হাসান জানান, সেতুটি নির্মাণে অনিয়ম করা হয়েছে। পরিমাণ মতো বালু, সিমেন্ট ও রড দেয়া হয়নি। এ জন্য বাধা দিলে পুলিশ ডেকে তাদের নিবৃত্ত করা হয়। এলাকাবাসী জানান, নির্মাণের পর বর্ষায় পানির তোড়ে সেতুটি প্রায় দুই ফুট হেলে পড়ে। সরে যায় দুই পাশের মাটি। সেতুটি এখন পরিত্যক্ত। একই এলাকার রুহুল আমিন, কবির ও রহিম জানান, নারী-শিশু ও রোগী নিয়ে যাতায়াত করা বিপজ্জনক। শহরে যাতায়াতে খাগডহর ফেরিঘাট-সিরতা সড়ক সংস্কার ও কাটাখালের সেতুটি খুবই প্রয়োজন।
বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারের স্কুল ও কলেজগামী কয়েক শ’ শিক্ষার্থীর স্বল্পসময়ে যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি। শিক্ষার্থীদের সহজ চলাচলের স্বার্থেই অবিলম্বে সড়কটি সংস্কার ও কাটাখালের পরিত্যক্ত সেতুটি ব্যবহার উপযোগী করা প্রয়োজন।
এ দিকে খাগডহর ফেরিঘাট থেকে কাটাখাল পর্যন্ত সড়কটিরও বেহাল দশা। দেড় মাইলের পুরো সড়কটি কাঁচা। বৃষ্টি হলে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। সড়কটির মাঝপথে একটি কালভার্ট বসানো হলেও দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই পথে চলাচলকারী।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুবিনুর রহমান সেতু সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, সড়কটির সংস্কারে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই সেতু নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এ মুহূর্তে সেতু নিয়ে কিছু না লেখার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/296459