২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:৫৯

বর্ধিত ব্যয় ছাড়া শেষ হয় না সড়ক প্রকল্প

ইটনা থেকে অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণব্যয় দ্বিগুণ

সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (্এডিপি) বেশির ভাগ প্রকল্পই নির্ধারিত অনুমোদিত ব্যয়ে কখনোই শেষ হয় না। এক বা দু’বার ব্যয় বাড়াবেই বাস্তবায়নকারী সংস্থা। অনুমোদিত ব্যয়ে প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় সরকারকে প্রকল্পের পেছনে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এসব বেশির ভাগই হচ্ছে সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পগুলোতে। একই অবস্থা ইটনা থেকে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটির। ৪৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটির ব্যয় এখন দ্বিগুণ বেড়ে ৮৯৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় দাঁড়াচ্ছে। সময় বাড়ছে আরো দু’বছর। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দেয়া প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব থেকে এসব জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের দেয়া প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠাইন এবং অষ্টগ্রাম উপজেলায় ২৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দেয়া প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ৪৩৩৮ কোটি ৩৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৮ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক চার মাস আগে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। এখানে ব্যয় বেড়েছে ১০৪.২৮ শতাংশ বা ৪৫৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ফলে ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে এখন ৮৯৫ কোটি ৪৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় দাঁড়াচ্ছে। মেয়াদও দু’বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালে জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আড়াই বছরের প্রকল্প টেনে নেয়া হচ্ছে সাড়ে চার বছরে।

প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়েছে, এটি হাওর এলাকায় অবস্থিত। এই এলাকায় বর্ষাকালে নৌপথে চলাচল করা গেলেও শুষ্ক মওসুমে জনসাধারণের যাতায়াতসহ কৃষিজাত পণ্য এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এই প্রকল্পটি হলো তিন উপজেলার আন্তঃসংযোগ সড়ক।
এক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ না করায় ব্যয় দু’হাজার ১৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা থেকে বেড়ে তিন হাজার ৮১৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফেনীর নতুন ডাকাতিয়া ও পুরাতন ডাকাতিয়া ফেনী নদীর খনন প্রকল্পটিও ৭৯ কোটি টাকা ব্যয় থেকে বেড়ে এখন ১৪৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। হাতিরঝিল প্রকল্পটি ছিল ৬ শ’ কোটি টাকার। এখন এটির ব্যয় দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। মগবাজার ফ্লাইওভারসহ সব ফ্লাইওভার প্রকল্পের একই দশা। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৫৫৩ কোটি টাকা। এর ব্যয় এখন দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২৮ কোটি টাকায়।

ইটনা-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রায় ২ বছর দুই মাসে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি বা ব্যয় হয়েছে ২১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত ব্যয়ের ৬১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর বাস্তব অগ্রগতি হলো মাত্র ৬২ শতাংশ। যেখানে অনুমোদিত সময়ের মাত্র ৪ মাস বাকি আছে। এখন তারা ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ আরো বাড়ানোর প্রস্তাব করছে। ৯১ দশমিক ৫২ হেক্টর জমির অধিগ্রহণ মূল প্রস্তাবনায় ছিল। সেটার সাথে আরো ৪১ দশমিক ৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে প্রকল্পের ব্যয় এই খাতেই বাড়ছে ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রকল্পে এখন তারা নতুন করে পে-লোডার কেনা, ডাম্প ট্রাক কেনার প্রস্তাব করেছে। যার যৌক্তিকতা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন কমিটি থেকে প্রশ্ন ও আপত্তি তোলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ও আইএমইডির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশাল গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রণালয়গুলো থেকে প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়ে তা অনুমোদন নেয়া হয়। কিন্তু যে পরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প নেয়া হয়, অনুমোদনের পর সেই গুরুত্ব আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেখা যায় না। ফলে এসব উন্নয়ন প্রকল্প চলে বছরের পর বছর। আসতে থাকে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা। প্রকল্পভুক্ত এলাকার সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ হয় না। প্রকল্প অনুমোদনের পর কয়েক মাস বা বছর গেলে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সংশোধনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ ও ব্যয়ের খাত তারা সংযোজনের প্রস্তাব করে।


 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/296463