২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:১৫

দুই ধাপ অগ্রগতি কি অভিনব মশকরা?

বার্লিনভিত্তিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) ২০১৭ সালের দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করেছে। ২২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে এ সূচক তুলে ধরেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ ধারণা সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ দুর্নীতিতে দুই ধাপ এগিয়েছে। ১৮০টি দেশের ওপর তৈরি টিআইয়ের আলোচ্য সূচকে বাংলাদেশ ২০১৬ সালের শীর্ষ দুর্নীতিকবলিত দেশগুলোর মধ্যে ১৫তম স্থানের জায়গা থেকে এবার ১০০ নম্বরের মধ্যে ২৮ স্কোর করে দুই ধাপ ওপরে উঠে ১৭তম স্থান পেয়েছে। কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ৮৯ স্কোর করে শীর্ষে অবস্থান করছে নিউজিল্যান্ড। ৮৮ স্কোর করে ওই স্বচ্ছ তালিকার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ডেনমার্ক এবং ৮৫ স্কোর করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে যৌথভাবে ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড। বাংলাদেশের সঙ্গে একই স্কোর করে এ তালিকায় রয়েছে গুয়াতেমালা, কেনিয়া, লেবানন ও মৌরিতানিয়া। উল্লেখ্য, টিআই দুর্নীতি পরিমাপে বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। সংস্থাটি এবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের রুল অব ল’ ইনডেক্স, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বার্টলসমেন্ট ফাউন্ডেশনের ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স, ইনফর্মেশন হান্ডলিং সার্ভিসেস গ্লোবাল ইনসাইড কান্ট্রি রিস্ক রেটিং এবং বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইন্সটিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট- ইত্যাদি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ২০১৭ সালের দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) তৈরি করেছে।

টিআইয়ের দুর্নীতি পরিমাপের স্বচ্ছতার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ থেকে আমরাও অনেক সময় এমন প্রশ্ন উত্থাপন করেছি। বলেছি, টিআইয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বেশি দুর্নীতিকবলিত দেশগুলোকে চিহ্নিত করে ওই দেশগুলোকে দুর্নীতি হ্রাসের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে সতর্ক সংকেত দেয়া। দুর্নীতিতে কাউকে ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ড করা টিআইয়ের কাজ নয়। কারণ ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতার বিচারের সঙ্গে দুর্নীতির হ্রাসবৃদ্ধির বিচার ও পরিমাপের পার্থক্য আছে। ফলে এভাবে দুর্নীতিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় করলে দুর্নীতিতে সর্বনিম্ন স্থান পাওয়া দেশগুলো থেকে অভিযোগ করা হয়, রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য বিশেষ উদ্দেশ্যে সুকৌশলে তাদের দুর্নীতির পরিমাপকে প্রথম বা দ্বিতীয় করা হয়েছে। এ রকম অভিযোগের পেছনে সত্যতা আছে কিনা, তা সমাজবিজ্ঞানীদের জন্য গভীর গবেষণার বিষয়। এমন অভিযোগ বাংলাদেশ থেকেও অনেক সময় উত্থাপিত হয়েছে। স্মর্তব্য, ২০০১ সালের মধ্যভাগে অষ্টম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ প্রথমবার যখন ৯১টি দেশের মধ্যে টিআইয়ের দুর্নীতির ধারণা সূচকে প্রথম হয়, তখন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ওই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে টিআইয়ের ওপর বিষোদ্গার করেছিল। প্রথিতযশা কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ২০০১ সালের ৯ ও ১০ জুলাই এ পত্রিকায় ‘টিআইয়ের রিপোর্টের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কতটা’ শীর্ষক প্রবন্ধ লিখেছিলেন।
বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি কমানোর জন্য টিআইয়ের কাজ করার বিষয়টি ইতিবাচক। সংস্থাটির আসল উদ্দেশ্য বেশি দুর্নীতিকবলিত দেশগুলোকে সতর্ক সংকেত দিয়ে তাদের দুর্নীতি কমানো। সে ক্ষেত্রে সংস্থাটির দুর্নীতি পরিমাপ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এজন্য দুর্নীতির পরিমাপ করতে গিয়ে ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড না করে সংস্থাটি (ক) অত্যধিক দুর্নীতিকবলিত দেশ; (খ) অধিক দুর্নীতিকবলিত দেশ; (গ) মধ্যম দুর্নীতিকবলিত দেশ; (ঘ) নিম্ন-মধ্যম দুর্নীতিকবলিত দেশ এবং (ঙ) কম দুর্নীতিকবলিত দেশ হিসেবে ভাগ করে বেশি দুর্নীতিকবলিত দেশগুলোকে সতর্ক সংকেত দিতে পারে। দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট, সেকেন্ড না করে উপরিউক্ত প্রক্রিয়ায় টিআই বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি উপস্থাপন করলে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এমনটি করলে তখন আর কোনো দেশ এককভাবে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে না এবং টিআইয়ের বিরুদ্ধে ওই দেশকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার অভিযোগ উঠবে না; কিন্তু তা করা হয় না। সেজন্য বর্তমান অবস্থায় লবিং করে কোনো দেশ টিআই প্রকাশিত সিপিআই-এ তার অবস্থান উঁচুতে বা নিচুতে নিতে পারে কিনা, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে। এর ফলে অনেক সময় টিআই প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচকে একটি দেশের দুর্নীতির অবস্থান ওই দেশের সাধারণ মানুষের ধারণার সঙ্গে মেলে না।

২০১৭ সালে টিআই বাংলাদেশের দুর্নীতিতে গত বছরের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে যাওয়ার যে তথ্য পরিবেশন করেছে, তা এ দেশের সাধারণ মানুষের ধারণার বিপরীত। সাধারণ মানুষ লেখাপড়া কম জানলেও তাদের বিচার-বিবেচনা কিন্তু অসাধারণ। দেশের নাগরিক হিসেবে দুর্নীতি বাড়ছে না কমছে, সে বিষয়ে তারা ভালোই বিচার করতে পারেন। সেজন্য এবার টিআইয়ের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের যে দুই ধাপের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে খাপ খায়নি। সাধারণ মানুষ গবেষকদের মতো নন, তারা সাধারণভাবে চিন্তা করেন। তাদের পর্যবেক্ষণের মধ্যে কোনো ঘোরপ্যাঁচ নেই। কাজেই সাধারণ মানুষ টিআইয়ের বাংলাদেশের দুর্নীতির দুই ধাপ অগ্রগতি প্রদর্শিত আলোচ্য সূচক কতটা বিশ্বাস করবেন, তা যাচাইসাপেক্ষ। কারণ এমন এক সময়ে টিআইর দুর্নীতির আলোচ্য সূচক উপস্থাপন করা হয়েছে, যখন সাধারণ মানুষ দেশে দুর্নীতির কারণে শেয়ারবাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হতে দেখছেন। তারা খুন, গুম, ক্রসফায়ার ও মাদক ব্যবসা চলতে দেখলেও সেগুলোর বিচার হতে দেখছেন না। পরিবর্তে তাদের মনে আদালতের ওপর সরকারি প্রভাবের জোরালো অভিযোগ সক্রিয় রয়েছে, যা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক রিপোর্টেও উপস্থাপিত হয়েছে।
নাগরিকদের পর্যবেক্ষণে দেশে একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, নারায়ণগঞ্জের ত্বকী, কুমিল্লার তনু এবং চট্টগ্রামের মিতু হত্যার সুরাহা হয়নি। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এসব চৌর্যবৃত্তির যখন বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন নাগরিকরা কীভাবে বিশ্বাস করবেন, দেশে দুর্নীতি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে? নাগরিকরা যখন আরও দেখছেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে চলছে আর্থিক লুটপাট, সস্তা শ্রমিকের দেশে ফ্লাইওভার তৈরিতে তুলনামূলকভাবে সিঙ্গাপুর এবং লন্ডনের চেয়ে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পারছেন- উন্নয়নের নামে এসব ক্ষেত্রে কী পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। তাদের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে সচেতন অনেকে আর্থিক সেক্টরের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিচার প্রক্রিয়ার চেয়ে রাজনৈতিক সেক্টরের ১-২ কোটি টাকা ‘আত্মসাতের’ অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়ার দ্রুতগতি দেখে বিচারাঙ্গনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আবার বিরল প্রজাতির অভিনব দুর্নীতি। বিনা পুঁজির প্রশ্নফাঁস ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর আগে উচ্চদামে পরীক্ষার্থীদের কাছে বিক্রয় করা হচ্ছে। ফলে দেশে নকলপ্রবণতা কমে গেছে। এখন অনেক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক অপেক্ষা করেন উত্তরসহ ফাঁসকৃত প্রশ্ন ক্রয়ের জন্য। আরও আশ্চর্যের বিষয়, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে স্বীকার করেও সেসব পরীক্ষা বাতিল করা হচ্ছে না। ফলে টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে ভালো রেজাল্ট করে ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে- তারা নিশ্চিতভাবে আরও একধাপ বেশি দুর্নীতি করবে। এমন পরিস্থিতি দেখার পর নাগরিকরা যদি শোনেন, দেশ দুর্নীতিতে দুই ধাপ এগিয়েছে তবে তারা কতটুকু তা বিশ্বাস করবেন, তা সাধারণ নাগরিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনুধাবন করা যায়।
বাংলাদেশে এখন চলছে নির্বাচনের বছর। নির্বাচনী দুর্নীতি এ দেশে নৈমিত্তিক ঘটনা হলেও নির্বাচনী স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ নেই। স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। সে ক্ষেত্রে চলছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি। সরকারি দল সরকারি প্রটোকল ব্যবহার করে সভা-সমাবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা করে ভোট চাইছে, আর অন্য দলগুলোকে একইভাবে প্রচারণা করতে না দিয়ে তাদের প্রতি করা হচ্ছে মামলা, নির্যাতন ও বৈরী আচরণ। মানুষ স্বচ্ছ নির্বাচনে বাধাহীনভাবে ভোট দিতে চান। কিন্তু সরকারি সদিচ্ছার অভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারায় আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে নাগরিকরা বাধাহীনভাবে ভোট দিতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক দুর্নীতির এ মহামারীর মধ্যে দুর্নীতি বিষয়ের ছাত্র ও গবেষকরা টিআইয়ের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ অগ্রগতির খবর শুনে একে ‘তামাশা’ হিসেবে গণ্য করে এ বিষয়ে মন্তব্য করছেন না।

বাংলাদেশে দুর্নীতি কমুক বা না কমুক, নির্বাচনের বছরে সরকারি দল টিআইয়ের দুর্নীতিতে বাংলাদেশের দুই ধাপ অগ্রগতির তথ্যটি তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করবে। মানুষ বিশ্বাস করুক বা না করুক, তারা দাবি করবে যে, তারা দুর্নীতি কমিয়ে এনেছে এবং তাদের ভোট দিয়ে পুনর্বার দেশ শাসনের সুযোগ দিলে আর যেটুকু দুর্নীতি আছে, তারা তা কমিয়ে ফেলবেন। প্রতিবারের মতো এবারও হয়তো রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসনিক দুর্নীতি কমানোর জন্য ক্ষমতায় গেলে ন্যায়পাল গঠনের ওয়াদা করবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করবে, এমনকি দু-একটি দল নির্বাচনের প্রাক্কালে ভোটারদের সমর্থন পেতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদও ঘোষণা করতে পারে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলে ক্ষমতায় যাওয়ার পর দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে আপস করা এ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। তবে লোক দেখানোর জন্য এ দেশে মাঝে মধ্যে ছোট ছোট দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়া হয়। তবে বড় দুর্নীতিবাজদের শাস্তির উদাহরণ বিরল।
মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা দুর্নীতি করেছে, এ মুক্তিযুদ্ধবান্ধব সরকার তাদের শাস্তি দেয়নি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ২০০৯ সালে সাবরেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরিপ্রাপ্তদের শাস্তি হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশি-বিদেশি সম্মানিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এক ভরি সোনা ও ৩০ ভরি রুপা নির্মিত ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করার মহান কাজটিকেও এ দেশের চতুর দুর্নীতিবাজরা কলঙ্কিত করে সোনা-রুপার পরিবর্তে দস্তা, তামা, নিকেল ও পিতলের ক্রেস্ট বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে ওই নকল ক্রেস্ট সম্মানিত অতিথিদের হাতে তুলে দিয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা দুর্নীতির প্রতি কত বেশি সহনশীল হলে এমন দুর্নীতিবাজদেরও শাস্তি থেকে রেহাই দেন, তা বুঝতে দুর্নীতি গবেষক হওয়া লাগে না। এ দুর্নীতি অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে যথেষ্ট তথ্য পাওয়ার পরও দুদক ক্রেস্ট জালিয়াতির অনুসন্ধান কেন বন্ধ করে দিয়েছে, তা এক অনুদ্ঘাটিত রহস্য। তবে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ কিন্তু মোটেও দুর্নীতিপরায়ণ নন। শিক্ষিত আমলা, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিক ও স্বচ্ছ পোশাকধারী পেশাজীবীদের দুর্নীতির দায়ে এদের ললাটে দুর্নীতির কলঙ্ক লাগে।
এসব কিছু দেখে-শুনে বলা যায়, যেসব দেশে সমাজ, শিক্ষা ও সামাজিকীকরণে দুর্নীতিবান্ধব কালচার বিরাজ করছে, ওইসব দেশে সরকারি সদিচ্ছা না থাকলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা বড় কঠিন। এসব দেশে দুর্নীতিবাজরা রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয় পায়। সেজন্য দুর্নীতিবাজরা সমাজে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারে। সম্মানজনক পরিচিতি পায়। আর সরকারও প্রতিবছর বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ উপহার দিয়ে এসব দুর্নীতিবাজকে উৎসাহিত করে। দুর্নীতিচর্চার এমন ভয়াবহতা, দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ এবং সামাজিক ভাইরাস হিসেবে সমাজের সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির এহেন প্রাতিষ্ঠানিকতা পাওয়ার পরও যদি শুনতে হয়, টিআই রিপোর্টে দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতির দুই ধাপ অগ্রগতি হয়েছে, তাহলে দুর্নীতিমুক্ত দেশ দেখতে আগ্রহী সাধারণ নাগরিকরা তাকে ‘অভিনব মশকরা’ হিসেবে বিবেচনা করেন।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
akhtermy@gmail.com

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/sub-editorial/20914