২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৩৭

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে অনাগ্রহ বাংলাদেশ ব্যাংকের

বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে সোনালী ব্যাংকের যুক্তরাষ্ট্র শাখায়

যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ইনকরপোরেশন (এসইসিআই) নামে সোনালী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চালু রাখার বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোনালী ব্যাংককে লেখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে এ ধরনের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সোনালী ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, আড়াই লাখ মার্কিন ডলার মূলধন নিয়ে ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করে সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ইনকরপোরেশন (এসইসিআই)। পরে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন সাড়ে ৯ লাখ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়।
এ ছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে এসইসিআইকে ১৯৯৫ সালে পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার এবং ২০১০ সালে সাড়ে ১৩ লাখ মার্কিন ডলারসহ মোট সাড়ে ১৮ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আর্থিক নিরাপত্তা দৃঢ়করণের জন্য ৫ শতাংশ সুদে ৫ বছর মেয়াদে ১০ লাখ মার্কিন ডলার মেয়াদি ঋণ দেয়া হয়। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ওই একই বছর সাড়ে তিন লাখ মার্কিন ডলারের ঋণসুবিধা দেয়া হয়। এতেও ৫ শতাংশ সুদে ১০ বছরের জন্য এ ঋণসুবিধা দেয়া হয়।

সোনালী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত এসইসিআই সোনালী ব্যাংককে ছয় লাখ মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছে। বর্তমানে সাড়ে ১২ লাখ ডলার ঋণ অপরিশোধিত রয়েছে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সোনালী ব্যাংক এসইসিআইকে প্রদত্ত ঋণের ওপর বিলম্বে অর্থাৎ ১৯৯৫ সালের ২৮ মে থেকে ২০০১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সময়ের জন্য প্রথম সুদ আরোপ করা হয় ২০০৩ সালের ৩১ জুলাইতে। একই সাথে ২০০২ সালের সুদ আরোপ করা হয় ২০০৩ সালের ৮ ডিসেম্বর। এ দিকে সোনালী ব্যাংকের এসইসিআইকে সোনালী ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ওপর ২০১১ ও ২০১২ সালের আদায়যোগ্য সুদ ও কিস্তি আদায় ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্থগিত রাখার অনুমোদন প্রদান করা হয়। তবে সুদ চার্জ না করার অনুমোদন প্রদান করা হয়নি। অথচ সোনালী ব্যাংক থেকে ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিন বছরের সুদ চার্জ করা হয়নি বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে।
অপর দিকে এসইসিআই তার বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সোনালী ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের স্থিতির সমপরিমাণ দায় হিসেবে প্রমিজারি নোট ইস্যু করা হয়েছে, যার বিপরীতে কখনো শূন্য শতাংশে, আবার কখনো ১ শতাংশ হারে সুদারোপ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে দেয়া সর্বমোট সাড়ে ১৮ লাখ মার্কিন ডলার ঋণের বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে ছয় লাখ মার্কিন ডলার আদায় করে আবশিষ্ট সাড়ে ১২ লাখ মার্কিন ডলারকে ঋণের স্থিতি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংক দাখিলকৃত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের অনুলিপি পর্যালোচনা করে দখা গেছে সুদ মওকুফ ও বকেয়া কিস্তি স্থগিত রাখার বিষয়গুলো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করেনি।

প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ২৮ লাখ মার্কিন ডলারের অধিক পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। তবে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় বিবেচনায় নিলে মোট বিনিয়োগকৃত অর্থের বর্তমান মূল্যমান অনেক বেশি হবে। এর বিপরীতে ১৯৯৪ থেকে ২০১৬ সময়ে অর্থাৎ বিগত ২২ বছরে শুধু একবার অর্থাৎ ২০১১ সালে এক লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মুনাফা দেশে প্রত্যাবাসিত হয়েছে এবং ২০১৬ শেষে অর্থাৎ ২২ বছরে প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জিভূত মুনাফা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৯২ হাজার ৮৮৪ মার্কিন ডলার। বকেয়া সুদসহ সোনালী ব্যাংক থেকে এসইসিআইকে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ বিবেচনায় নিলে এ যাবৎ প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে।
সোনালী ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, এসইসিআইয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আহরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৭ কোটি মার্কিন ডলার। এ রেমিট্যান্স-প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৮৭ লাখ ডলার এবং সাত কোটি ৭১ লাখ ডলার।

এসইসিআইয়ের ব্যবসা পরিচালনায় প্রদত্ত মূলধন বা ঋণ প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ এবং বকেয়া সুদসহ এসইসিআইয়ের পরিচালনা ব্যয় বাবদ প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ বিবেচনায় নিলে বিনিয়োগকৃত বা প্রেরিত সর্বমোট অর্থের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে অর্জিত সুবিধা অত্যন্ত তাৎপর্যহীন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে।
এ পরিস্থিতিতে এ ধরনের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চালু রাখা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমতাবস্থায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা আর্থিকভাবে কিংবা অন্য কোনো বিবেচনায় যৌক্তিক কি না এ বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/296117