২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৩৬

দুর্নীতির মাত্রা উদ্বেগজনক

সংসদ কার্যকর না হলে দুর্নীতি কমবে না : ড. ইফতেখারুজ্জামান

দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০১৭তে বাংলাদেশের অবস্থান ও সূচকের দুই ধাপ উন্নতি হলেও সূচকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলক এখানে দুর্নীতির মাত্রা অধিক বলা যায়। গত ২০১৭ সালে মোট ১০০-এর মধ্যে স্কোর ২৮। আর অবস্থান দুই ধাপ এগিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে উচ্চক্রম অনুযায়ী ১৪৩তম এবং নি¤œক্রম অনুযায়ী ১৭তম; যা ২০১৬ সালে নি¤œক্রমে ছিল ১৫তম এবং উচ্চক্রমে ১৪৫তম। দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। আর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই ধারণা সূচক প্রকাশ করে বলেছেন, সংসদ কার্যকর না হলে দেশে দুর্নীতি কমবে না। আর এই দুই ধাপ এগোনোয় সাময়িক স্বস্তি হতে পারে। কিন্তু সন্তুষ্টির কোনো সুযোগ নেই।
রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে গতকাল বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০১৭’ একযোগে প্রকাশ উপলক্ষে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় টিআইবির সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান ট্রাস্টি এম হাফিজউদ্দিন খানও উপস্থিত ছিলেন।

দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বিশ্বে ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ১ নম্বরে রয়েছে সোমালিয়া। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে দণি সুদান ও সিরিয়া। অন্য দিকে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে আছে নিউজিল্যান্ড। আর দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো বিব্রতকরভাবে আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনি¤œ। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ সর্বনি¤œ অবস্থানে। উল্লিখিত সামান্য অগ্রগতি কোনো অবস্থায়ই সন্তোষজনক নয়। তবে মনে করা হচ্ছে যে, আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিকাঠামো তুলনামূলক সুদৃঢ় হয়েছে।
টিআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের সিপিআই অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হলো ভুটান। দেশটির স্কোর ৬৪ ও ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী তাদের অবস্থান এবার ১৮০টি দেশের মধ্যে ২৬তম। এরপরে রয়েছে ভারত। যার স্কোর ৪০ এবং অবস্থান ৮১তম। এরপরে শ্রীলঙ্কা ৩৮ স্কোর পেয়ে ৯১তম, মালদ্বীপ ৩৩ স্কোর পেয়ে ১১২তম, পাকিস্তান ৩২ স্কোর পেয়ে ১১৭তম, নেপাল ৩১ স্কোর পেয়ে ১২২তম হ এবং এরপর রয়েছে বাংলাদেশ ২৬ স্কোর নিয়ে ১৪৩তম ও আফগানিস্তান ১৫ স্কোর পেয়েছে ১৭৭তম অবস্থানে রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আর্থিক খাতের দুর্নীতির ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা জড়িত থাকেন। তাদের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন পদক্ষেপে যেতে পারে না। দুর্নীতি রোধে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সেটার অভাব এখনো রয়েছে।
পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান : সিপিআইয়ের ক্ষেত্রে গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ২৬ স্কোর পেয়ে ১৫তম অবস্থান, ২০১৫ সালে ২৫ পেয়ে ১৩তম, ২০১৪ সালে ২৬ পেয়ে ১৪তম, ২০১৩ সালে ২৭ পেয়ে ১৬তম এবং ২০১২ সালে ২৬ স্কোর পেয়ে বিশ্বে ১৩তম অবস্থানে ছিল। সিপিআই ২০১৭ অনুযায়ী ৯ স্কোর পেয়ে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্তের তালিকায় প্রথম অবস্থানে সোমালিয়া। এরপর ১২ স্কোর পেয়ে তালিকায় নি¤œক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দণি সুদান ও ১৪ পেয়ে তৃতীয় সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে সিরিয়া।

জরিপে বাংলাদেশের জন্য আট তথ্য : এ বছর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সূত্র হিসেবে আটটি জরিপের তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে। জরিপগুলো হলো : বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট ২০১৭, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে ২০১৭, গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস ২০১৬, বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স ২০১৭-১৮, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট রুল অব ল ইনডেক্স ২০১৭-১৮, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড ২০১৭, ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস ২০১৭ ও ভ্যারাইটিস অব ডেমোক্র্যাসি প্রজেক্ট ডাটাসেট ২০১৭ এর রিপোর্ট।
দুদকের কার্যক্রম কমেছে : টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত বছরের চেয়ে দুর্নীতির সূচকে ২ কমে এলেও এটি সন্তোষজনক নয়। তবে বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত না করা হলেও সূচকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে এখানে দুর্নীতির মাত্রা অধিক হিসেবে গণ্য হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রম হ্রাস পেয়েছে। অনেক েেত্র দুদক নীরব ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় সংসদে মৌলিক কাজগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সংসদীয় কমিটিগুলো কার্যকর করা হচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না। এ কারণে বাংলাদেশ এখনো দুর্নীতির সূচকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

টিআই বলছে, এখন পর্যন্ত শুধু যারা দুর্নীতির কারণে তিগ্রস্ত বা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়, তাদের অভিজ্ঞতা বা ধারণার ওপর নির্ভর করেই আন্তর্জাতিকভাবে এক তুলনামূলক অবস্থান নিরূপিত হচ্ছে। এ ছাড়া ২০১৭ সালের সিপিআই সূচক বিশ্লেষণে সরকারি সেবা ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিরূপণের পাশাপাশি দুর্নীতির সাথে গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের সক্ষমতার আন্তঃসম্পর্ক; দুর্নীতির মাত্রার সাথে সরকারি নীতিগুলোয় প্রভাব সৃষ্টিকারী বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাজ করার সক্ষমতা ও স্বাধীনতা; দুর্নীতি ও নিয়ন্ত্রিত নাগরিক সমাজের আন্তঃসম্পর্কের ফলে সৃষ্ট প্রভাব এর ওপর আলোকপাত করা হয়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/296098