২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:২৭

মোবাইল গ্রাহকদের ঘাড়ে করের বোঝা

ফোরজি সিম প্রতিস্থাপনে বিড়ম্বনা

সিম প্রতিস্থাপনে ১১০ থেকে ১২৫ টাকার কারণে শুরুতেই ধাক্কা খাচ্ছে ফোরজির আগ্রহ। অনেকেই দামের কথা শুনে ফিরে যাচ্ছেন। সরেজমিন রাজধানীতে বিভিন্ন অপারেটরের নিজস্ব গ্রাহক সেবাকেন্দ্র ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ের সেবাকেন্দ্রে গিয়ে সিম প্রতিস্থাপনের ব্যয় নিয়ে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে সাধারণের মধ্যে। মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীর সমকালকে বলেন, ফোরজি সেবার সুবিধা সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সিম প্রতিস্থাপন কর, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং হ্যান্ডসেট আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার করা জরুরি।

এদিকে গত মঙ্গলবার ঢাকায় আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের ৬৪ জেলায় ফোরজি সেবা চালু করেছে রবি। গ্রামীণফোন চট্টগ্রামে এবং বাংলালিংক খুলনায় ফোরজি চালুর উৎসব উদযাপন করেছে।

সিম প্রতিস্থাপন নিয়ে কর জটিলতা :'ভাই, প্রতি সেকেন্ডে কথা বলতে ভ্যাট দিচ্ছি, কর দিচ্ছি। সরকার ঢাকঢোল পিটাইয়া ফোরজি দিচ্ছে। এর জন্য সিম বদলাতে ১২৫ টাকা খসাইতে হবে? নিমু না ফোরজি, দরকার নাই।' রাজধানীর মহাখালীতে একটি ফোন অপারেটরের খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ের সেবাকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষোভের সঙ্গে এ কথা বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আবদুল গফুর। ফোরজি চালুর কথা শুনে তিনি এসেছিলেন সিমকার্ড প্রতিস্থাপন করতে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতা জানালেন, তাকে ১২৫ টাকা দিতে হবে। এই ১২৫ টাকা কেন- জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতা জানান, ১০০ টাকা সরকারের ট্যাক্স, ১০ টাকা অপারেটরের আর ১৫ টাকা তার নিজের। মোবাইল ফোন অপারেটরের নিজস্ব গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে গেলে ১৫ টাকা কম অর্থাৎ ১১০ টাকা লাগবে।

রাজধানীর গুলশানে গ্রামীণফোন ও রবির গ্রাহক সেবাকেন্দ্রের সামনেও সিমকার্ড প্রতিস্থাপন করতে এসে ফিরে যেতে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রবিনকে। গ্রামীণফোন গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে তাকে জানানো হয়, স্টার গ্রাহক হলে ফোরজি সিমকার্ড ফ্রি প্রতিস্থাপন করা হবে। আর স্টার না হলে ১১০ টাকা লাগবে। রবিন বলেন, এটা বৈষম্য। ফোরজি সিমকার্ড নিতে সাধারণ গ্রাহকদের ১১০ টাকা দাম দিতে হবে! এর অর্থ, সরকার চায় না সাধারণ মানুষ ফোরজি সেবা গ্রহণ করুক। রবিনের মতোই গুলশানের রবি গ্রাহক সেবাকেন্দ্রের সামনে ক্ষোভ ঝাড়লেন গৃহবধূ ফারহানা, 'আসলে ফোরজি নিয়ে আসা হয়েছে ভিআইপি গ্রাহকদের জন্য। তারা ঠিকই ফ্রি সিম নেবেন, আর কম আয়ের মানুষের ঘাড়ে ১১০ টাকা চাপানো হচ্ছে। এটা খুবই অন্যায়।'

মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রবির ফোরজি চালুর অনুষ্ঠানে সিমকার্ড প্রতিস্থাপন কর তুলে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন রবির সিইও মাহতাবউদ্দিন আহমেদ। এর জবাবে ওই অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ফোরজি সিমকার্ড প্রতিস্থাপনে কর তুলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।

আরও করের বোঝা ফোরজির সামনে :অ্যামটব মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীর সমকালকে বলেন, বর্তমানে বাজারে ফোরজি ব্যবহারোপযোগী হ্যান্ডসেট আছে মাত্র ১০ শতাংশ। এর অর্থ, সারাদেশে এখনই ফোরজি নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ ফোরজি সেবা নিতে পারবেন। হ্যান্ডসেটের মূল্য সুলভ করার ক্ষেত্রেও বড় বাধা হচ্ছে সরকার আরোপিত শুল্ক্ক। হ্যান্ডসেট আমদানিতে ভ্যাটসহ প্রায় ৩০ শতাংশ কর বিদ্যমান থাকার কারণে হ্যান্ডসেটের মূল্য সাধারণের নাগালে আসতে পারছে না। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ প্রায় ২৩ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে এখন গ্রাহকদের। এর ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম শুরুতেই ২৩ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ফোরজির ব্যবহার উৎসাহিত করতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত।

বেতার তরঙ্গের মূল্যের ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে কমিয়ে এনে প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টিআইএম নুরুল কবীর বলেন, পৃথিবীর কোথাও কাঁচামালের ওপর ভ্যাট নেওয়া হয় না। বেতার তরঙ্গ টেলিযোগাযোগ সেবায় কাঁচামাল হওয়ার কারণে এর ওপরও ভ্যাট নেওয়া হয় না। একমাত্র বাংলাদেশেই বেতার তরঙ্গের মূল্যের ওপর ভ্যাট নেওয়া হচ্ছে। যৌক্তিক বিবেচনার কারণেই বেতার তরঙ্গের মূল্য থেকে ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার হওয়া উচিত।

http://samakal.com/technology/article/18021041