২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৯

পাহাড়ে এত অস্ত্র আসছে কোত্থেকে

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামার দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এভাবেই প্রায়ই দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী একের পর এক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করছে। প্রশ্ন জাগছে এত বিপুলসংখ্যক অস্ত্র কোত্থেকে আসছে? কারা কি উদ্দেশ্যে এই আগ্নেয়াস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলছে? একাধিক সূত্র বলেছে, পাহাড়কে অশান্ত করে তুলতেই এই অস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে। পাহাড়ে চারটি গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপরাধে এসব অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে।

গত শুক্রবার লামা থেকে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২০০০ গুলিসহ চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনী, র্যা ব ও পুলিশ সদস্যরা। লামার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর রাজাপারার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বিপুল এই অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। ২৫টি অস্ত্রের মধ্যে ১৪টি ছিল এসবিবিএল ও ১১টি ওয়ানশুটারগান। উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৩৭ রাউন্ড গুলি। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ তুইসা মং (৩৬), এক্য মারমা (৩৯), চাইমুং মারমা (৩৬) ও মিফং মারমা (৪৫)। স্থানীয় সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতরা চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী। তারা পাহাড়ের নিরীহ মানুষের কাছ থেকে নানা অজুহাতে চাঁদা আদায় করছিল। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষেরা সন্ত্রাসীদের বাধ্য হয়ে চাঁদা দেন। না হলে তাদের ওপর চলে নানা নির্যাতন। ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মজুমদারও সাংবাদিকদের বলেছেন, গয়ালমারা, বনফুরসহ আশপাশের এলাকা সন্ত্রাসপ্রবণ। কয়েকটি গ্রুপের চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। লামা থানার ওসি আবদুস সাত্তার বলেছেন, গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা নিজেদের নিরীহ বলে দাবি করেছে। মামলায় ওই চারজনকেই আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।
গত ১৫ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির রামগড় এলাকা থেকে অত্যাধুনিক একে২২ রাইফেলসহ দুইজনকে আটক করে সেনাবাহিনী। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ও গুলি এবং চাঁদা আদায়ের রশিদ পাওয়া যায়। আটককৃতরা হলোÑ সুজন মারমা ও আব্বাই মারমা। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ (প্রসীত বিকাশ চাকমা গ্রুপ)-এর সদস্য। এভাবেই লংদু, মহালছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, পাহাড়ি এলাকায় বর্তমানে চারটি সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। জেএসএস, জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে এই গ্রুপগুলো পাহাড়ি অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে আসছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সম্প্রতি এই দলাদলি ও আন্তঃকোন্দলে নিহত হয়েছে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মিঠুন চাকমা (৪০)। দিনেদুপুরে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ভাইয়ের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ৩ জানুয়ারি এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর তার দলের লোকজন এজন্য ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের ওপর দায় চাপায়। ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

এ দিকে সন্ত্রাসীগ্রুপগুলোর অব্যাহত কর্মকাণ্ডে স্থানীয় মানুষেরা খুবই অতিষ্ঠ। এমনকি সরকারদলীয় সমর্থকেরাও সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায় বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। সম্প্রতি রাঙ্গামাটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী একটি সমাবেশ করা হয়। ওই সমাবেশের আগে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, যারা রাজনীতির নামে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করছে তাদের প্রতিরোধ করতে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মানুষ অস্ত্রের কাছে আর জিম্মি থাকতে চায় না। পাহাড়ে যতণ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে সন্ত্রাস নির্মূল না হবে ততণ পর্যন্ত রাজপথে সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলন চলবে। এর অংশ হিসেবে পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান তীব্র করার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর, কাপ্তাই আওয়ামী লীগের সভাপতি অংশু ছাইন চৌধুরীসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযানকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় নেমেছে একটি পক্ষ। তারা এক্ষেত্রে নিরীহ পাহাড়ি মানুষদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/295962