১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:২৪

প্রশ্নফাঁস : ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতারা

বোর্ডে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধে

প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতাদের শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যে এই চক্রের মূল হোতাদের সম্পর্কে বেশ তথ্যও মিলেছে। একটি সূত্র বলেছে, মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলোতে দীর্ঘদিন চাকরি করছেন এমন কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দিকে নজরদারি রাখা হচ্ছে। তাদের মধ্যেই প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল হোতা রয়েছে বলে ইতোমধ্যেই তথ্য মিলেছে। শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেব এবং শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নাসির গ্রেফতার হলেও ওই সিন্ডিকেটের আরো অনেকেই এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত রয়েছেন।
পাবলিক পরীক্ষায় বিভিন্ন সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ শোনা যায়। যদি শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। যে অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে অন্তত ২০ জন গ্রেফতার হয়েছে। গত শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় ১৪ জনকে। যাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও রয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও গ্রেফতার হয়েছে এই অভিযোগে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল হোতা নয়। মূল হোতারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ঘুরে ফিরে তারাই এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে এবং কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সম্প্রতি রাজধানীর পৃথক দুই এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেব এবং মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনকে। এই দুই কর্মচারীকে গ্রেফতার করার পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। বাড়ি-গাড়ি, নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক তারা। এমনকি নাসির তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় একটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। এদের সাথে মন্ত্রণালয়ের একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষায় জালিয়াতিসহ নানা অসৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগে উঠে আসে। মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট অনেক দফতরের কিছু অসাধু লোককে নিয়ে তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নাসির ও মোতাবেল গ্রেফতার হলেও তাদের ওই সিন্ডিকেটের সবাই এখনো সক্রিয়। তাদের অনেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা বোর্ডের অনেক কর্মকর্তাই রয়েছেন যারা বছরের পর বছর বোর্ডে চাকরি করছেন। তিন বছরের জন্য ডেপুটেশনে এসে সাত-আট বছর চাকরি করছেন এমনো অনেকে আছেন। তারা নানা অপরাধী সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, নম্বর শিটে পরিবর্তন, বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়া ইত্যাদির সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বছরের পর বছর তারা বোর্ডে কর্মরত থাকায় অনেক কিছুই তাদের চোখের ইশারায় ঘটে। নানা অপরাধের সাথে তারা জড়িত থাকলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা। এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি হন না খোদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও। গতকাল কয়েক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এই সিন্ডিকেটের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ দিকে সম্প্রতি যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তাদের অনেকেই বলেছেন, অনেক হাত বদল করে তারা এই প্রশ্ন পেয়েছেন। তারা বলেছেন, এর পেছনে কারা এবং মূল হোতা কারা তা জানেন না তারা। তারা কারো কাছ থেকে পেয়েছেন আর কিনে নিয়ে তা অপরের কাছে বিক্রি করেছেন। অনেকটা শেয়ার কেনাবেচার মতোই। হাত বদল হচ্ছে দাম বাড়ছে। আবার সময় শেষ হয়ে গেলে কারো কাছে কোনো মূল্য নেই।
এ দিকে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তারা এবার রাঘববোয়ালদের খোঁজে নেমেছেন। এর আগে কোনোবারই মূল হোতাদের খুঁজে বের করা যায়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। অনেকের সম্পৃক্ত থাকারও তথ্য মিলেছে। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার হয়েছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/293723