১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৫৮

গঠন হয়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মামলা পর্যবেক্ষণ ‘ডিজিটাল সেল’

পেরিয়ে গেছে দুই বছরেরও বেশি সময়

দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও গঠন করা হয়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মামলা পর্যবেক্ষণে ‘ডিজিটাল সেল’। ২০১৫ সালের আগস্টে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (তৎকালীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান) আওতায় এ সেল গঠন করা হবে। এদের কাজ হবে বিভিন্ন আদালতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মামলার যাবতীয় তথ্য ‘ডিজিটালাইজড’ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা। এতে কম্পিউটারে ক্লিক করলেই মুহূর্তে মধ্যে ভেসে উঠবে সরকারি ব্যাংকের কোন মামলা কোন আদালতে রয়েছে এবং মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থানই বা কী। এ ছাড়া বার্তা এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মামলা সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করা হবে। থাকবে ‘ওরেঞ্জ, ইয়েলো ও রেড’Ñএই তিন ধরনের অ্যালার্ট সিস্টেম। বিভিন্ন কর্মকর্তাকে এ অ্যালার্টের মাধ্যমে মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে দেয়া হবে।

কিন্তু এতদিন পরও এ সেল গঠন করা সম্ভব হয়নি বলে এর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণসম্পর্কিত মামলাগুলোর তথ্য পেতে কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে আর্থিক বিভাগের তৎকালীন সচিবের সভাপতিত্বে একটি সভায় এ সেল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সভায় বলা হয়, বিভিন্ন আদালতে প্রকৃতপক্ষে সরকারি ব্যাংকের কত মামলা রয়েছে তার পরিসংখ্যান পাওয়াটা খুবই কষ্টকর। এসব মামলার হালনাগাদ তথ্য পাওয়াও দুঃসাধ্য কাজ। এ জন্যই আদালতে করা ব্যাংকের বিভিন্ন মামলার তথ্য ডিজিটালাইজড করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এরপর এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে সরকারি ব্যাংকের মামলার বিভিন্ন তথ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রাথমিকভাবে পরবর্তী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের করা মামলায় কতগুলো রিট হয়েছে তার সব তথ্য কম্পিউটারে সন্নিবেশ করা হবে। এখানে প্রতিটি মামলার সংক্ষিপ্ত সার থাকবে। কোন ব্যাংকের মামলা কোন পর্যায়ে রয়েছে তার হালনাগাদ তথ্য এখান থেকে পাওয়া যাবে। জানা যাবে মামলাগুলো কবে করা হয়েছে, কোন আইনজীবী পরিচালনা করছেন। এখানে কতবার শুনানি বা তারিখ নেয়া হয়েছে। মামলাগুলোর আর্থিক সংশ্লেষ কত। সব কিছু কম্পিউটারে এক ক্লিকে জানা যাবে। একই সাথে থাকবে তিন ধরনের অ্যালার্ট সিস্টেম। ওরেঞ্জ অ্যালার্টের মাধ্যমে একটি পর্যায়ে কর্মকর্তাদের অ্যালার্ট করার ব্যবস্থা থাকবে। ইয়োলো অ্যালার্ট দেয়া হবে আরেক ধরনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের। আর রেড অ্যালার্ট দিয়ে মামলার সর্বশেষ অবস্থান জানানো হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডি ও ব্যাংকিং সচিবকে।
উচ্চ আদালতে চার হাজারের বেশি রিটের কারণে সরকারি ব্যাংকের আটকে আছে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ। বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু যখন তারা খেলাপি হয়েছেন তখন ব্যাংক বাধ্য হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। আর এতেই ঋণখেলাপি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উচ্চ আদালতে এর বিপরীতে রিট ঠুকে দিয়েছেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলছে, ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে মামলা পরিচালনা করছে না। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে অনেক মামলাই এতদিনে নিষ্পত্তি হয়ে যেত। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো মামলার জবাব দেয় না কিংবা কোর্টে উপস্থিত হয় না। এমনকি মামলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও দাখিল করা হয় না। সবচেয়ে বেশি মামলা করেছে রাষ্ট্রীয় খাতের সব চেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী। এতে অর্থ সংশ্লেষও অনেক বেশি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/293483