১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৬

শাসক দলের অস্ত্রধারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

সিলেটে বারবার অস্ত্র প্রদর্শন হলেও উদ্ধার নেই

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজার পর সিলেটের রাজপথে ত্রিমুখী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, ভাংচুরের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে প্রকাশ্যে ব্যাপক অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন হলেও এ নিয়ে তেমন গরজ নেই প্রশাসনের। ঘটনার দু’দিন অতিবাহিত হলেও শাসক দলের অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারে তৎপরতা নেই বললেই চলে। পুলিশের দাবি, ঘটনার সময় অস্ত্রধারীদের কর্মকাণ্ড তাদের নজরে আসেনি। পরে তারা জেনেছে। এসব অস্ত্রধারী সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। অস্ত্রধারীদের শনাক্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিলেটে এর আগেও দফায় দফায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের সময়ে রাজপথে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। চলতি বছরের শুরুতেও অস্ত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে সিলেটে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অগোচরে অস্ত্রের প্রদর্শন হলেও বৃহস্পতিবার যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের মিছিল থেকে পুলিশের সামনেই অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ও মহড়া দিতে দেখা গেছে। তারপরও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
অস্ত্রধারীদের পাশে থাকা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করে জানান, দোনলা বন্দুক হাতে থাকা যুবকের নাম মুনিম আহমেদ। মাথায় হেলমেট ও পিস্তল হাতে ছিল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পীযুষ কান্তি দে। বন্দুক হাতে ছিল মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক। এ ছাড়া আরও অনেকের হাতেই ছিল দেশীয় অস্ত্র।

সূত্রমতে, মুনিম আহমদের ব্যবহৃত অস্ত্রটি তার পরিবারের মালিকানাধীন। সেটার লাইসেন্স রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মুনিমকে ওই অস্ত্র নিয়ে জেলা পরিষদের সামনে থেকে গুলি করতে দেখা গেছে। আবার কখনও অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়। যখন মুনিমসহ অন্যরা অস্ত্র প্রদর্শন করে গুলি ছুড়ছিল তখন পুলিশ কুশিয়ারা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে অবস্থান করছিল। মুনিম মাথায় কালো রংয়ের একটি হেলমেট পরে ওই অস্ত্র নিয়ে নেমেছিল। কালো স্যুট ও নীল শার্ট-প্যান্ট পরা আরেক যুবককে দেখা যায় পিস্তল হাতে। পিস্তল উঁচিয়ে দফায় দফায় গুলি করছিল ওই যুবক। একই সময় পুলিশও বিএনপির নেতাকর্মীদের দিকে গুলি ছুুড়ছিল। কাটা রাইফেল হাতে নিয়ে সিলেটের রাজপথ কাঁপিয়েছে দুই যুবক। এর মধ্যে একজনের মাথায় ছিল লাল ও অপরজনের মাথায় কালো হেলমেট। তাদেরকে জেলা পরিষদের সামনে থেকে মিছিলের অগ্রভাগে এসে গুলি করতে দেখা যায়। ওই দুই যুবকের পরনে শার্ট ও জিন্স প্যান্ট ছিল।

বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় পুলিশ অ্যাসল্ট ও বিস্ফোরক মামলা দায়ের করে। অথচ মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামানসহ ৫৪ জনকে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১৫০-২০০ জনকে। কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক অনুপ চৌধুরী বাদী হয়ে এ মামলা করেন। কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মামলাটি করা হয়েছে। থানার সেকেন্ড অফিসার ফয়াজ উদ্দিন ফয়েজকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহ্হাব যুগান্তরকে বলেন, ‘পুলিশ কাজ করছে। পরিচয় শনাক্ত করে অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সিলেটের রাজনীতিতে অতীতেও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন হয়েছে। একসময় রাজপথে দাপিয়ে বেড়িয়েছে ছাত্রদলের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। ওয়ান-ইলেভেনের সময় পুলিশ ও র্যাব ছাত্রদলের ওইসব অস্ত্রভাণ্ডার তছনছ করে দেয়। কিন্তু ছাত্রদলের বিভিন্ন গ্রুপের কাছে এখনও অস্ত্র রয়েছে। আর বর্তমান সরকারের সময়ে রাজপথে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এর মধ্যে বেশি অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে সিলেটের টিলাগড় ও এমসি কলেজ এলাকায়। অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে এমসি কলেজের ক্যাম্পাস দখল ও পাল্টা দখলের ঘটনা ঘটেছে অনেক বার। আবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুমন হত্যাকাণ্ডের সময় প্রকাশ্য অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। এসব অস্ত্রের ব্যবহার ও অস্ত্রধারীদের নিয়ে প্রায় সময় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়ায় সিলেটে। পুলিশ ও র্যাব সতর্ক হলেও অস্ত্রধারী গ্রেফতারে তারা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অস্ত্র উদ্ধারও করা হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে সিলেটে বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। রায় ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আদালতের অভ্যন্তর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে ১৫৫ রাউন্ড শটগানের গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দল নগরীর বন্দরবাজার এলাকা থেকে এগিয়ে এলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। ভাংচুর হয় সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চারজনকে আটক করে।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/16326