১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ১০:২১

দেশজুড়ে অবিরাম গ্রেফতার

দেশজুড়ে অবিরাম গ্রেফতার চলছে। প্রতিদিনই চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান এবং একের পর এক গ্রেফতার। গতকালও গ্রেফতার হয়েছেন সহস্রাধিক। সব মিলিয়ে গ্রেফতার চার হাজার ছাড়িয়ে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতারের সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রাজধানীসহ বড় বড় শহর এবং প্রত্যন্ত গ্রামেও চলছে এই গ্রেফতার অভিযান। গতকাল বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়কে ঘিরেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। ৩০ জানুয়ারি থেকে এই অভিযান ব্যাপক হারে শুরু হয় বলে ২০ দলীয় জোট সূত্র জানায়। গত ৩০ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার পথে হাইকোর্টের সামেন পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশ ভ্যান থেকে তিন বিএনপি কর্মীকে মুক্ত করে নেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ওই দিন থেকেই শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ টার্গেট করে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেক নিরীহ মানুষকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। প্রথমে ঢাকায় গ্রেফতার অভিযান সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেদার গ্রেফতার শুরু হয়। যা এক সময় গণগ্রেফতারে রূপ নেয় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এই দাবি অস্বীকার করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এ পর্যন্ত তাদের প্রায় চার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন ও আনিসুর রহমান খোকন, সাভারের সাবেক পৌরমেয়র কেফায়েত উল্লাহ, মহিলা দলের রাজিয়া আলিম, পেয়ারা মোস্তফা, ছাত্রদল সভাপতি রাজিবসহ সিনিয়র অনেক নেতাই গ্রেফতার হয়েছেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রতিদিন অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন। গতকাল জুমার পরে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দসহ অন্তত ১০ জন গ্রেফতার হয়েছেন। বরিশালের বাকেরগঞ্জ এলাকার এক নেতা জানিয়েছেন, এলাকার কোনো নেতাকর্মী বাড়িতে থাকতে পারছেন না। পুলিশ নেতাকর্মীদের স্বজনদেরও হয়রানি করছে। পিরোজপুর সদর থেকে এক নেতা জানিয়েছেন, ১৪-১৫ বছরের শিশুরাও আটকের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার এরকম এক স্কুলপড়–য়া শিশুকে গ্রেফতারের পর স্থানীয়দের মধ্যস্ততায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এভাবে অনেকেই গ্রেফতার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ দিকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এই অভিযান আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। বিএনপির পক্ষ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতারের দাবি করা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মিলছে না। পুলিশ সদরের একটি সূত্র বলেছে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কতজন বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছেন সে বিষয়টি পৃথক করে কোনো তথ্য রাখা হয় না।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/292598