৩১ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ৯:০৬

শিক্ষার গলায় প্রশ্নফাঁস

টদের স্কুলের পরীক্ষা থেকে শুরু করে বড়দের নিয়োগ পরীক্ষা—প্রশ্ন ফাঁস কোথায় নেই! প্রথম শ্রেণির পরীক্ষায়ও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে দেশে। অভিভাবকদের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুরা পর্যন্ত পড়ালেখা বাদ দিয়ে ছুটছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের পেছনে। নৈতিকতার এই চরম অবক্ষয়ের মাঝে দেশে কোনো পরীক্ষার কথা উঠলেই সচেতন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মনে ভয় জাগে—এই বুঝি প্রশ্ন ফাঁস হলো; এই বুঝি সব পণ্ড হয়ে গেল। আর এই সর্বনাশা অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অসাধু শিক্ষকরাও জড়িত বলে জানা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই হুমকিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার থেকে সারা দেশে এক প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হবে পরীক্ষা। তাই প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকিটাও অনেক বেশি। তাই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী।
প্রায় প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায়ই প্রশ্ন ফাঁস হলেও তা বন্ধে যথাযথ উদ্যোগ নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এমনকি এত দিন প্রশ্ন ফাঁসের কথা স্বীকারই করেনি মন্ত্রণালয়। তবে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কথাবার্তায় আতঙ্কের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় ফাঁস বন্ধের উপায় না খুঁজে তথ্য-প্রযুক্তি ও শিক্ষকদের দোষ দিতেই বেশি ব্যস্ত। এ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের এখনো শাস্তি পাওয়ার রেকর্ড নেই। কালেভদ্রে কেউ ধরা পড়লেই তারা সহজেই বেরিয়ে আসে। তাই কোনোভাবেই কমছে না প্রশ্ন ফাঁস।

 


গত মঙ্গলবার এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁস রোধে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফেসবুক বন্ধ রাখা যায় কি না সে চিন্তাভাবনার কথা জানান। কিন্তু ফেসবুক বন্ধ হলেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চারটি ধাপে প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ রয়েছে। যাঁরা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন এবং যাঁরা মডারেশন করেন তাঁরা রয়েছেন প্রথম ধাপে। প্রশ্নপত্র কম্পোজ, প্রুফ রিডিং, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও প্রশ্ন ফাঁসের বড় সুযোগ রয়েছে, তাঁরা রয়েছেন দ্বিতীয় ধাপে। তৃতীয় ধাপে প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ রয়েছে ট্রেজারি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের, যেখানে প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ করা হয়। আর চতুর্থ ধাপে প্রশ্ন ফাঁস করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র বুঝে নেওয়ার পর পরীক্ষা শুরু পর্যন্ত মোবাইল ফোন বা গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলে প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে তা বাইরে চলে যায়। পরে তা সমাধানসহ শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো হয়।

জানা যায়, এত দিন প্রশ্ন ফাঁসে প্রথম সন্দেহের তালিকায় ছিল বিজি প্রেস ও ট্রেজারি। কিন্তু এখন শিক্ষকদের মাধ্যমেই পরীক্ষার দিন সকালে বেশি প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। মন্ত্রণালয় এখন চিন্তিত সকালবেলার প্রশ্ন ফাঁস নিয়েই। তাই এখন পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস হলেও সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের খুব একটা নজর নেই।
সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান তাঁর দায়িত্বকালে পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারে উদ্যোগ নিলেও তা শেষ পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেনি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো পরীক্ষাব্যবস্থায়ই পরিবর্তন আনতে হবে। খাতা দেখার পদ্ধতিও বদলাতে হবে। আমি দায়িত্বে থাকার সময় প্রশ্নব্যাংকের কথা বলেছিলাম। কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রিন্টারের কথা বলেছিলাম। চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে দায়িত্ব তো মন্ত্রী মহোদয়কে নিতে হবে। তাঁর অভিভাবকত্বেই সব কিছু হতে হবে। এই সিস্টেমে পরীক্ষা হলে এক সেটআপে অনেকেই তা ব্যবহার করতে পারবে। এমনকি নিয়োগ পরীক্ষাও নেওয়া যাবে।’

এত দিন শুধু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবর শোনা যেত। ২০১৪ সাল থেকে শোনা যায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবর। কিন্তু গত বছরের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণির শিশুরাও রেহাই পায়নি। উপজেলাভিত্তিক এক প্রশ্নে পরীক্ষা হওয়ায় অনেক জায়গায়ই বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে।
সাত বছর ধরে বোর্ডভিত্তিক আলাদা প্রশ্নে পরীক্ষা হলেও এবার থেকে সারা দেশে সব পাবলিক পরীক্ষায় একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকি আরো বাড়বে। আগে এক বিভাগের প্রশ্ন ফাঁস হলে তা সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকত। এবার কোনো এক জায়গায় প্রশ্ন ফাঁস হলে তা সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো অভিন্ন প্রশ্ন পদ্ধতির ব্যাপারে খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করছে। তাদের মতে, বোর্ডভিত্তিক প্রশ্ন হওয়ায় একেক বোর্ডে একেক রকম প্রশ্ন হয়। এতে কোনো বোর্ডের প্রশ্ন সহজ হয়। ফলে সেখানকার শিক্ষার্থীরা বেশি নম্বর পায়। আবার কোনো বোর্ডের প্রশ্ন কঠিন হয়। এতে সেখানকার শিক্ষার্থীরা কম নম্বর পায়। অথচ শিক্ষাবিদরা বলছেন, একেক অঞ্চলের পড়ালেখার ধরন একেক রকম। ফলে বোর্ডভিত্তিক প্রশ্ন হলে ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ধরন অনুযায়ী প্রশ্ন করা যাবে। এতে শিক্ষার্থীরা সহজেই উত্তর করতে পারবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম তিন থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড। পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২ আইনের ৪ নম্বর ধারায় শাস্তির এই বিধান রয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের অপরাধে কারো জেল-জরিমানা হয়েছে বলে জানা যায়নি। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে প্রশ্ন ফাঁসের শাস্তির বিষয়ে সংশোধনী আনা হবে বলে জানা গেছে।
প্রশ্ন ফাঁসের কারণে ২০১৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তখন ওই ঘটনা তদন্তে বর্তমান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনের (তখনকার অতিরিক্ত সচিব) নেতৃত্বে গঠিত আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করে। কমিটির একটি সুপারিশে ছিল—প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সংশোধন ও প্রশ্ন নির্বাচনের কাজ একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে করতে হবে। ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারীদের কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে তা ‘প্রশ্নভাণ্ডারে’ রাখা হবে। সেখান থেকে প্রশ্নপত্রের সেট তৈরি হবে। একাধিক প্রশ্ন সেট অনলাইনে পরীক্ষার দিন সকালে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হবে। এরপর স্থানীয়ভাবে প্রিন্টারে ছাপিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। কিন্তু ২০১৪ সালের সেই সুপারিশ এখনো কাগজে-কলমেই বন্দি। নেওয়া হয়নি নতুন কোনো কার্যকর উদ্যোগ।

ওই বিভাগের বর্তমান সচিব সোহরাব হোসাইন পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপানো হবে বলে একাধিকবার জানালেও সে উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৫ সালে প্রশ্ন ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে খুদে শিক্ষার্থীদের পিইসি পরীক্ষায়। ওই পরীক্ষায় প্রায় সব বিষয়েরই প্রশ্ন ফাঁস হয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষার আগের রাতে যে প্রশ্ন পাওয়া যায় তার ৫০ থেকে ৮০ শতাংশই মিলে যায়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও বাংলায় ৫০ শতাংশ এবং ইংরেজিতে ৮০ শতাংশ প্রশ্ন মিলে যাওয়ার প্রমাণ পায়। এর পরও বাতিল করা হয়নি পরীক্ষা। এমনকি প্রশ্নপত্র ছাপা ও বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে সন্দেহ করা হলেও তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।
জানা যায়, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে একাধিক বিকল্প প্রস্তাব থাকলেও তা বাস্তবায়নে খুব একটা আগ্রহ নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। ২০১৪ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকেই মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তখন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর তাসলিমা বেগম। তিনি পরীক্ষার সময় নির্বিঘ্নে স্কুল-কলেজে ক্লাস চালানো এবং প্রশ্ন ফাঁস রোধে সারা দেশে কেন্দ্র সংখ্যা কমানোর প্রস্তাব করেছিলেন। প্রয়োজনে এক জায়গায় যাতে বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য মাল্টিপারপাস হল ভাড়া করে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব কানেই তোলেনি মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর প্রাক-প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রোধে পরীক্ষাকেন্দ্রেই সকালে প্রশ্ন ছাপানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। সফলও হয়েছিল তাঁর উদ্যোগ। কিন্তু তিনি এখন সচিব হলেও তাঁর সেই উদ্যোগ পাবলিক পরীক্ষায় আলোর মুখ দেখেনি অথবা অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায়ও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি।
কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যখন নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছিলাম তখন তা হয়েছিল জেলা পর্যায়ে। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষা হয় একেবারেই মফস্বলে। কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপানোর বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবও চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু এতে চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা আমিই তাঁকে বলেছিলাম। সেগুলো হলো—নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ইন্টারনেট থাকা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রিন্টার থাকা ও নিরাপত্তা জোরদার থাকা। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা গেলে কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপানো সম্ভব।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণে বিভিন্ন সময়ই আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা বলে থাকে। কিন্তু প্রতিবছর এসএসসিতে ১৭ লাখ, এইচএসসিতে ১২ লাখ, জেএসসিতে ২০ লাখ শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। শুধু এসএসসি ও এইচএসসিতেই পরীক্ষার ফি বাবদ বোর্ডগুলো প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আদায় করে। বোর্ডগুলোর নিজস্ব আয় অনেক বেশি হওয়ায় সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে নিজস্ব তহবিল থেকেই অতিরিক্ত ছয়টি উৎসব ভাতা নেন। অন্যান্য খাতেও বিপুল টাকা ব্যয় করেন। অথচ পরীক্ষা পদ্ধতি উন্নয়নে তাঁদের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও বছরে আয় সব বোর্ডের চেয়ে অনেক বেশি। তারাও পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে তেমন কোনো ব্যয় করে না।

২০১৫ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে এই প্রবণতা শুরু হয়। গত চার বছরে শুধু পাবলিক পরীক্ষায়ই ৬৩টি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে এর পরও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি) ও ২০১৫ সালে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়। ২০১৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ ও মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালে পিএসসি ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেসব কমিটি তদারকি ও মনিটরিং বাড়ানোর সুপারিশ রেখেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।

জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন কিন্তু অন্য কোথাও থেকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নেই। একমাত্র শিক্ষকদের ব্যাপারেই অভিযোগ উঠছে। তাই এবারের এসএসসি পরীক্ষা থেকেই শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে ঢোকার পর প্রশ্নের সিলগালা প্যাকেট খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্যই শিক্ষার্থীদের আধাঘন্টা আগে কেন্দ্রে ঢুকতে বলা হয়েছে। আর কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপানোর যে বিষয়টি আমরা চিন্তা করেছিলাম, সেখানেও আগে শিক্ষকদের হাতেই প্রশ্ন দিতে হবে। এ জন্য আমরা আপাতত সেদিকে এগোচ্ছি না। যাতে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো রকম অভিযোগ না ওঠে সে জন্য আমরা সচেষ্ট আছি।’


 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2018/01/30/595854