৩০ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০৫

দাবি পূরণের আশ্বাসে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনশন স্থগিত

সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দাবি পূরণের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরণ অনশন এবং ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো: আলমগীর ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ গতকাল অনশনস্থলে এসে জুস পান করিয়ে শিক্ষকদের অনশন ভাঙান।
গতকাল বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশনস্থলে আসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ দু’জন পদস্থ কর্মকর্তা। তারা শিক্ষকদের বলেন, শিক্ষকদের দাবির অংশ হিসেবে বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট এবং বৈশাখী ভাতা প্রদানের প্রস্তাব ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বাড়িভাড়া, বোনাস, টাইম স্কেলসহ আরো যেসব দাবি শিক্ষকদের রয়েছে তা আগামী বাজেটেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তার আগে এ নিয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করা হবে এবং একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে।

সচিব মো: আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী এ মুহূর্তে সিলেটে রয়েছেন। তারা উভয়ে আপনাদের বিষয়টি অবগত আছেন।
বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের উপদেষ্টা আবুল বাশার হাওলাদার নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল গতকাল বিকেলে ফোরামের নেতৃবৃন্দের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তারা আমাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জাতীয়করণের দাবিকে যৌক্তিক বলে মনে করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি জাতীয়করণ নিয়ে আমাদের সাথে বৈঠকে বসবেন। তিনি জানিয়েছেন, সামনে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য শিক্ষকদের অনুরোধ করেছেন এবং কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে বলেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এ প্রতিনিধিদল প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা দেয়নি।
আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ প্রতিনিধিদলের আশ্বাস এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দু’জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অনশনস্থলে এসে প্রকাশ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণার পর আমরা চলমান অনশন ও ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন (গতকাল বিকেল) থেকে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকেরা গত ১০ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর ১৫ তারিখ থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যান তারা। কিন্তু শিক্ষকদের দাবির প্রতি সরকারের নির্বিকার ভূমিকার কারণে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একই সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
ছয়টি শিক্ষক কর্মচারী সংগঠনের জোট বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের নেতৃত্বে শিক্ষকেরা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন। হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা সারা দেশ থেকে যোগ দেন অনশনে। অপর দিকে রাজধানীর কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধর্মঘট পালন করে এবং শিক্ষকেরা স্থানীয়ভাবে মিছিল সমাবেশ করেন জাতীয়করণের দাবিতে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি মিলিয়ে সর্বমোট ৩৮ হাজার ৪৭৮টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা পাঁচ লাখ ২২ হাজার। শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৬২ লাখ। বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার মোট ৯৭ ভাগ পরিচালিত হয় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। বেসরকারি খাতের এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা এমপিওভুক্ত নয় এবং বছরের পর বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন হাজার হাজার শিক্ষক। অপর দিকে মূল স্কেলের শতভাগ বেতন পেলেও নানা ধরনের বৈষম্য, বঞ্চনা আর অবহেলার শিকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী মূল বেতনের সাথে এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া, ৫ শ’ টাকা চিকিৎসাভাতা এবং ২৫ শতাংশ বোনাস দেয়া হয়। অন্য সব সুযোগসুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। তাদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, টাইমস্কেল এবং পদোন্নতি বন্ধ। বর্তমানে হাইস্কুলের একজন শিক্ষক চাকরির শুরুতে মোট ১৩ হাজার ৫ শ’ টাকা পান। আর কলেজের একজন লেকচারার পান ২৩ হাজার ৫ শ’ টাকা। শিক্ষকদের দাবি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ না হলেও শিক্ষকদের জীবনমান উন্নত না হলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবেন না। শিক্ষার মান বাড়বে না। জাতি সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না। শিক্ষকেরা আরো জানান, জাতীয়করণ হলে সরকারের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত তেমন টাকা লাগবে না। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান নানা বৈষম্য দূর করতে হলে জাতীয়করণের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান শিক্ষকরা।
আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, আশ্বাস দেয়ার পরও আমাদের দাবি পূরণ না হলে আমরা আবার রাজপথে নামব।

 

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/289468