১১ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১১:৪৭

নিখোঁজদের ঘরে ফেরা নিয়ে গুজব

নিখোঁজ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক মোবাশ্বার হাসান (সিজার) এবং বুধবার ভোরে গুলশানের বাসা থেকে ধরে নেওয়া প্রকাশনা ব্যবসায়ী তানভীর ইয়াসিন করিমকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
তবে গতকাল গুলশান থানার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গি-সংক্রান্ত ঘটনায় সম্পৃক্ততা পেয়ে কোনো একটি নিরাপত্তা সংস্থা তানভীরকে তুলে নিয়েছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। হয়তো তাঁকে পাওয়া যাবে। আর মোবাশ্বার হাসানের ব্যাপারে খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, নতুন কোনো খবর নেই।

মোবাশ্বারের চাচা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মনজুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সবাই পুরোপুরি অন্ধকারে। চরম উদ্বেগ আর আতঙ্কে রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিখোঁজ ১০ জনের কেউ এখন পর্যন্ত ঘরে ফেরেননি বলে তাঁদের স্বজনেরা জানিয়েছেন। তবে তাঁদের কারও কারও ফিরে আসা নিয়ে গুজব তৈরি হয়েছে, যা নিয়েও স্বজনেরা তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

গত ২৬ আগস্ট ধানমন্ডি থেকে নিখোঁজ হওয়া কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইশরাক আহমেদের বাবা জামালউদ্দীন গতকাল শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে ইশরাককে পাওয়া গেছে বলে কয়েকজন সাংবাদিক তাঁর পরিবারকে ফোন করে জানিয়েছেন। তবে তাঁরা কোত্থেকে এ খবর পেলেন তা জানাননি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনি।
একই ঘটনা ঘটেছে ব্যবসায়ী ও বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায়ের ক্ষেত্রেও। অনিরুদ্ধ রায় ফিরেছেন বলে নানা গুজব ছড়িয়েছে, আবার কোনো কোনো গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। তবে অনিরুদ্ধ রায়ের ভাগনে ও তাঁর নিখোঁজের ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরির বাদী কল্লোল হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। আমরা গতকালও মামার বাসায় ছিলাম। কিন্তু তিনি তো বাসায় ফেরেননি। এখন আমরা বুঝছি না কী করে কী হলো।’
৩০ অক্টোবর গুলশান থানার পুলিশ পরিচয়ে ফোন করে অনিরুদ্ধের ফেরার কথা জানানো হয়েছিল। কল্লোল বলেন, ‘একটা লোক যদি ফিরে থাকেন, তাহলে তিনি বাসায় আসবেন না? আমাদের পরিষ্কার কথা হচ্ছে, আমরা তাঁকে এখনো ঘরে ফিরে পাইনি।’

অনিরুদ্ধর স্ত্রী শাশ্বতী রায় বলেন, ‘তিনি এখনো ফেরেননি। তবে তাঁর ফেরা নিয়ে নানা গুজব তিনিও শুনেছেন।’
অনিরুদ্ধর নিখোঁজের বিষয়ে জিডি হয়েছিল গুলশান থানায়। ঘটনার পর থানার কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সম্ভবত ব্যবসায়িক বিরোধের কারণে তাঁকে ধরে নেওয়া হতে পারে। এরপর আর পুলিশের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গতকাল অনিরুদ্ধর বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘অনিরুদ্ধর বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। পুলিশ এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো খোঁজ জানে না। তবে অনিরুদ্ধর খোঁজ পেতে তাঁর পরিবারের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। তা থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়, হয়তো পরিবার তাঁর কোনো খোঁজ জেনে থাকতে পারে।’
এর আগে গত রোববার নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাসকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে গুজব ছড়ায়। শেষ পর্যন্ত টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের অনেকগুলো হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করেও উৎপলের কোনো খোঁজ মেলেনি। বিষয়টি গুজব বলেই ধরে নিয়েছেন তাঁর পরিবার ও বন্ধুরা। নিখোঁজ উৎপলের সন্ধানের দাবিতে গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছিল সাংবাদিকের সন্তানেরা। ছোট ছোট এসব শিশুর হাতে ছিল ‘সাংবাদিকতা অপরাধ নয়, উৎপল চাচ্চুকে ফিরিয়ে দিন’ লেখা প্ল্যাকার্ড।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1362696