বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালপয়ের শিক ও গবেষক ড. মোবাশ্বার হাসান নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পরও তার কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি এখনো। হাসানের এই নিখোঁজের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বাংলাদেশে নিখোঁজ ও গুম হয়ে যাওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।

একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে এই বছরে প্রথম ৯ মাসে ৫০ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে তাদের পরিবার প থেকে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন এসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ বের করতে পারে না?
২০১১ সালের নভেম্বর মাসে এক সকালে সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন কে এম শামীম আখতার। বাসা থেকে বের হয়ে কিছু দূরে যেতেই কয়েকজন তাকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। ছয় বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু আখতার আর বাড়ি ফেরেননি।
আখতারের স্ত্রী ঝরনা খানম বলছিলেন ঘটনার পরপরই তিনি থানায় যান জিডি করতে। কিন্তু স্বামী নিখোঁজের যে বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন সেভাবে পুলিশ জিডি করতে চায়নি। পরে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী তাকে জিডি করতে হয়। কিন্তু ঘটনার সাড়ে ছয় বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও তিনি তার স্বামীর কোনো খোঁজ পাননি।
ঝরনা খানম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবখানে অভিযোগ নিয়ে গেছেন। যদিও তার দাবি আখতারের একটা রাজনৈতিক পরিচয় ছিল সে কারণে হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আখতারকে তুলে নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশে নিখোঁজ, অপহরণ, গুম এসবের ঘটনা নতুন নয়। দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।

বাংলাদেশে একজন নাগরিক নিখোঁজ বা অপহরণের শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ করতে কতটা সম?
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি মো: নুরুল হুদা বলছেন মিসিং পারসন স্কোয়াড নামে একটা উইং থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে। সেটার মাধ্যমে শতভাগ না হলেও বেশির ভাগ েেত্র নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ৯০ জন গুম হয়েছেন। আর দেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্র বলছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ৯ মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ৫০ জন।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলছিলেন তাদের পর্যবেণে তারা দেখেছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার জিডি করতে গেলেও যথাযথ সহযোগিতা পায় না। নিখোঁজদের পরিবারের অনেকের অভিযোগ রয়েছে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদের স্বজনদের নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরে দীর্ঘ সময়, এমন কি বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায় না।
সাবেক আইজিপি হুদা বলছিলেন, অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে সেগুলো বের করা যায় তবে বিষয়টা সত্যিই উদ্বেগজনক।
এ দিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো বলছে গত আড়াই মাসে বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক এবং শিার্থীসহ মোট ৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন।