৯ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৩

বাড়ছে নিখোঁজের সংখ্যা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, আইন হাতে তুলে নেয়া, মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়া, দ্রুত অপরাধীরা ধরা না পড়া এবং দ্রুত বিচার না হওয়ার জন্য এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে
নিখোঁজ মানুষের তালিকা আরো দীর্ঘ হচ্ছে। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও ব্যাংক কর্মকর্তাসহ অনেকেই অপহ্নত হচ্ছে বা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন। যার কোন হদিস মিলছে না বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও। হারিয়ে যাওয়া এসব মানুষদের নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছেন পরিবারের সদস্যরা। অনেকের মধ্যে এ নিয়ে এক ধরনের আতংকও বিরাজ করছে। সর্বশেষ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজারকে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত সিজার সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারেনি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগে গত ১০ অক্টোবর নিখোঁজ হন পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের রিপোর্টার উৎপল দাস। তার নিখোঁজের ঘটনায় মতিঝিল থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও গতকাল পর্যন্ত তার কোন সন্ধ্যান দিতে পারেনি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিখোঁজদের মধ্যে কয়েজন রাজনৈতিক দলের নেতাও রয়েছেন। তাদের পরিবারের দাবি, তাদের গাড়িতে করে তুলে নেয়ার পর কোনো খোঁজ মিলছে না। সন্ধান চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হলেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, আইন হাতে তুলে নেয়া, মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়া, দ্রুত অপরাধীরা ধরা না পড়া এবং দ্রুত বিচার না হওয়ার জন্য এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা, জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচার করা সম্ভব হলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। গতকাল বুধবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, অনেকে ইচ্ছে করেই আত্মগোপনে গিয়ে সরকারকে বিব্রত করছে। তবে যাই ঘটুক না কেন, নিখোঁজরা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। প্রতি মাসেই রাজধানী থেকে কোনও না কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী কাজ করছে। আশা করি, তাদের ফিরিয়ে দিতে পারবো। আমি সবসময় বলি, মিসিং হওয়ার পেছনে কিছু কারণ থাকে। অনেকে ইচ্ছা করে মিসিং হয়ে যাচ্ছে বা আত্মগোপনে গিয়ে আমাদের বিব্রত করছে। এ ধরনের মিসিংয়ের সুরাহা করা গোয়েন্দাদের জন্য একটু কষ্টকর। তারপরও আশা করি, তাদের ফিরিয়ে আনতে পারবো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অনেকেই অপহরন হয় আবার কিছু লোক নিজ থেকে পালায়। তবে এদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় আত্মগোপন করেন, তা হলেও তার বিচার হওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে কাউকে অপহরন করা হলে জড়িতদের গ্রেফতার এবং অপহ্নত ব্যক্তিকে উদ্ধার করার দায়িত্ব আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এসব ঘটনা দ্রুত উদঘাটন না হওয়া এবং জড়িতদের দ্রুত বিচার না হওয়ায় নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফরিদা আক্তার খানম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, আইন হাতে তুলে নেয়া, মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়া, দ্রুত অপরাধীরা ধরা না পড়া এবং বিচার না হওয়ার জন্য এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের চাহিদা এত বেড়ে গেছে যে, এটা ন্যায় না অন্যায় সেদিকে লক্ষ্য নেই। পরিবার থেকে যে নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন সে জায়গাটা আগের মতো নেই। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনায় সকলকেই সক্রিয় ভ’মিকা রাখা প্রয়্জোন। জড়িতদের শনাক্ত এবং নিখোঁজ ব্যক্তিকে দ্রæত উদ্ধার করার জন্য আরো সক্রিয় হতে হবে আমাদের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। একটা বিষয় সকলকেই মানা উচিত যে, কেউ আইনের উবের্ধ নয়। সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেও সক্রিয় ভ’মিকার রাখা প্রয়োজন। জড়িতদের অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচার করা সম্ভব হলে এ ধরনের নিখোঁজের সংখ্যা কমে আসবে বলে তিনি মন্তত্য করেন। সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, অপহরণ ও গুমের শিকার হওয়া মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। যেহেতু জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, তাই নিখোঁজ ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার আহŸান জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা দেশের ভাবমূর্তি এতে ক্ষুণœ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, রাজধানীর ৭২ গুলশান এভিনিউ ইউনিয়ন ব্যাংকের সামনে থেকে ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে ২৭ আগস্ট ধরে নেয়া হয়। ২২ আগস্ট তুলে নেয়া বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী সাদাত আহমেদকে। ২৩ আগস্ট পল্টন থেকে ধরে নেয়া ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বাসায় ফিরেছেন তবে ঘটনার কোন রহস্যই উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ফিরে আসার পর থেকে তিনি চুপচাপ। এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। এ বছরের গত ৮ মাসে কমপক্ষে ১০২ জন নিখোঁজ বা অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/103471