৮ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:২৯

অনিয়ম দুর্নীতির কারণে কর্ণফুলী পেপার মিলে উৎপাদন হ্রাস

চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিলস লি: (কেপিএম) বাঁশ ও পাল্পউড কাঁচামাল সরবরাহকারী অর্ধশত ব্যবসায়ীর প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। গত ৪ বছর ধরে দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে মিলে কাগজ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সবুজ কাঁচামালের পরিবর্তে কেপিএমে দেশীয় ছিড়া কাগজ ও বিদেশী পাল্প ব্যবহার করা হচ্ছে। দৈনিক কাগজ উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ১০-৩৫টন। দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে উন্নতমানের হয়। মিলে কাঁচামাল নিয়মিত সরবরাহ করা হলেও ঠিকাদারদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। পর্যায়ক্রমে কিছু কিছু পাওনা পরিশোধ হলেও সিংহভাগ টাকা বকেয়া রয়েছে বলে মিল সূত্রে জানা গেছে। কাঁচামাল সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অর্ধশত ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের ব্যবসা বাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চরম দুরাবস্থায় পড়েছে প্রতিষ্টানগুলোর স্বত্ত্বাধিকারী ব্যবসায়ীরা।

মিল সূত্রে জানা গেছে, বিসিআইসি‘র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিলে সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ করা হলেও অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। মিলে কোটি কোটি টাকা আটকা পড়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্টানগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। পুঁজির অভাবে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত প্রতিষ্টানগুলো। কাঁচামালের সাথে জড়িত হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মিলের উৎপাদনের প্রধান সহায়ক হচ্ছে কাঁচামাল বাঁশ। পরবর্তীতে বাঁশ এবং পাল্পউড (নরম কাঠ) এর ব্যবহারে মানসম্মত কাগজ উৎপাদন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল থেকে পেপার মিলের এই জাতীয় সবুজ কাঁচামালের চাহিদার সিংহভাগ যোগান দেয়া হয়। বিভিন্ন এলাকায় মিলের নিজস্ব বাঁশ ঝাঁড় রয়েছে। পাল্পউড বাগান করে মিলে প্রয়োজনীয় নরমকাঠ যোগান নিশ্চিত করতে বনবিভাগে আলাদা করে পাল্পউড বাগান বিভাগ সৃষ্টি করা হয়েছে। পার্বত্য বনাঞ্চলে প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত বাঁশ ও নরমকাঠ জাতের সবুজ কাঁচামালের বাৎসরিক চাহিদা পূরণে সু-পরিকল্পিত ব্যবস্থা রয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে আহরিত বাৎসরিক চাহিদার কাঁচামাল সংগ্রহ করে উন্নতমানের কাগজ উৎপাদনে লাভজনক শিল্পের খ্যাতি রয়েছে এই মিলের।

মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, গত প্রায় ৪ বছর ধরে মিলের সবুজ কাঁচামালের উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এই প্রক্রিয়া বন্ধের সাথে সাথে কাঁচামালের সংগ্রহও বন্ধ হয়ে যায়। এতে বনাঞ্চলে কর্মচাঞ্চল্য থেমে যায়। সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে বাঁশ, কাঠ আহরণ কাজে জীবিকা নির্বাহে নিয়োজিত হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ে। পাহাড়ে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ।
মেসার্স জাহান ট্রেডার্স, মেসার্স প্রিয়তোষ চন্দ, এম এম এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স নিপুল কান্তি দে, মেসার্স শারমিন এন্টারপ্রাইজ, আকাশ ট্রেডাসসহ রাঙ্গুনিয়ার ৩১টি ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের স্বত্ত্বাধিকারীগণ অভিযোগ করে জানান, ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হলেও মিল আমাদের পাওনা পরিশোধ না করে আটকে রেখেছে। আমাদের প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বিল বকেয়া রয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশের ভিত্তিতে যথাযতভাবে মিলে নির্দিষ্ট সময়ে কাঁচামাল সরবরাহ করেছি। কাজ শেষ করে জামানতের টাকাও ফেরত পাচ্ছিনা। পথে বসার অবস্থায় দাঁড়িয়েছি। ব্যাংক ঋন, পাওনাদারদের পরিশোধ করতে পারছিনা। দেনার বোঝাসহ পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। পাওনা আদায়ের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আকুতি করেও কোন ফলোদয় হচ্ছে না। এখন প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদেররা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিলের উৎপাদন বিভাগের জনৈক কর্মকর্তা জানান, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির কারণে লোকসানের সম্মুখীন হয় কর্ণফুলি পেপার মিল। চরম অর্থসংকটে সৃষ্ট দুরাবস্থায় জর্জরিত হয়ে উঠে প্রতিষ্টানটি। আর্থিক সংকটে মিলে স্বাভাবিক উৎপাদন পক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। সে সাথে কাঁচামাল সংগ্রহ স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে মিল চরম আর্থিক দুরাবস্থায় রয়েছে।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আব্দুল কাদের জানান, মিলের সকল দেনা পরিশোধসহ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদন পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ টাকা বরাদ্দ দিলে মিলকে পুরোদমে চালু করতে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

 

http://www.dailysangram.com/post/306742