১ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১১:০০

ব্যবসা সহজ করার দৌড়ে পিছিয়েছে বাংলাদেশ

ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু এবং পরিচালনায় বিশ্ব তালিকায় বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বিক স্কোরের সামান্য উন্নতি হলেও কোনো কোনো সূচকে আগের চেয়ে অবনতি হয়েছে। আবার কিছু দেশ অনেক ভালো করেছে। ফলের্ যাংকিংয়ের দৌড়ে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। কোনো দেশে উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসার নিয়ম-কানুন ও প্রক্রিয়া কতটুকু সহজ বা কঠিন সে বিষয়ে জরিপের ভিত্তিতে তৈরি বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

'ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট-২০১৮' নামে বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদনে ব্যবসা-বাণিজ্যের ১০টি সূচকের তথ্য দেওয়া হয়েছে। গত বছর ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬ নম্বরে। এবার বাংলাদেশ ১৭৭ নম্বরে নেমে গেছে। গত বছর বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়েছিল। এবার ব্যবসা শুরু করা, সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, ঋণ প্রাপ্তি এবং কর প্রদান-সংক্রান্ত সূচকে বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ সংযোগ, ব্যবসায়িক চুক্তি কার্যকর ও দেউলিয়াত্ব ঠেকানোর সূচকে উন্নতি হয়েছে। রিপোর্টে এ বছরের জুন পর্যন্ত ডাটা বা উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির স্কোর ১০০ এর মধ্যে ৮৬ দশমিক ৫৫, যেখানে ৪০ দশমিক ৯৯ স্কোর অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গত বছর

বাংলাদেশের ৪০ দশমিক ৮৪ স্কোর ছিল। নিউজিল্যান্ডের পরে প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকং। দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান বাদে সবার পেছনে বাংলাদেশ। ভুটান ৭৫তম অবস্থানে থেকে এ অঞ্চলে প্রথম হয়েছে। ভারত বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে তালিকায় ১৩০ থেকে ১০০ নম্বরে উঠেছে। বিশ্বব্যাংক এ বছরের রিপোর্টে কর্মসংস্থানকে প্রতিপাদ্য করেছে। সংস্থাটি বলেছে, বেসরকারি খাতকে বিকশিত করলে কর্মসংস্থানের উন্নতি হয়।

পিছিয়ে পড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম গতকাল টোকিও থেকে টেলিফোনে সমকালকে বলেন, বাংলাদেশে 'ডুয়িং বিজনেস' সূচকের উন্নতি করতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে একটু সময় লাগবে। এ ছাড়া কিছু দেশ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো করেছে। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশ এ তালিকায় এগোতে থাকবে বলে তিনি আশাবাদী। কেননা প্রতিটি সূচকে উন্নতির জন্য কার কী দায়িত্ব তা বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তা তদারকি হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ খুব নিচের অবস্থানে থাকায় এর দৃশ্যমান উন্নতি দরকার। এটা না হওয়া বড় দুঃসংবাদ। তার মতে, বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক সংস্কারের অগ্রগতি খুবই ধীর। সম্প্রতি কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে তার বাস্তবায়ন হয়নি। অবস্থার উন্নতি করতে গেলে প্রতিটি সূচকের ওপর আলাদা আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত বলে মনে করেন ড. জাহিদ হোসেন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের 'ইজ অব ডুয়িং বিজনেস' সূচকে ১০০-এর নিচে আসতে বিভিন্ন সংস্কারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ১৫ সদস্যের ন্যাশনাল কমিটি ফর মনিটরিং ইমপ্লিমেন্টেশন অব ডুয়িং বিজনেস রিফরমস (এনসিএমআইডি) নামে এরই মধ্যে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের এক ছাতার নিচে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে 'ওয়ানস্টপ সার্ভিস বিল, ২০১৭' জাতীয় সংসদে পাসের অপেক্ষায়। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে নতুন এই আইন করা হচ্ছে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান সমকালকে বলেন, আগে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু ও পরিচালনায় কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে আশার কথা, সরকার নানাভাবে উন্নতির চেষ্টা করছে। তবে বিডা যেভাবে এগোতে চায়, অন্য অনেকেই সেভাবে পারছে না। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে এ বিষয়ে সমন্বয়ের সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি প্রতি বছরের জন্য প্রত্যেক সূচকে অগ্রগতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরামর্শ দেন।

কোন সূচকে কী অবস্থা :ব্যবসা শুরু করার সূচকে গত বছর অবস্থান ছিল ১২২তম। এবার পিছিয়ে ১৩১তম হয়েছে বাংলাদেশ। এর কারণ ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে সরকারি প্রক্রিয়া বাবদ খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অবস্থান গত বছরের ১৮৭তম থেকে কিছুটা উন্নতি হয়ে ১৮৫তম হয়েছে। আগে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে সময় লাগত ৪২৯ দিন। এখন তা কমে ৪০৪ দিন হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে আগের মতোই এখনও নয়টি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হচ্ছে। সম্পত্তি নিবন্ধনে আগের বছরের মতো ১৮৫তম অবস্থান রয়েছে। এখনও সম্পত্তি নিবন্ধনে আটটি প্রক্রিয়া রয়েছে। সময় লাগে ২৪৪ দিন। চুক্তি কার্যকরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯তম। সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় ৭০তম থেকে পিছিয়ে ৭৬তম স্থান এবং দেউলিয়াত্ব পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে ১৫১ থেকে পিছিয়ে ১৫২তম অবস্থানে গেছে বাংলাদেশ। কর পরিশোধ সূচকে ১৫১ থেকে ১৫২তম এবং ঋণ প্রাপ্তির সূচকে ১৫৭ থেকে ১৫৯তম অবস্থানে নেমেছে বাংলাদেশ।

http://samakal.com/economics/article/17114