২৭ অক্টোবর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৪৮

বাজার লাগামহীন

এক দিনেই ১০ টাকা বাড়ল পেঁয়াজের দাম

রাজধানীর শুক্রাবাদ বাজারের মুদি দোকানি আরিফুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার এক ক্রেতার কাছে দেশি পেঁয়াজের দাম চাইলেন কেজি ৮০ টাকা। ক্রেতা হতবাক হয়ে বললেন, আগের দিন তো ৭০ টাকা ছিল, এক দিনেই কিভাবে ১০ টাকা বেড়ে গেল?

বিক্রেতা আরিফুল তখন ক্রেতাকে ভোরবেলা কারওয়ান বাজারে পাইকারি বাজার থেকে রীতিমতো লড়াই করে পেঁয়াজ সংগ্রহের চিত্র তুলে ধরলেন।

জানালেন, পর্যাপ্ত পেঁয়াজ না থাকায় বেশি টাকা দিয়েই পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এ কারণে দাম বেশি। এরপর ক্রেতা আধাকেজি পেঁয়াজ নিলেন ৪০ টাকায়।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার যুক্তি-পাল্টাযুক্তি দিতে দেখা গেছে। এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় বিক্রেতাদের দোষারোপও করে অনেক ক্রেতা।

ফার্মগেটে আমিনুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা ক্ষোভের সঙ্গেই বললেন, ‘ব্যবসায়ীরা আমাদের পেয়ে বসেছে। পাবলিক সব সহ্য করে যাচ্ছে বলেই তারা যা খুশি করছে। আর এসব দেখার এ দেশে কেউ আছে বলে মনে হয় না। ’

তবে কারওয়ান বাজারে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পেঁয়াজের পাইকারি দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, স্তূপ স্তূপ পেঁয়াজের বস্তা রাখা আছে।

একটি করে বস্তা খুলে রাখা হয়েছে দেখার জন্য।
পাইকারি বিক্রেতা কাওসার মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) ৩৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। সেই হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি দাম ৬৮ টাকা।

আগের দিনের চেয়ে দাম বেশি জানিয়ে ওই বিক্রেতা বলেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ অনেক কম, চাহিদা বেশি। এ কারণে দাম বেড়েছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমবে না।

তবে ভোক্তারা বলছে, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সবার কাছেই পেঁয়াজ থাকার পরও সংকটের কথা বলা হচ্ছে।

রাজধানীর সব বাজারে দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে আড়তদাররা বলছে, ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের সংকট তৈরি হয়েছে। এ জন্য চাহিদামতো পাওয়া যায় না। এ কারণে দেশের বাজারেও দাম বাড়ছে।

চট্টগ্রামে পেঁয়াজের আড়তদার মো. ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে জানান, ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজের দাম বাড়তি। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকায়। আর চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ পাওয়াও যায় না বলে তাঁর দাবি।

এদিকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করতে দেখা গেছে। এই পেঁয়াজ আবার খুচরা বাজারে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হিলি বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা মো. হারুন-উর-রশীদ কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ভারতে হঠাৎ বৃষ্টিতে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে। কৃষকরা জমি থেকে পেঁয়াজ ঠিকমতো তুলতে পারেনি। তবে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে সেখানে পুরোদমে চাষিরা পেঁয়াজ তুলবে বলে তিনি জানান।

আমদানিকারক হারুন জানান, বর্তমানে মানভেদে ৪০-৪৫ টাকা দামে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে।

সবজির দামও লাগামছাড়া : এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারের কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু পেঁয়াজ নয়, বিভিন্ন ধরনের সবজিও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বরবটি ৮০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০, টমেটো ১২০-১৫০, শসা ৬০, শিম ১৪০-১৬০, পটোল ৬০ এবং ঝিঙা ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে অন্তত ৫০ টাকা। কমদামি সবজি বলতে ২৫ টাকা কেজির আলু এবং ২৫-৩০ টাকার পেঁপে।

হাতিরপুল বাজারে ক্রেতা শামসুন নাহার বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা যা খাই সেটা কিনতেই হাঁপিয়ে উঠছি। চাল, সবজি, পেঁয়াজ—কোথাও এতটুকু স্বস্তি পাচ্ছি না। কবে যে ব্যবসায়ীদের মন নরম হবে!’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/10/27/558159