১৭ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:৫৪

সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে সেপ্টেম্বরে

প্রবাসীদের অর্জিত আয় দেশে পাঠাতে কোন মাশুল লাগবে না, এ বিষয়ে নতুন সার্কুলার জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে ঘাটতি থাকার কারণে কয়েক মাস আগেই সরকার মাশুল মওকুফের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে এখন সার্কুলার জারি করে তা বাস্তবে কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনেও অর্থমন্ত্রী আইএমএফের ডিএমডি মিতসুহিরো ফুরুসাওয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সূত্র আরো জানায়, প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে এখন আর কোনো চার্জ বা মাশুল নেবে না ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর খরচ সরকারের তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। উল্লেখ্য গত কয়েক মাস ধরেই নিয়মিতভাবে কমে আসছিল প্রবাসী আয়। এর কারণ অনুসন্ধান করার পাশাপাশি করণীয় কি হবে তাও খুঁজে বের করা হয়েছে। প্রথমেই প্রবাসীদের আয় দেশে পাঠাতে মাশুল মওকুফের পক্ষেই মতামত দেয় সবাই। অর্থমন্ত্রী তখন জানিয়েছিলেন, আয় কমেনি তবে আয় আসছে অবৈধ পথে ভিন্ন চ্যানেলে। তাই এই উদ্যোগ বিকল্প নিচ্ছে সরকার।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম দিনে আইএমএফের ডিএমডি মিতসুহিরো ফুরুসাওয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আমরা (সরকার) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের কাছ থেকে কোনো চার্জ নেবে না ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর চার্জ সরকার দিয়ে দেবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠকে আইএমএফ কর্মকর্তা বাংলাদেশের রেমিটেন্স কমে যাওয়ার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। মুহিত বলেন, আমি তাকে বলেছি, আমাদের রেমিটেন্স আসলে কমেনি। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স না এসে অন্য চ্যানেলে আসছে।
এই কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে মাশুল না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
যারা বেশি রেমিটেন্স পাবেন তাদের কাছ থেকেও কি কোনো মাশুল নেওয়া হবে না- এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, এ বিষয়টি এখনো ঠিক করা হয়নি। বেশি অর্থ প্রেরণের ক্ষেত্রে হয়ত চার্জ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিয়ে অনেক দিন কাজ করেছে। তারা সার্কুলার জারি করলেই পরিষ্কার হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে ভাটা পড়েছে; মাসের হিসেবে সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেছে।
সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৯২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে। এরপর প্রতিবছরই রেমিটেন্স কমেছে। রেমিটেন্সের উৎস দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য মাধ্যমে হুন্ডি প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রেমিটেন্স কম আসছে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/303870