১৪ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ১১:৫৮

থামেনি সিন্ডিকেটের কারসাজি

সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক কিন্তু তদারকির অভাবে বাজারে আগুন

‘এত যে খোঁজ খবর নেন, লেখালেখি করেন, তাতে তো কোন ফল পাওয়া যায় না। আমরা মাঠে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে লাভবান হতে পারি না। আর বসে থেকে পকেট ভারি করে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটরা। তাদের সিন্ডিকেট ব্যবসা চলছেই। লাগাম টেনে ধরার কথা বলা হলেও বাস্তবে কখনই কেউ ব্যবস্থা নেয় না। যারা বন্ধ করবে তারা মাঠে নামেন না। কারা সিন্ডিকেট ব্যবসা পরিচালনা করে, কিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, তা সবাই জানে। আপনার খামাখা জিজ্ঞাসা করে সময় নষ্ট করেন কেন’- সবজি নিয়ে চাষিদের জিজ্ঞাসা করলেই আক্ষেপের সুরে এসব কথা বলেন। সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত যশোরের বারীনগর বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা নিশ্চিন্তপুর গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম ও লিয়াকত আলীসহ সব চাষিদের বক্তব্য প্রায় একই। এ অঞ্চলে কোন নির্দ্দিষ্ট মৌসুম নয়, শীত ও গ্রীষ্মে সমানতালে বারোমাসই রকমারী সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। দেশে মোট চাহিদার ৬৫ ভাগ সবজির যোগান হয় এই অঞ্চল থেকে।

এখানকার সবজি উৎপাদক চাষি, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। শুধু সবজি নয়, অধিকাংশ কৃষিপণ্যের পাইকারী বাজারে কারা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে লাভবান হচ্ছে তা ওপেন সিক্রেট। কিন্তু তাদের দাপট কমানো যাচ্ছে না। থামছে না সিন্ডিকেটের আগুন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরেও কমছে না সবজির মূল্য। অথচ উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না উৎপাদক চাষি। এ অঞ্চল থেকে স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি প্রচুর সবজি সরবরাহ হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে। গতকাল পাইকারি বাজারে দেখা গেছে, চাষিরা এক কেজি বেগুন বিক্রি করছেন মাত্র ৩০টাকায়। সেই বেগুন কয়েক হাত ঘুরে যশোরের বড় বাজারে প্রতিকেজি ৮০ টাকা। একইভাবে সিম প্রতি কেজি মাঠে ৭০টাকা বাজারে ১শ’ ৫০টাকা, ১০টাকার মুলা ৪০টাকা, ৩৫টাকার ফুল কফি ৮০টাকা বিক্রি হচ্ছে। পটল, কচুরমুখী, মিষ্টি কুমড়ার মাঠের মূল্য আর বাজার মূল্যের বিরাট পার্থক্য থাকছে। রাজধানী ঢাকার বাজারে এইসব সবজির মূল্য তো আরো বেশী। উৎপাদক চাষি ও ভোক্তা উভয়েরই বক্তব্য সবজির বাজারে আগুন লাগাচ্ছে সিন্ডিকেট। যার কারণে সবজিতে সিন্ডিকেটের আগুন নিভছে না। সবজি চাষিদের দুঃখ ‘আমরা কষ্ট করে সবজি উৎপাদন করে উপযুক্ত মূল্য পাই না অথচ বিনাপুঁজির ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে সিন্ডিকেট’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, কোন মৌসুমে মূল্য কিছুটা ভালো, আবার কোন মৌসুমে দারুণ খারাপ। গড়পড়তা চাষিদের লোকসানের অংক ভারি। এর মূল কারণ সিন্ডিকেটদের দাপট এবং সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। এতে সবজি চাষিরা মার খাচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেও ‘ভেজিটেবল জোন’ হিসেবে পরিচিত যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবজি চাষীরা সুফল পাচ্ছেন না বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

কৃষিপন্য উৎপাদন বিপনন, বাজার তদারকিসহ যাবতীয় ব্যবস্থা আছে, নিয়মনীতি সব কাগজ কলমে, বাস্তবে নয়। সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা জোরালো কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন এমন তথ্য সংশ্লিষ্টরা দিতে পারেনি। চাষিদের কথা, কখনো মাঠ থেকে কখনো পাইকারী বাজার থেকে সিম, বেগুন ও পটলসহ সবজি একরকম পানির মূল্যে ক্রয় করে। আর বিক্রি করে অস্বাভাবিক মূল্যে। এজন্যই তো আগুন লাগে। মাঠে দেখাশুনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সবজি চাষীরা বছরের বারোমাসই শাক-সবজি উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করলেও তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। তাদের উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। পাইকারী বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় না কখনো। নিত্য নতুন কৌশলে সিম, পটল ও বেগুনসহ সবজির আবাদ ও উৎপাদনেও বিপ্লব ঘটেছে। অফসিজন বর্ষা মৌসুমে সব ধরণের সবজির স্বাদ পাচ্ছেন ভোক্তারা। কিন্তু চাষিদের তিক্ত অভিজ্ঞতা। তিনি জানান, এবার সবজি আবাদে সেচ খরচ হয়নি বললেই চলে। কারণ সময় ও পরিমাণ মতো বৃষ্টি হয়েছে। মাঠের দাম আর বাজার দামের বিরাট পার্থক্য ঘোচানোর ব্যবস্থা খুবই জরুরি।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/99767/