১৩ অক্টোবর ২০১৭, শুক্রবার, ৩:৪৮

বাংলাদেশের শিশুদের স্থূলতা বাড়ছে

বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ছেলেদের মধ্যে স্থূলতার হার ছিল ৩ শতাংশ; যা ১৯৭৫ সালে ছিল মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর মেয়েদের মধ্যে স্থূলতার হার চার দশক আগের শূন্য থেকে বেড়ে হয়েছে শতকরা ২ দশমিক ৩ ভাগ। ১১ই অক্টোবর ‘ওয়ার্ল্ড ওবিসিটি ডে’ সামনে রেখে গত মঙ্গলবার ওই গবেষণা নিয়ে যুক্তরাজ্যের মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ যৌথভাবে ওই গবেষণা কার্যক্রম চালায়। অপুষ্টির কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা বিশ্বের যেসব দেশে বেশি, দীর্ঘদিন ধরেই সেসব দেশের তালিকায় বাংলাদেশ থাকে প্রথম দিকে। গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে হয়তো এখন অপুষ্টি ও স্থূলতার ‘ দ্বৈত বোঝা’ একসঙ্গে বহন করতে হবে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় স্থূলতা বাড়ছে, বিশেষত সামপ্রতিক সময়ে এশিয়ায় তা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে বলে দেখতে পেয়েছেন গবেষকরা। অন্যদিকে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে স্থূলতা বাড়ার প্রবণতা কিছুটা থিতিয়ে এসেছে। পাঁচ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের তথ্য নিয়ে পরিচালিত এ গবেষণায় ১৯৭৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শিশু, বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) তুলনা করে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতার চিত্র তুলে আনা হয়েছে। কোনো ব্যক্তির উচ্চতার সঙ্গে ওজনের তুলনা করে হিসাব করা হয় তার বিএমআই, যা দিয়ে বোঝা যায় তার ওজন স্বাস্থ্যকর মাত্রায় রয়েছে কি না। স্থূলতা বাড়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাস, খাবারের বিপণন এবং সরকারের খাদ্যনীতিকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। স্থূলতা নিয়ে বড় হতে থাকা শিশু ও কিশোরদের হার বাড়তে থাকায় ভবিষ্যতে তাদের ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন নিবন্ধের প্রধান লেখক ইমপেরিয়াল স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক মাজিদ ইজ্জাতি। তিনি বলেন, বাসাবাড়ি ও স্কুলে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার তৈরির পথ বের করতে হবে আমাদের; বিশেষ করে গরিব পরিবারগুলোর জন্য। অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে শিশুদের রক্ষা করতে নীতিমালা প্রণয়ন ও কর আরোপও জরুরি। প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলসহ মধ্য আয়ের দেশগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশু-কিশোরের সংখ্যা থেকে স্থূল শিশু-কিশোরের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চলগুলোয় কম ওজনের শিশুর তুলনায় স্থূল শিশুর সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যে আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকলেও অপুষ্টির কারণে কম ওজনের শীর্ণকায় শিশুর সমস্যাও থেকে যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও শৈশবের মুটিয়ে যাওয়া ঠেকাতে একটি পরিকল্পনার কথা বলছে, যেখানে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেশগুলোর প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ডব্লিউএইচওর অসংক্রামক রোগ পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মসূচি সমন্বয়ক ডা. ফিওনা বুল বলেন, কম পুষ্টিকর ও বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ, সস্তা ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=87119