১০ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ২:০০

কবে কমবে জ্বালানি তেলের দাম

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও দেশে কমছে না; জনগণের পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে

পুরো বছর ধরেই বিশ্ববাজারে অশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত বছরের পুরোটা সময় এবং চলতি বছরের এখন পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তেল নিয়ে গবেষণা করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও পূর্বাভাস দিয়েছে চলতি বছর জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৫ ডলারের ওপরে যাবে না। এসব পূর্বাভাস সত্ত্বেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমানো হচ্ছে না। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের চেয়ে এ দেশে অনেক বেশি দামে ক্রেতাদের তেল কিনতে হচ্ছে। খোদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ সত্ত্বেও তেলের দাম কমানো হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৫ থেকে ৮ ভাগ কমানোর সুযোগ রয়েছে। এই পরিমাণ দাম কমালেও তেল বিপণনকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মুনাফা করবে। কিন্তু তারপরও কমানো হচ্ছে না তেলের দাম। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে মতভেদ। ফলে অনেকটা জোর করে জনগণের কাছে তেল বিক্রি করে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মনে করছেন।
চলতি বছরের শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চার ধরনের তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছেÑ ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেন। লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ৮ ভাগ ও পেট্রল ও অকটেনের দাম ৫ ভাগ কমানোর কথা বলা হয়। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম কমানোর কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কারণ বিগত দিনে এই তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩০ ভাগ হ্রাস করা হয়েছিল।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি লিটার অকটেন বিদ্যমান ৮৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৪ দশমিক ৫৫ টাকা, পেট্রল ৮৬ টাকা থেকে ৮১ দশমিক ৭০ টাকা, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৬০ টাকার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিমানের জন্য জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের মূল্য কমানোর কোনো প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে না। এগুলো বিদ্যমান দামে বিক্রি হবে। এখন এই দু’টি পণ্য লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে জেট ফুয়েল ৬৩ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ৪২ টাকা করে।
চার ধরনের তেলের দাম কমানো হলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এগুলো বিক্রি করে লাভ করবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাব অনুযায়ী তেলের দাম হ্রাস করা হলেও বিপিসি লিটারপ্রতি অকটেনে মুনাফা করবে ৬ টাকা ৯ পয়সা, কেরোসিনে ১০ টাকা ৫৬ পয়সা, ডিজেলে ৩ টাকা ২২ পয়সা এবং পেট্রলে মুনাফা হবে ৫ টাকা ৮ পয়সা। আর বছরে এই চার পণ্য বিক্রিতে বিপিসির মুনাফা দাঁড়াবে মোট এক হাজার ৮৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
গত বছরের এপ্রিল মাসে জ্বালানি তেলের দাম একদফা হ্রাস করা হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি অকটেন ৯৯ টাকা থেকে ৮৯ টাকা, কেরোসিন ৬৮ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, ডিজেল ৬৮ টাকা থেকে ৬৫ টাকা এবং পেট্রল ৯৬ টাকা থেকে ৮৬ টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
ফার্নেস অয়েলের দাম না কমানোর পেছনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হচ্ছেÑ ইতঃপূর্বে এই পণ্যটির মূল্য লিটারপ্রতি ৩০ ভাগ হ্রাস করা হয়েছে। ফলে এর দাম লিটারপ্রতি ৬০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৪২ টাকা। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা লাভ করছে এবং জনগণও এর সুফল ভোগ করছেন। তবে দাম কমানোর পরও সরকার এই পণ্যটি বিক্রি করে লিটারপ্রতি মুনাফা করছে ২ টাকা ৪৬ পয়সা। যেহেতু আগে ফার্নেস অয়েলের মূল্য ৩০ ভাগ কমানো হয়েছে তাই এ পর্যায়ে এটির দাম আরো হ্রাস করা যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মতামত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
তবে তেলের দাম কমানোর সুপারিশে পাত্তা দিচ্ছে না জ্বালানি মন্ত্রণালয়। তাদের যুক্তি হচ্ছেÑ বিপিসি এর আগে তেল বিক্রি করে লোকসান গুনেছে। এখন বেশ কয়েক বছর ধরে তারা লাভে রয়েছে। তাই এই মুনাফা কমানো উচিত হবে না।
চলতি বছরে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল থাকবে উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রণালয় ‘ব্লুমবার্গ নিউজ’এর একটি সংবাদ তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, বিগত তিন বছরে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্থির থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে ২০১৭ সালে এ মূল্য কিছুটা স্থিতিশীল পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করা যায়। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি তেলে (বিশেষ করে বেন্ট ক্রুড অয়েল) বিক্রি হবে ব্যারেলপ্রতি ৫৮ মার্কিন ডলারে। ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর সময়ে গড়ে ব্যারেলপ্রতি অশোধিত তেলের মূল্য ছিল ৫৪ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে ২০১৭ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৫৬ মার্কিন ডলার হবে বলে ধরে নেয়া যায়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/258736