১০ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১:৫৫

তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে

পচা চাল কেনার সাজা শুধুই বদলি!

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মিনার বৈদ্যের বিরুদ্ধে গুদামের চাল বিক্রি করে কম দামের পচা চাল কিনে তা মিশিয়ে মজুত ঠিক রাখার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে জব্দ করা ৪৭ বস্তা চাল কিনে দেওয়ার ও ওই খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিনার বৈদ্যকে উজিরপুরে বদলির আদেশ দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও গৌরনদী খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত বড় দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার পরও যদি পচা চাল কিনে দিয়ে বদলিই হয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, তাহলে খাদ্য বিভাগে দুর্নীতি বৃদ্ধি এবং কর্মকর্তারা আরও বড় ধরনের দুর্নীতি করতে উৎসাহিত হবেন। জব্দ করা ৪৭ বস্তা চাল কিনে দিলেও যে ১৫৩ বস্তা মিশিয়ে সরবরাহ করল, তার বিচার কী হলো? তাঁরা মিনার বৈদ্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

খাদ্যগুদামের কর্মচারী, স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর গৌরনদী উপজেলার গৌরনদী বন্দর সরকারি খাদ্যগুদামের সামনে দুটি ট্রাকে করে ২০০ বস্তা চাল আসে। ওই দিন রাতে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিনার বৈদ্য তাঁর নিজস্ব শ্রমিক দিয়ে চাল খালাস করে গুদামজাত করেন। পরে গোপনে বন্ধের মধ্যে গুদামের ভালো চালের সঙ্গে পচা চাল মিশানো শুরু করে ১৫৩ বস্তা মেশানো শেষ করেন।

খাদ্যগুদামের নিরাপত্তাপ্রহরী মীর আবদুল হক বলেন, ‘ওই দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। পরের দিন (১৬ সেপ্টেম্বর) কাজে যোগদান করে দেখি গুদামের মধ্যে কয়েকজন শ্রমিক পচা চাল মেশানোর কাজ করছেন। এ সময় আমি বাধা দিলে তাঁরা আমার ওপর চড়াও হন এবং বাধা উপেক্ষা করে চাল মেশানো অব্যাহত রাখেন। পরে আমি গোপনে বিষয়টি মুঠোফোনে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) রেজা মোহাম্মদ মহসিন ও বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) মো. মশিউর রহমান স্যারকে জানাই। স্যারেরা ওই দিন তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্যগুদামে চলে আসেন এবং হাতেনাতে পচা চাল মেশানো ধরে ফেলেন এবং ৪৭ বস্তা পচা চাল জব্দ করেন।’ এ ঘটনায় বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মশিউর রহমান বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সহকারী রসায়নবিদ মো. বোরহান উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

২০ সেপ্টম্বর প্রথম আলোয় এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, কমিটি ২১ সেপ্টেম্বর বরিশালে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মশিউর রহমান ও বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজা মোহাম্মদ মহসিনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আমদানি করা পচা চালের সঙ্গে গুদামের ভালো চাল মেশানোর সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সহকারী রসায়নবিদ মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণ করা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাজ।
বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) রেজা মোহাম্মদ মহসিন বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে গুদামে জব্দ করা ৪৭ বস্তা চাল থেকে নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওই চাল পচা। পচা চালই ভালো চালের সঙ্গে মেশানো হয়েছে। বস্তায় পচা চাল মেশানোর ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযুক্ত মিনার কান্তি বৈদ্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা না করে তাঁকে উজিরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বানারীপাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের উপপরিদর্শক লুৎফর রহমানকে গৌরনদী খাদ্যগুদামে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিনার কান্তি বৈদ্য বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন। আপনারা দেখার কেউ নন, কৈফিয়ত দিতে রাজি নই।’ তবে তিনি বদলির আদেশ হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1340686/