৫ অক্টোবর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৫

ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব নেসকোর

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ১৫ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩ পয়সা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ইউনিটপ্রতি ৮৯ পয়সা হারে দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে। নবগঠিত এ কোম্পানি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ করে। এদিকে আজ প্রথমবারের মতো দেশে বিদ্যুতের দাম কমানোর ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শুনানিতে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, ব্যবসায়িক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা ও ভোক্তারা বক্তব্য রাখবেন।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন প্রথমবারের মতো এ গণশুনানির আয়োজন করেছে।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজরের টিসিবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব উপস্থাপন করেন নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক গণশুনানির শেষ দিন ছিল বুধবার। বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে কমিশন সদস্য মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ, আবদুুল আজিজ খান ও মাহমুদ উল হক ভূঁইয়া শুনানি গ্রহণ করেন।

প্রস্তাবে বিদ্যুতের দামের সঙ্গে ডিমান্ড ও সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে নেসকো। নতুন এ কোম্পানির মোট গ্রাহক সংখ্যা ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৫। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৯০৪, যা মোট গ্রাহকের ৮৪ শতাংশ। নেসকোর মোট বিদ্যুৎ চাহিদা ৭৪৫ মেগাওয়াট। কোম্পানিটি আবাসিক পর্যায়ে ধাপ ভেদে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫২ পয়সা পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করেছে। সেচ পাম্পের বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ২৮ পয়সা বাড়ানো এবং বাণিজ্যিক, শিল্পসহ সব খাতেই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণে অস্থায়ী সংযোগে ৭ টাকা ২৫ পয়সা এবং ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য ১০ টাকা ৩০ পয়সার পৃথক স্ল্যাব প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, একই ধরনের অন্য বিতরণ কোম্পানি যেমন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) চেয়ে নেসকো পাইকারি পর্যায়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে নেসকোর ব্যয় হয় ৫ টাকা ১২ পয়সা। যেখানে ওজোপাডিকোর ক্ষেত্রে এ ব্যয় ৪ টাকা ৬৪ পয়সা এবং আরইবির ক্ষেত্রে ৪ টাকা ২৩ পয়সা। অর্থাৎ, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ওজোপাডিকোর চেয়ে ৮৪ পয়সা ও আরইবির চেয়ে ৮৯ পয়সা বেশি দিতে হচ্ছে নেসকোকে। এছাড়া অন্য কোম্পানির জন্য যেখানে পাওয়ার ফ্যাক্টর দশমিক ৯০ ধরা হয়, নেসেকোর ক্ষেত্রে তা দশমিক ৯২ ধরা হচ্ছে। ফলে প্রতি ইউনিটে ওজোপাডিকো বা আরইবির চেয়ে ৯ পয়সা বেশি ব্যয় হচ্ছে নেসকোর। এভাবে সরবরাহ ব্যয় ও বিদ্যুতের খুচরা মূল্যের মধ্যে পার্থক্য থাকায় বছরে ৩৮২ কোটি টাকা লোকসান গুনছে উত্তরাঞ্চলের কোম্পানিটি। শুনানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, পৌরসভাগুলো ঠিকমতো বিল পরিশোধ করছে না। অনেক পৌরসভার কাছে ৯ মাস পর্যন্ত বকেয়া জমা পড়েছে।

এতে ২২১ কোটি টাকা বকেয়া জমেছে। তিনি বলেন, আবাসিক গ্রহাকদের একটা বড় অংশ কৃষিজীবী, সে কারণে পাইকারি দামের কাঠামো পল্লী বিদ্যুতের মতোই হওয়া উচিত। বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটির মতে, ২০১৭-১৮ বছরের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে নেসকোর পরিচালন ব্যয় ৭ টাকা ৪ পয়সা। বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ৬ টাকা ১৫ পয়সা। প্রতি ইউনিটে ঘাটতি ৮৯ পয়সা। ঘাটতি মেটাতে পাইকারি পর্যায়ে মূল্যের সমন্বয় প্রয়োজন। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়লে খুচরা পর্যায়েও বাড়াতে হবে। মূল্যায়ন কমিটি পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান দশমিক ৯০ অন্তর্ভুক্ত করে পিডিবির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি সংশোধনের সুপারিশ করেছে। জনবল খাতে খরচ সীমিত রাখতে দক্ষ জনবল নিয়োগের ওপর জোর দিয়েছে। ভোক্তাদের নিরাপত্তা জামানত পৃথক তহবিলে জমা রাখার সুপরিশ করেছে। প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের জামানত গ্রহণ যৌক্তিক নয় বলে মত দিয়েছে। শুনানিতে অংশ নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, শুনানিতে বক্তব্য রাখেন সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. সালেক সুফি।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/10/05/160756/