৫ অক্টোবর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৯

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা হত্যা ও যৌন নিপীড়নের নতুন আলামত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর যৌন নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের নতুন আলামত হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

প্রত্যদর্শীদের বক্তব্য এবং স্যাটেলাইটে ধারণকৃত চিত্র বিশ্লেষণ করে তারা বলছে- রাখাইনের মং নু গ্রামে গত ২৭ আগস্ট সংঘটিত হত্যা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা মিয়ানমারের সামগ্রিক মানবতাবিরোধী অপরাধের চিত্র হাজির করছে।
প্রত্যদর্শীরা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানায়, ২৭ আগস্ট সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে নিরাপত্তার জন্য একটি আবাসিক কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেয়া গ্রামবাসীদের পিটিয়ে, যৌন নিপীড়ন, ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনারা। সেনাবাহিনী ঠিক কতজন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তবে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে মং নু এবং পাশের হপং তো পিন গ্রামগুলো প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।


২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা স্থানীয় একটি নিরাপত্তা চৌকি ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করার দুই দিন পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এ তাণ্ডব চালায়।

মং নু এবং আশপাশের গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়ন থেকে বেঁচে গেছেন এবং ঘটনা প্রত্য করেছেন এমন ১৪ ব্যক্তির সাথে কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ওই প্রত্যদর্শীরা এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানান, বিদ্রোহীরা নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা করার পর সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দেবে বলে তারা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন।

সেই আশঙ্কা থেকে শতশত মানুষ মং নু গ্রামের একটি আবাসিক কম্পাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ২৭ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কম্পাউন্ডের চারপাশ ঘেরাও করে ফেলে এবং বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রবেশ করে। তারা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা পুরুষ ও বালককে আঙিনায় ডেকে নিয়ে আসে এবং ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে। পালানোর চেষ্টা করার সময় অন্যদেরও হত্যা করা হয়। পরে সেনা সদস্যরা লাশগুলো সামরিক ট্রাকে দূরে নিয়ে যায়। কোনো কোনো প্রত্যদর্শীর দাবি এই ট্রাকগুলোতে শতশত লাশ ছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, মং নুর ওই কম্পাউন্ডে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে। খোতিয়াজ নামে ২৮ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা নারী জানান, বড় ভবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকার পরও নারীদের রেহাই হয়নি। ভবনের ভেতরে লুকিয়ে থাকার কথা জানিয়ে খোতিয়াজ বলেন, তারা কে প্রবেশ করে কয়েকজন নারীকে নগ্ন করে ফেলে। আমার কাছে যা ছিল সবই তারা ছিনিয়ে নেয়। তারা আমার শরীরের প্রতিটি জায়গায় স্পর্শ করতে লাগল এবং কাপড় খুলে ফেলার চেষ্টা করেছিল। ৩০ বছর বয়সী আরেক রোহিঙ্গা নারী অভিযোগ করেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের কাছে অর্থ ও অন্য মূল্যবান জিনিসপত্র আছে কিনা তা খুঁজছিল। তিনি বলেন, এক সেনা সদস্য আমার বুকে হাত ঢুকিয়ে সেখান থেকে সেলফেন ও টাকা বের করে নিয়ে আনলো। তারপর সে আমার থামের (রোহিঙ্গা নারীদের বিশেষ পোশাক) নিচের অংশ খুলে ফেলল। সেখানে কিছু স্বর্ণ ও টাকা ছিল। সেগুলোও নিয়ে নিলো। তারপর সে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করতে লাগল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন মনে করেন, ‘মং নু গ্রামে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের সামগ্রিক চিত্র হাজির করেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/257210