২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১২:০৪

সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ দেয়া হয়নি --মির্জা ফখরুল

এখন পর্যন্ত সরকার রোহিঙ্গাদের কোনো ত্রাণ দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যেসব ত্রাণ সামগ্রী আসছে সেগুলো রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করা হচ্ছে। সারাদেশ থেকে সাধারণ মানুষ যেসব ত্রাণ সামগ্রী জমা দিচ্ছেন সেগুলো বিলি বণ্টন করা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার জেলা বিএনপি অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সেনাবাহিনীর কর্মপরিধি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ত্রাণ নিয়ে বা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে আমরা কোনো দলীয় রাজনীতি করতে চাই না। আমরা চাই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান। কিন্তু সরকারের এই ব্যাপারে কোনো আন্তরিকতা নেই। তারা এই সমস্যা সমাধান কতটুকু সঠিকভাবে করতে চায় সেই ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথা বলছে, আমরা সেই কথা বলতে চাই না- নোবেল পুরস্কারের কথা বলেছেন, অন্যান্য সুবিধার কথা বলছেন। আমরা বলতে চাই, আন্তরিকতার সাথে সমস্যা সমাধান করুন। বিভেদ না করে, বিভক্তি না এনে জনগণকে সাথে নিয়ে দেশের সকল অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোকে এক করে মিয়ানমারের চাপিয়ে দেয়া এই যে সঙ্কট, এই সঙ্কট মোকাবিলায় একটা জাতীয় ঐক্যের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। এটাই হচ্ছে আমাদের আহ্বান।

মিয়ানমারকে সমর্থনকারী দেশ রাশিয়া, চীন ও ভারতে বিশেষ দূত প্রেরণের পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদেরকে পরিস্থিতি বুঝিয়ে এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমরা এই কথা বলেছি, প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে ভারত, চীন ও রাশিয়া যাওয়া উচিত তারা যেন কোনো নেতিবাচক অবস্থান না নেন। আমরা একথাও বলেছি যে, নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় তখন যেন রাশিয়া ও চীন ভেটো দিতে না পারে সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার আহ্বানও জানিয়েছি। এজন্য বিশেষ দূত পাঠানোর কথাও বলেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, যারা প্রাণভয়ে পালিয়ে আসছেন তাদেরকে সাময়িক আশ্রয় দেয়া এবং তাদেরকে নাগরিকত্ব দিয়ে সসম্মানে নিজের দেশে নিয়ে যায় সে জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা। এই ইস্যুতে বিশ্বজনমত সৃষ্টির জন্য জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এটাই আজ প্রধান বিষয়। দুর্ভাগ্য যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ মন্ত্রীরা এমন এমন কথা বলেছেন, যার প্রয়োজন নেই, এটাকে নিয়ে বির্তক সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই। তাদের কথায় আমরা দুঃখিত হচ্ছি, দেশের মানুষও দুঃখিত হচ্ছে।

মিয়ানমার সেনা বাহিনীর অভিযান ও রোহিঙ্গাদের গণহত্যার ঘটনার পর পালিয়ে আসা নারী-শিশুদের সীমান্তে বাধা প্রদানে সরকারের নেয়া ভুমিকারও সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের পক্ষে দেশে-বিদেশে জনমত সৃষ্টি হলে পরেই সরকার তার অবস্থান পাল্টায়।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে বিএনপি ২২ ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে সরকারের বাধা প্রদানের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা পরে ওইসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। এখন একটা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য বিএনপি মহাসচিব কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কক্সবাজার যান। তিনি উখিয়া, টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরসমূহ পরিদর্শন ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। উখিয়ায় সেনাবাহিনী ত্রাণভা-ারে দলের পক্ষ থেকে দুই ট্রাক ত্রাণসামগ্রীও দেন মির্জা ফখরুল।

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা ও তার কর্ম পরিধি বাড়ানোর দাবি করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ত্রাণ কাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন করায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকুন। আমরা বলেছি, সেনাবাহিনী কর্মপরিধি আরো বিস্তৃত করা প্রয়োজন।

আমরা খবর পেয়েছি, প্রায় ১৪ হাজার সেড নির্মাণ করা হবে তাদের আবাসনের জন্য। এরমধ্যে ৪ হাজার সেনাবাহিনীকে দেয়া হচ্ছে বাকী ১০ হাজার সরকার তৈরি করবে। আমরা জানি যে এটা সরকার কিভাবে নির্মাণ করবে সেটা সম্পর্কে দেশবাসী ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। আমরা দাবি জানাতে চাই, সেনাবাহিনীকে এই কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের জন্য নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি। বিএনপি তার সামর্থ অনুযায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহ্বুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফর রহমান খান কাজল, শরীফুল আলম, হারুনুর রশীদ হারুন, কক্সবাজার জেলা সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী প্রমুখ।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে কয়েকটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন বিএনপি মহাসচিব।

http://www.dailysangram.com/post/301518