২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:০৩

গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সাড়ে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব পিডিবির

ব্যবসায়ী ও সব ধরনের গ্রাহকের বিরোধিতার মুখে এবার বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে সাড়ে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। দাবি অনুযায়ী পিডিবি প্রতি ইাউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় ৯৮ পয়সা। একই সাথে ডিমান্ড ও সার্ভিস চার্জও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে ৭২ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এটি বিবেচনায় নিলে পিডিবির গড় খুচরা মূল্য ৬ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা।

তবে মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের সরাসরি বিরোধিতা করেছে ভোক্তা সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও ব্যবসায়ী সমাজ। তাদের মতে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। দুর্নীতি কমানো গেলে বিদ্যুতের মূল্য আরো কমে যাবে। তখন দাম বাড়ানোর আর প্রয়োজন হবে না।
গতকাল মঙ্গলবার কাওরান বাজার বিইআরসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক শুনানির দ্বিতীয় দিনে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। শুনানি সভাপতিত্ব করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। শুনানিতে আরো উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভূঁইয়া, আব্দুল আজিজ খান ও মিজানুর রহমান। বক্তব্য রাখেন মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক এ কে মাহমুদ, সদস্য কামারুজ্জামান, গণসংহতির জুনায়েদ সাকী, রাজনীতিবিদ রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
পিডিবি গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, অবকাঠামো নির্মাণের অস্থায়ী সংযোগ ও বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটের গ্রাহকদের জন্য পৃথক দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার জন্য প্রতি ইউনিট সাত টাকা ২৫ পয়সা, বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সাত টাকা ৮০ পয়সা, অবকাঠামো নির্মাণের অস্থায়ী সংযোগে ১০ টাকা ৩০ পয়সা দাম নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সব শ্রেণীর গ্রাহকের ডিমান্ড ও সার্ভিস চার্জ এবং নিরাপত্তা জামানত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরে শুনানিতে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ কেনাবেচার মধ্যে ঘাটতি থাকায় প্রতি ইউনিটে ৩ শতাংশ হারে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়লে চলতি বছর লোকসান আরো বাড়বে। তাই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

তবে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি বিভিন্ন হিসাব করে বলেছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য পিডিবির রাজস্ব চাহিদা সাত হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। যা বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় করতে হবে। এজন্য সংস্থাটি এখন যে দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে তা আরো ৭২ পয়সা বাড়ানো প্রয়োজন।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরাসরি বিরোধিতা করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাশ্রয়ী উৎপাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি মানা হচ্ছে না। পিডিবির কম দামের বিদ্যুতের উৎপাদন বন্ধ রেখে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে বেশি দামের বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল কেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে না। এভাবে অপচয়, অব্যবস্থাপনা ও সরকারের ভুল নীতির কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। আর ঘাটতি মেটানোর দায়ভার গ্রহাকদের ওপর চাপানো হচ্ছে। এটা যৌক্তিক হতে পারে না।
শুনানিতে অংশ নিয়ে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এমসিসিআই, ডিসিসিআই প্রতিনিধিরা বলেন, দেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। দিন দিন বিশ^ বাজারে এ খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। ভারত, কম্বোডিয়া, মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে উৎপাদন ব্যয় কম রাখা জরুরি। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে পোশাক রফতানি হুমকির মুখে পড়বে। বন্ধ হয়ে যাবে অনেক শিল্প কারখানা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/255148