২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:০৪

মনিটরিংয়ের অভাবে এখনো লাগামহীন চালের বাজার

দাম কমতে শুরু করেছে, মজুদদারদের ছাড় নেই -বাণিজ্যমন্ত্রী : দেশের চাল বাজারজাত করতে পাটের বস্ত বাধ্যতামূলক -পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী
চাল ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে তিন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর এখনও লাগামহীন চালের বাজার। কেননা তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর চালের দাম কিছুটা কমার কথা থাকলেও পাইকারি ও খুচরাভাবে মোটা ও চিকন চালের দাম আগের অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া বাজারে কোন মনিটরিং না থাকায় আগামী রোববারের আগে চালের দাম কমার কোন আশা দেখছেন না চালের আড়তৎদাররা। এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘চালের দাম কমতে শুরু করেছে। নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের প্রথমে নতুন ফসল উঠবে। কাজেই চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। চালের কোনও সংকট নাই। বন্যা ও হাওরের পানি বেড়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি চাল আমদানি করা হচ্ছে।’ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চালের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা চাল মজুদ করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কঠোর। কোনও ছাড় নাই। সেক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, মজুদ বিরোধী আইনসহ যা যা আছে সব প্রয়োগ করা হবে। অবৈধ মজুদ পেলেই মজুদদারদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমদানি করা চালের ক্ষেত্রে চটের বস্তার ব্যবহার তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এর সুফল জনগণ পাবে। তবে দেশের ভেতরে ১৭টি পণ্যের ক্ষেত্রে প্যাকেজিং আইন বলবৎ থাকবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এসময় পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, পাট আমাদের জাতীয় সম্পদ। রফতানিকৃত পাঁচটি পণ্যের তালিকায় পাট রয়েছে। পাটচাষীদের উৎসাহিত করতে প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। কাজেই পাট মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই সরকারের সিদ্ধান্ত। আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদ নাই। আমরা সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সরকারের কাজ করছি।’ চালের দাম স্বাভাবিক করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এর আগে তিনি জানান, চাল আমদানিতে পাটের বস্তা ব্যবহারের সরকারি বাধ্যবাধকতা তিন মাসের জন্য শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, ‘চাল সংকট এখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সেদিক বিবেচনা করে আগামী তিন মাসের জন্য আমদানি করা চাল আনতে চটের বস্তা ব্যবহারে সরকারি বাধবাধকতা শিথিল করা হয়েছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে দেশের চাল বাজারজাত করতে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকবে। আমদানি করা চালের বস্তায় ‘আমদানিকৃত’ সিল থাকতে হবে। অন্য কোনও পণ্য বাজারজাতের ক্ষেত্রে এ প্রজ্ঞাপন কার্যকর নয়।
এ সময় চাল ব্যবসায়ী ও মন্ত্রীদের সভায় পাটের বস্তা নিয়ে মন্ত্রীদের ভুল বুঝিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন প্রতিমন্ত্রী। মির্জা আজম বলেন, অনেক চাল মিল মালিকের প্লাস্টিকের (পিপি) ব্যাগ তৈরির কারখানাও রয়েছে। তাই মন্ত্রীদের ভুল ব্যখা দিয়ে কারখানাগুলো আবার চালু করতে চাইছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারে চালের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা কমতে পারে। চটের বস্তায় খরচ হয় ২৪ টাকা। আর একটি প্লাস্টিকের বস্তায় খরচ হয় ২৫ টাকা। সুতরাং প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা কিভাবে চালের দাম কমাবেন?’

এদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কুমিল্লা রাইস এজেন্সির সারোয়ার জানান, চালের বাজার এখনও আগের মতোই রয়েছে। দাম কমার বিষয়ে আমরা কোন ঘোষণা কিংবা এ জাতীয় কোন নির্দেশনা পাইনি। তাই আগামী রোববারের আগে দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই। বাজারে সরকারের কোন মনিটরিং আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন মনিটরিং নেই, কেউ এসে খোঁজখবরও নিচ্ছে না। শুধু মিডিয়ার লোকেরা এসে খবর নিয়ে যায়।
এর আগে মঙ্গলবার চাল ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে তিন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের সকল দাবি মেনে নেয় সরকার। এর ফলে চালের মূল্য কেজি প্রতি দুই টাকা কমবে বলে আশা করেছেন ব্যবসায়ীরা। বৈঠকের একদিন পার হলেও চালের দাম নিয়ে কোন আশার আলো নেই। তবে বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে গতকাল বুধবার থেকে উপজেলা পর্যায়ে ওএমএস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

কোরবানি ঈদের পর কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠে দেশের চালের বাজার। বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ১০টাকা বেড়ে যায়। অবশ্য চাল ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, সংকট কাটাতে চাল আমদানির শুল্ক দেরিতে কমানো, চাল ও ধান সংগ্রহে সরকারের দাম অনেক কম হওয়াসহ নানা কারণে এবার চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সচিবালয়ে চাল ব্যবসায়ীদের নিয়ে তিন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে কেউ কেউ চালের বাজার বৃদ্ধিতে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

https://www.dailyinqilab.com/article/96539