অনেক কষ্টে জোগাড় করা খাবার অভুক্ত শিশুকে খাওয়াচ্ছেন এক রোহিঙ্গা মা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:১৬

শরণার্থী শিবিরগুলোতে শিশুখাদ্যের তীব্র সঙ্কট

চার মাসের ভাতিজা সেলিমকে নিয়ে শরণার্থী শিবিরের পাশের প্রধান সড়কে এসেছে ১১ বছরের আয়েশা। উদ্দেশ্য ছিল সেলিমের জন্য যদি কোনো খাবার পাওয়া যায়। অতটুকু শিশুতো তরল খাদ্য ছাড়া আর কিছুই খায় না। কিন্তু আয়েশা কিছুই সংগ্রহ করতে পারেনি সেলিমের জন্য। একজনের কাছে খাবার চাওয়ায় সে দু’টি বনরুটি দিয়েছে। মন খারাপ হয় আয়েশার। কিন্তু কী করবে সে? সেলিমের জন্য কেউ তো আর খাবার নিয়ে আসেননি। গত শুক্রবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে অনেক শিশুই অভুক্ত। ত্রাণদাতারা শিশুদের জন্য কোনো খাবার আনছেন না।

দীর্ঘ পথ হেঁটে বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকেই শিশু সেলিমের মা নুরতাজ অসুস্থ। এর ওপরে বছর দেড়েকের একটি সন্তানসহ পরিবারে আরো পাঁচজন সদস্য রয়েছে। তাদের খাবার সংগ্রহ করা, কোথায় ঘর তৈরি করবেন, আত্মীয়স্বজনরা কোথায় আছেন ইত্যাদি নানা চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন নুরতাজ। এরপর থেকে তার বুকের দুধ শুকিয়ে গেছে। যে কারণে শিশু সেলিমকে এখন প্রায় অভুক্তই থাকতে হয়।
ক্ষুধার তাড়নায় গতকাল সকাল থেকেই শিশুটি কাঁদছিল। কোনোভাবেই কান্না থামানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত দুপুরের দিকে তাকে নিয়ে তার ফুপু আয়েশা রাস্তায় বের হয়। তার ধারণা ছিল শিশুটির কান্নাকাটি দেখে হয়তো তার হাতে কেউ খাবার ধরিয়ে দেবে। কিন্তু কেউ কিছুই দিচ্ছিল না। এরপর একজনের কাছে খাবার চাইতে দু’টি বনরুটি দেন। আয়েশা ওই খাবার নিতে চায়নি। পরে ভেবেছে অন্যরাতো খেতে পারবে।
ক্যাম্পগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ঘরেই দু-একটি শিশু রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য কোনো খাবার নেই। অনেক শিশু আছে যাদের মা নিহত হয়েছেন বর্মি বাহিনী অথবা মগদের হাতে। আত্মীয়স্বজনরা তাদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। এক বছর বয়সী তফসুরাতা আর দুই বছর বয়সী আয়াতুল্লাহকে নিয়ে বালুখালী ব্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন শিশু দু’টির নানী জোহরা বেগম। শিশু দু’টির বাবা রহিমুল্লাহ এবং মা হাজেরা বেগমকে মেরে ফেলেছে বর্মি বাহিনী ও মগরা। শিশু দু’টিকে নিয়ে তার নানী মংডুর হাইছসুরাতা থেকে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে বালুখালী এসেছেন। জোহরা বলেন, শিশু দুটির জন্য কোনো খাবার সংগ্রহ করতে পারেননি গত চার দিনেও। চিঁড়া মুড়ি ভিজিয়ে চিনি অথবা গুড় দিয়ে তা খাওয়ানো হয়। এতে শিশু দু’টি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, শিশুদের জন্য কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই। যারা ত্রাণ নিয়ে আসছেন তাদের কাছেও জানতে চাওয়া হয় শিশুদের জন্য খাবার এনেছেন কি না। কিন্তু যাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই বলেছেন, বিষয়টি তারা আগে ভাবেননি।
এখানে আশপাশে কোনো দোকানপাটেও শিশুখাদ্য পাওয়া যাচ্ছে না। শরণার্থীদের অনেকে বলেছেন, তারা নগদ কিছু অর্থও পাচ্ছেন। ওই টাকা দিয়ে তারা সন্তানদের জন্য খাবার কিনতে পারেন। কিন্তু এলাকায় কোনো শিশুখাদ্য না থাকায় তারা শিশু সন্তানদের নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। গতকাল অনেক মাকে দেখা যায় বোতলের কর্কে করে সন্তানকে পানি খাওয়াচ্ছেন। শিশুদের পানি খাওয়ানোর কোনো পাত্র পর্যন্ত নেই।

অভুক্ত শিশুসন্তানদের মুখের দিকে তাকালে কান্না আসে : ক্ষুধার্ত সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে চোখে পানি আসে। তাদের খাবার জোগাতে এখন হাত পাততে হয় মানুষের কাছে। এক বেলা খেলে বাকি দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। একটি খুপড়ি ঘরে সবাই থাকি। সোজা হয়ে ঘুমানো পর্যন্ত যায় না। ক্ষুধা লাগলে শিশুরা কান্নাকাটি করে। কিন্তু কিছুই করার থাকে না। অথচ তারা কোনো দিনই খাবারের জন্য কষ্ট পায়নি। একজন কুরআনের হাফেজ। মাদরাসায় চাকরি করতাম। জমিজমা যা ছিল তা দিয়ে টাকা পেতাম। অথচ এখন নিদারুণ কষ্টে আছি। আল্লাহ যে আরো কত লানত লিখে রেখেছেন তা একমাত্র তিনিই জানেন। কথাগুলো বলছিলেন হাফেজ মাওলানা আবুল কাশেম। মিয়ানমারের মংডুর মগনামা পাড়ায় তার বাড়ি। বর্মি বাহিনী ও সেখানকার উগ্রবাদী বৌদ্ধদের হাত থেকে বাঁচতে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি বাংলাদেশে চলে এসেছেন।
গতকাল বালুখালী কাস্টমস ছড়ার পাশের রাস্তায় কথা হয় হাফেজ আবুল কাশেমের সাথে। তিনি মিয়ানমারের মুসলমানদের করুণ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্মি বাহিনী ও নাডালা বাহিনীর প্রথম টার্গেট ছিল আলেম ওলামা ও মসজিদ মাদরাসা। যেখানে মগ ও বর্মি বাহিনী হামলা ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে সেখানেই তারা মসজিদ মাদরাসায় আগুন লাগিয়ে এবং আলেম ওলামা ও কুরআনের হাফেজদের হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে। মংডুর মংনামা পাড়ার তৌহিদিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন তিনি। গত ৩ সেপ্টেম্বর ওই এলাকায় হানা দেয় মগ ও বর্মি বাহিনী। পুড়িয়ে ফেলা হয় ওই মাদরাসাটি। আগুন লাগানো হয় শত শত ঘরবাড়ি ও মুসলমানদের দোকানপাটে। তিনি বলেন, তার পাড়ায় মোট ৭০০ ঘর ছিল মুসলমানদের। একটির পর একটি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি বলেন, অন্তত অর্ধশত লোককে তিনি হত্যা করতে দেখেছেন। তার তিন আত্মীয় মো: কাসিম (৩৫), সৈয়দ নুর (১৮) এবং মো: তৈয়বকে চোখের সামনে দিয়ে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে বর্মি বাহিনী। ওই সময় স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তান নিয়ে পাড়া থেকে বের হয়ে যান হাফেজ কাশেম। এরপর পাহাড় পেরিয়ে নাফ নদী পার হয়ে তিনি চলে আসেন এ পারে। আশ্রয় নেন বালুখালীর ওই ক্যাম্পে। পাহাড়ে বনে জঙ্গলে থেকে বর্মি সেনাদের নজর এড়িয়ে তাকে এপারে আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, পাঁচটি সন্তানকে সাথে নিয়ে কত কষ্টে যে আসতে হয়েছে তা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। এর মধ্যে সন্তানরা কোথায় হারিয়ে যায়, সাপ বিচ্ছু তাদের আক্রমণ করে কিনা তা খেয়াল রাখতে হয়েছে। এমনও সময় গেছে ক্ষুধার তাড়নায় শিশুরা কেঁদে উঠলে তাদের মুখ চেপে ধরেছেন যাতে তারা কাঁদতে না পারে। হাফেজ কাশেম বলেন, তিন দিন হয় ওই ক্যাম্পে এসেছেন। স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার দিতে গেলে এখন মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। ত্রাণের লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। এভাবে মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষে নিয়ে খাওয়ার চেয়ে না খেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। কিন্তু অবুঝ শিশুসন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজটি করতে হচ্ছে। ক্ষুধার্ত শিশুগুলো খাবার চেয়ে যখন কেঁদে ফেলে তখন স্বামী-স্ত্রী দুইজনই মুখ বুঝে কাঁদেন। একদিন তাদের সব ছিল। ঘরে খাবারের কোনো অভাব ছিল না। পাঁচ সন্তানকে কোনো দিন না খেয়ে এক বেলাও কাটাতে হয়নি। অথচ তারা এখন দিনে এক বেলাও পেট পুরে খেতে পায় না। পরনে কাপড় নেই। ওই শিশুসন্তানরাও ঘুমাতে পারে না। পাহাড়ি ঢলে ক্যাম্পে বুক পানি হওয়ায় ওই পাঁচটি সন্তান নিয়ে শনিবার মধ্য রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত দাঁড়িয়ে কাটাতে হয়েছে। ছোট্ট দুই শিশুকে কোলে করে তিনি এবং তার স্ত্রী রাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

হাফেজ আবুল কাশেম বলেন, আল্লাহর সর্বোচ্চ পরীক্ষা চলছে হয়তো। থাকা-খাওয়ার সঙ্কটতো চরমে। পায়খানা-প্রস্রাব করারও কোনো জায়গা নেই। ইজ্জত আব্রু কিছুই আর থাকছে না। গোসলের জায়গা নেই। পুরুষরা কোনোভাবে সারতে পারলেও নারীদের জন্য নিদারুণ কষ্ট। নারীরা যে কাপড় পরিবর্তন করবেন তারও সুযোগ নেই। একই কাপড়ে তাদের দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে। এ কাপড় ভিজছে, আবার শরীরেই শুকাচ্ছে। মানুষের কতটা দুর্ভোগ হলে এ পরিস্থিতিও মানিয়ে নিতে হয়! হাফেজ আবুল কাশেম বলেন, মগ আর বর্মি সেনাদের বিরুদ্ধে কখনোই তারা কথা বলতে পারেননি। মগরা যা চেয়েছে সেভাবেই মুসলমানদের মেনে নিতে হয়েছে।
নির্ঘুম দুই রাত : উখিয়ার কাস্টমস ছড়ার পাশের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা বলেছেন, বৃষ্টির পানি কমে গেলেও ঘরের মেঝেতে এখনো ঘুমানোর মতো পরিস্থিতি হয়নি। এই ক্যাম্পের মাঝি তৈয়ব বলেছেন, ঘরের ভেতরে এখনো স্যাঁতস্যাঁতে। এরূপ হাজার হাজার ঘর রয়েছে যা এখন থাকার অনুপযুক্ত। ওইসব ঘরের মানুষ গত শনিবার এবং রোববার রাতে ঘুমাতে পারেননি। ছোট্ট ছোট্ট শিশু সন্তানসহ তারা দাঁড়িয়ে এবং বসে রাত-দিন কাটাচ্ছেন।
সড়কের পাশের ঘরগুলো সরিয়ে ফেলা হচ্ছে : নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তার পাশে এবং লোকালয়ে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু গতকাল রোববার থেকে ওইসব ক্যাম্প অন্যত্র সরিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। ওইসব ক্যাম্প একেবারেই রাস্তার পাশে হওয়ায় কক্সবাজার টেকনাফের প্রধানসড়কটি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছিল। রাস্তার পাশে ঘর থাকায় ওইসব ক্যাম্পের বাসিন্দা বিশেষ করে শিশুরাও নিরাপদ ছিল না। তারা সুযোগ পেলেই দৌড়ে রাস্তার ওপর চলে আসত। যে কারণে গতকাল সকালে মাইকিং করে অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে দেখা যায় কুতুপালং রাবার বাগান, বালুখালী, কাস্টমসসহ বিভিন্ন এলাকার রোহিঙ্গারা তাদের ঘর খুলে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ঠকাচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষ : রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা অশিক্ষিত তাদের অনেকেই বাংলাদেশী টাকা চেনে না। তারা যে দান পাচ্ছেন সেই টাকার মান তারা অনেকেই বুঝে না। সূত্র জানায়, এর আগে বার্মিজ এক লাখ মুদ্রায় বাংলাদেশী সাত হাজার টাকা পাওয়া যেত। এখন এখানকার কিছু অসাধু মানুষ বার্মিজ এক লাখ টাকায় বাংলাদেশী তিন হাজার টাকা দিচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় যেসব স্থান দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকছে সেসব এলাকায় এই চক্রটি সক্রিয়। তারা কম টাকা দিয়ে বার্মিজ মুদ্রা কিনে রাখছে। আবার টাকার মান না বোঝায় কোনো কিছু কেনাকাটা করতে গেলে তাদের কাছ থেকে বেশি টাকা রেখে দেয় কিছু অসাধু লোক।
ঘরের জায়গা দেয়ার কথা বলে টাকা দাবি : কুতুপালং প্রধান বাসস্টেশনে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা ঘরগুলো গতকাল সরিয়ে নিতে বলা হলে সেখানে একদল লোক এসে রোহিঙ্গাদেরকে ঘর তোলার জায়গা দেয়ার কথা বলে টাকা দাবি করে। সেখানে অবস্থানকারী হোসেন আহম্মদ নামে এক শরণার্থী বলেন, ওখানে শতাধিক ঘর রয়েছে। সেখানে তাদের জন্য স্যানিটেশন ও পানির জন্য টিউবয়েলের ব্যবস্থা হয়েছে। এখন হঠাৎই তাদেরকে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। আর এই সুযোগে একদল লোক এসে তাদেরকে ভেতরে জায়গা দেয়ার কথা বলে টাকা দাবি করছে।

অসুস্থদের ভিড় : গত কয়েক দিনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু ও বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় যেসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে সেসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন রোহিঙ্গাদের উপচে পড়া ভিড়। কুতুপালং এলাকায় বিদেশী সাহায্যে গড়ে ওঠা একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের খবর নিয়ে জানা গেছে সেখানের কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসাসেবা দিতে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালসহ আশপাশে যেসব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সেসব হাসপাতালেও রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে অতি জরুরি না হলে সেসব স্থানে কাউকে পাঠানো হচ্ছে না।

রোহিঙ্গা প্রবেশ অব্যাহত : এখনো বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে নাফ নদী পার হয়ে এসব রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আসছেন। কুতুপালং এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মিনারা বলেছেন, একদিন আগে তিনি চাকঢালা আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তার সাথে আরো প্রায় তিন শ’ মানুষ প্রবেশ করেছে। তিনি দেখে এসেছেন ওপাড়ে এখনো অসংখ্য মানুষ অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য।
মানুষ দেখলেই হাত পাতছে তারা : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত চেষ্টার পরও ক্যাম্পে ঢোকানো যাচ্ছে না কিছু রোহিঙ্গাকে। পুলিশ, বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবীদের শত চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে কোথাও কোথাও। আর এসব রোহিঙ্গা মানুষ দেখলেই হাত পাতছে। বলছে ‘এককানা ট্যায়া দেও’। অনেকে গাড়ি আটকে টাকা দাবি করছে।

পটিয়ায় পালিয়ে আসা আটক ১১৫ রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুকে উখিয়ায় আশ্রয়শিবিরে প্রেরণ
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনের হাত থেকে পালিয়ে আসা ১১৫ রোহিঙ্গা শরণার্থী আটক করেছে পটিয়া থানা পুলিশ। আটকদের মধ্যে বয়স্ক পুরুষ, মহিলা ও শিশু রয়েছে। তাদের গতকাল দুপুরে আবার উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে প্রেরণ করা হয়েছে বলে থানা ওসি শেখ নেয়ামত উল্লাহ নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আশ্রয় নেয়া ১২ জনের নারী শিশুর একটি দল আটক করা হয়। রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো ১০৩ তিন জনসহ মোট ১১৫ জন নারী শিশু ও বয়স্ক পুরুষ-মহিলাকে আটক করা হয়।
 পটিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক আরাফাত হোসেন (২৩) জানান, আরাকানের মংডুতে তাদের বাড়ি। তার বাবা জহির উদ্দিনকে সে দেশের সেনাসদস্যরা ধরে নিয়ে যায়। এভাবে ওই গ্রামের অনেককেই তারা হত্যা করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। তিনি তার মাসহ পরিবারের আট সদস্য কোনোভাবে জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তারা প্রথমে উখিয়ার কুতুপালংয়ের একটি আশ্রয়শিবিরে দুই দিন ছিল। সেখান থেকে তারা পালিয়ে এসেছেন। লোহাগাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, প্রথমবার ৩২ জন, দ্বিতীয়বারে ১২ জন, তৃতীয় দফায় ৪০ জন রোহিঙ্গাসহ ৮৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী আটক করে আশ্রয় শিবিরে পাঠানো হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/252969