১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১১:০৫

সোনালী-রূপালীর অবস্থা নাজুক

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লোকসানি শাখা ৫৩৩

অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এছাড়া যত্রতত্র শাখা খোলার কারণে বাড়ছে লোকসানি শাখা। গত ডিসেম্বর শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোতে লোকসানি শাখা ছিল ৪৪৬টি। চলতি বছরের জুনে দাঁড়িয়েছে ৫৩৩টিতে। এতে ছয় মাসে লোকসানি শাখা বেড়েছে ৮৭টি। বিশেষ করে সোনালী ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। রূপালী ব্যাংকের অবস্থাও প্রায় অভিন্ন।

আশানুরূপ ঋণ আদায় না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়ছেই। রাষ্ট্রীয় ৪ বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ-২০ খেলাপির কাছেই আটকে আছে ৯ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৩৪ শতাংশ। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পর্যালোচনা বৈঠকে এসব তথ্য ওঠে আসছে। বৈঠকে ব্যাংকগুলোর সার্বিক সূচকের উন্নয়নে খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্যে আদায় জোরদার এবং গুণগত মানের ঋণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে করা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পর্যালোচনা করা হয়েছে। এমওইউ চুক্তি অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ কমানো, ঋণ আদায়, ঋণ অবলোপন এবং লোকসানি শাখা কমানোর বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সূত্র বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আজকের করুণ পরিণতির জন্য আগের পরিচালনা পর্ষদ এবং এমডিরাই দায়ী।
বৈঠকের তথ্য অনুযায়ী, জুনে রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক লাখ ১২ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি ছিল ২৬ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। এই অংক মোট ঋণের ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। এক বছর আগে ব্যাংকগুলোর এক লাখ ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ২৩ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৯৮ শতাংশ ছিল খেলাপি।

জুনে সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ-২০ খেলাপির কাছে পাওনা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ২৩২ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে বছরের পর বছর বিপুল অংকের মূলধন জোগান দিয়ে আসছে সরকার। চার অর্থবছরে এসব ব্যাংকে ৫ হাজার ২১০ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেয়া হয়েছে। এরপরও সোনালী ব্যাংকে ২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ৭৪১ কোটি টাকা। তবে জনতা ব্যাংকের ১৭ কোটি এবং অগ্রণীর ১৯৫ কোটি টাকার মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে লোকসানি শাখা ছিল ২৩৩টি। চলতি বছরের জুন শেষে এ শাখা হয়েছে ২৮৫টি। ছয় মাসে লোকসানি শাখা বেড়েছে ৫২টি।
এছাড়া জুনে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বা ৩৪ দশমিক ৫০ শতাংশে।
জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ যুগান্তরকে বলেন, খুব বেশি অগ্রগতি নেই। খেলাপি, মূলধন ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি আগের অবস্থায় রয়েছে। তবে চেষ্টা করছি সংকট কাটিয়ে উঠতে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুনে রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা দাঁড়ায় ৭৪টিতে, যা গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৮৭টি। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বা চার হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি রয়েছে।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান যুগান্তরকে বলেন, লোকসানি শাখা আরও কমিয়ে আনা হবে। প্রয়োজনে বেশকিছু শাখা একীভূত করা হবে। কিছু শাখা স্থানান্তর করা হবে।

https://www.jugantor.com/first-page/2017/09/13/155055