১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:৫০

এক গ্রামেই গুলি ও পুড়িয়ে ৭৩ রোহিঙ্গাকে হত্যা

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ আরো আট রোহিঙ্গা নিহত ; গুলিবিদ্ধ ৫ জনের শরীরে পচন ধরেছে

রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে গণহত্যা চালাচ্ছে তা প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গাদের বর্ণনায় উঠে আসছে। রাজ্যের মংডু জেলার একটি গ্রামেই বর্মি সেনারা নির্বিচার গুলি চালিয়ে ও ঘরে আগুন দিয়ে ৭৩ জনকে হত্যা করেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সীমান্তে যে স্থলমাইন পুঁতে রাখছে তাতে রোহিঙ্গাদের হতাহত হওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের কাছে সেনাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় তিন রোহিঙ্গা নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ দিন পর বাংলাদেশে পৌঁছা পাঁচ রোহিঙ্গার শরীরে পচন ধরেছে। এ দিকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে এক জায়গায় রাখার জন্য সরকার দুই হাজার একর জায়গা নির্ধারণ করছে।

রাখাইনের মংডু থানার দক্ষিণ শিলখালী গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে ডা: আবদুল আজিজ পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। তিনি ১৯৭৮ সালেও শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন। পরে মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত হন। তিনি তার এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ২৫ আগস্ট সকালে সেনাবাহিনীর গণহত্যার বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।

ডা: আবদুল আজিজ বলেন, ‘গ্রামের চার দিকে হঠাৎ করেই নির্বিচার গুলির শব্দ। চমকে উঠে ঘর থেকে উঠানে বের হই। দেখি পাশের গ্রামের বাড়িগুলো দাউ দাউ করে জ্বলছে। মানুষ দিগি¦দিক ছুটোছুটি করে পালাচ্ছে। এ সময় নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে বর্মি সেনারা। চোখের সামনে জুলেখাসহ পরিবারের ছেলেমেয়ে, নাতনীসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছে জয়নাল ও আবুলের কিশোর ছেলে। আনজুল হোছনের ছেলে ত্র বাইট্টাকে সরাসরি গুলি করেছে সেনারা। বানু নামে এক মহিলাকে ঘরের ভেতর রেখে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘চোখের সামনে এভাবে হত্যার দৃশ্য দেখে আমি আর এক মুহূর্তও বাড়িতে অবস্থান করিনি। পরিবারের আট সদস্যকে নিয়ে পাহাড়ের দিকে ছুটেছি। ওই দিকে বর্মি সেনারা গ্রামের পর গ্রামে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। মানুষ যে দিকে পারে ছুটছে। এ সময় সেনারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে অনেককে। পালানোর সময়ে কে মরছে দেখার ফুসরত ছিল না। একই গ্রামের ৪০ থেকে ৫০টি পরিবার পাহাড়ে অবস্থান নেয়। পরের দিন সীমান্তের দিকে অগ্রসর হতে থাকি। এভাবে প্রায় ১৪ দিন অর্ধাহারে অনাহারে লুকিয়ে পাহাড়ি পথে হাঁটার পর দলবদ্ধভাবে ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার নাইক্ষ্যংদিয়া সীমান্তে পৌঁছি। পর দিন শুক্রবার রাতে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকি। পরে খবর নিয়ে জেনেছি উত্তর শীলখালী গ্রামে এক রাতেই ৭৩ জনকে পুড়িয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে সেনারা। যুবতীসহ নারীদের ধরে নিয়ে গেছে। পথে ও ধানক্ষেতে নারী ও শিশুদের পড়ে থাকতে দেখেছি।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মংডু জেলার মেরুল্লার গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা যুবক জাফর হোছন (৩০) গত শনিবার মিয়ানমার থেকে সাগরপথে টেকনাফ উপকূলে পৌঁছেন তিনি। পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীকে মিয়ানমারের হিংস্র বাহিনীর নৃশংসতার বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, ২৫ আগস্ট ভোর ৩টা। হঠাৎ গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দে শব্দে তার ঘুম ভাঙে। কাছেই বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ক্যাম্প। সে দিক থেকেই আসছে গোলাগুলির শব্দ। জাফর হোছনের বুঝতে বাকি থাকে না কী ঘটছে। চার দিকে ছোটাছুটি, গুলির শব্দ ও আগুন। এর মধ্যেই তিনি এগিয়ে গেলেন ক্যাম্পের দিকে। দেখলেন তার গ্রামের শতাধিক যুবক লাঠি ও দা-কিরিচ নিয়ে লড়ছে। এ সময় বিজিপির গুলিতে তার চোখের সামনে ১০ জনের মতো ছটফট করতে থাকে। প্রায় সবাই তার গ্রামের পরিচিত মুখ। একপর্যায়ে পিছু হটে যুবকেরা। যে যে দিকে পারে প্রাণ বাঁচাতে পালাতে থাকে। হতবিহ্বল জাফর হোছেনও পালাতে থাকে তাদের সাথে। এ সময় এক বর্মি পুলিশের লাঠির আঘাতে জ্ঞান হারায়। সকালের দিকে যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন নিজেকে একটি ঝোঁপের ভেতর আবিষ্কার করে। গ্রামের দিকে তাকিয়ে দেখেন দাউ দাউ করে জ্বলছে অনেকগুলো বাড়ি। গ্রামের নারী-পুরুষেরা প্রাণ বাঁচাতে পাহাড়ের দিকে ছুটছে। গ্রামে সেনা ও পুলিশের টহল দেখতে পান।
আহত জাফর কোনোরকমে এক কিলোমিটার দূরের পাহাড়ে আশ্রয় নেন। পরে খোঁজে বের করেন স্ত্রী রুবিনা আক্তার (২১) ও দুই শিশুসন্তান ফাহেদ (৩ মাস) ও মো: শাহেদকে (১৯ মাস)। কিন্তু তিনি তার বাবা-মাকে খোঁজে পাননি এখনো। সেনা ও পুলিশকে এড়িয়ে আস্তে আস্তে পাহাড়ি পথে এগোতে থাকেন বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে। ১২ দিন হেঁটে অনাহারে অর্ধাহারে পৌঁছেন রাখাইনের নাইক্ষ্যংদিয়া দ্বীপে। সেখানে আরো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকার জন্য অবস্থান করছে। গত শনিবার ভোরে সাগরপথে টেকনাফের লেঙ্গুরবিল সৈকত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন।

জাফর আরো জানান, সেনা ও পুলিশের দীর্ঘ দিনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বছরখানেক ধরে সংগঠিত হচ্ছিল রোহিঙ্গা যুবকেরা। মাস ছয়েক আগে আরাকান স্যালভেশন আর্মির কয়েকজন সদস্য মেরুল্লা গ্রামের নির্যাতিত কয়েক শ’ যুবককে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হন। এভাবে তারা কয়েক শ’ যুবককে সংগঠিত করে গোপনে লাঠি ও দা-কিরিচ দিয়ে প্রশিক্ষণও দেন। অন্যদের সাথে জপুর হোছেনও প্রশিক্ষণ নেন। ২৫ আগস্ট সেনা ও পুলিশের হামলা ঠেকাতে এ যুবকেরাই চেষ্টা করেছেন। তাদের অনেকেই গুলিতে নিহত হয়েছেন। আবার অনেকে রাখাইনে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ আহত হয়ে অথবা প্রাণ বাঁচাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে আসেন এপারে। আহত জপুর হোছেন তার পরিবারের খাদ্য, পানি, চিকিৎসা সঙ্কটে দিশেহারা। গত শনিবার সকালে টেকনাফ পৌর এলাকার পল্লান পাড়ায় আলাপকালে এসব বর্ণনা দেন তিনি। এ সময় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে একটি গ্রুপ এলে জপুর স্ত্রী রুবিনা খাদ্যের জন্য ছুটে যান রোহিঙ্গাদের ভিড়ে।
গুলিবিদ্ধ ৫ রোহিঙ্গার শরীরে পচন
গ্রামে সৈন্যদের হামলার ১৩ দিন পর গুলিবিদ্ধ এক নারী, একটি শিশু এবং তিন কিশোর সীমান্ত অতিক্রম করে শুক্রবার রাতে টেকনাফে পৌঁছে। ৯ সেপ্টেম্বর সকালে আহতদের চিকিৎসার জন্য টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দেখা যায় পচন ধরে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে শরীর থেকে। স্বজনেরা কোলে-কাঁধে করে তাদের নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও আশঙ্কামুক্ত নয় তারা। গুলিবিদ্ধ তিন রোহিঙ্গা হচ্ছেন বুচিদংয়ের রাচিদং এলাকার ইমাম শরীফ (১৭), আবদুল করিম (১৮), মংডু বড়ছড়ার ইব্রাহীম (২২), জমিলা খাতুন (৩২) ও ইতিলার গোঁয়াইং গ্রামের মো: সাফাত (৮)।

এদের মধ্যে পায়ে ও হাতে গুলিবিদ্ধ আবদুল করিমকে ভাইয়েরা একটি ঝুড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে কাঁধে করে ১৩ দিন পর সীমান্ত অতিক্রম করেন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাকেসহ অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর আইওএম’র তত্ত্ব¡াবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানান টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সুমন বডুয়া। গুলিবিদ্ধদের স্বজনেরা জানিয়েছেন, ২৫ আগস্ট পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। পরে আহতাবস্থায় পাহাড়ে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করতে এতদিন লেগেছে। বর্তমানে আহতদের আইওএম’র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারের মংডু বড়ছড়া এলাকায় পঞ্চাশ জনের এক দল সেনা এ এলাকার অনেক লোককে গুলি করে হত্যা ও যুবতীদের অপহরণ করে। তারা বেশির ভাগ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পালাতে গিয়ে ওই এলাকার যুবক ইব্রাহীমকে (২২) লক্ষ্য করে রকেট লাঞ্চার ছুড়ে। লাঞ্চারের আঘাতে তার ডান পা জর্জরিত হয়ে যায়। দুই দিন ব্যথায় কাতর থেকে তার স্ত্রী-সন্তানসম্ভাবা নুরজাহান ও শ্বশুরসহ ১১ জনের পরিবার তিন দিন অতিবাহিত করে এপারে অনুপ্রবেশ করে বলে জানান আহতের শ্বশুর নুরুল ইসলাম। এপারে আসতে গিয়ে হাবিরছড়া নৌকার মাঝি সাইফুল্লাহকে দিতে হয়ে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা। আহত ইব্রাহীমকে টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ভর্তি করা হয়েছে।
মাইন বিস্ফোরণে নিহত তিন : সীমান্তে আবারো মাইন বিস্ফোরণে তিন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। আরেকজন মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বাংলাদেশে আসতে পেরেছেন। শনিবার মধ্য রাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ি এলাকার উল্টো দিকে নো ম্যান্স ল্যান্ডের কাছে এই বিস্ফোরণ।

ঘুমধুম সীমান্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৩৪ ব্যাটলিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান এ তথ্য নিশ্চিত করে দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানান, রাখাইন অঞ্চলের নো ম্যান্স ল্যান্ডের কাছে নারায়ণচঙ্গ এলাকায় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরিত হয়েছে। বেঁচে আসা রোহিঙ্গার উদ্বৃতি দিয়ে তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ অভিমুখী দলে চারজন রোহিঙ্গার মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। আরেকজন গুরুতর আহত অবস্থায় বাংলাদেশে ঢুকেছেন।

ঘুনধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ সীমান্তের স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, ঘুমধুম সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের দিকে বিতাড়নের জন্য গুলিবর্ষণ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তারা সীমান্তের জিরো লাইনে এসে অস্ত্র উঁচিয়ে দলবদ্ধভাবে টহল দিচ্ছে। উল্লেখ্য, নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গারা যাতে ফেরত যেতে না পারেন সেজন্য পুরো সীমান্তজুড়ে মাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার সেনারা। অহরহ এসব মাইন বিস্ফোরণে বহু রোহিঙ্গা হতাহত হচ্ছেন। তাদের লাশও পাওয়া যাচ্ছে না।
রোহিঙ্গাদের জন্য স্থান নির্ধারণ : এদিকে বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গা প্রবেশের ¯্রােত কিছুটা কমে এসেছে। একসাথে অধিকসংখ্যক রোহিঙ্গার আগমনের ফলে তাদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন ও বেসরকারি সাহায্য সংগঠনগুলো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় রাখার জন্য দুই হাজার একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জমিতে শিগগির কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।
তিনি জানান, সব রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধনও করা হবে। গত দুই দিন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেছি। এতে আমাদের মনে হয়েছে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব রোহিঙ্গার অনেকেই বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা এসব রোহিঙ্গা মূলত এক জায়গায় করার জন্য কিছু জমি নির্ধারণ করেছি। নির্ধারিত জমিতেই রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িকভাবে ক্যাম্প তৈরি করা হবে। আর রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
বান্দরবান সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে ৫ জন নিহত
বান্দরবান সংবাদদাতা মিনারুল হক জানান, বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) পেতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা বাড়ছে। গত দু’দিনে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় তিনটি স্থানে স্থলমাইন বিস্ফোরণে পাঁচ রোহিঙ্গা নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।
গতকাল ভোরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও রেজু আমতলীর মাঝখানে ৪০ নম্বর পিলারের কাছে দুটি মাইন বিস্ফোরণে একজন রোহিঙ্গা নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন। ভোরে তুমব্রু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে স্থলমাইন বিস্ফোরণে আবুল খায়েরের ছেলে মো: হাসানের পা উড়ে যায়। দুপুরে রেজু আমতলীর মাঝখানে ৪০ নম্বর পিলারের কাছে মাইন বিস্ফোরণে সলিমুল্লাহ নিহত ও নুরুল আমিন আহত হন।

অন্য দিকে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রেজু সীমান্তে ৩৯ নম্বর পিলারের কাছে মাইন বিস্ফোরণে তিন রোহিঙ্গা নিহত ও একজন আহত হন। হতাহতরা সবাই সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে একজনকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে রেজু এলাকায় নিহত তিনজনের নাম ও পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো: ফরিদ আহম্মদ জানান, শনিবার রাতে বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে একজন পরে মারা যান। ওপারে তিনজন মারা যাওয়ার কথা আহতরা জানিয়েছেন। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ জানান, তুমব্রু সীমান্তে বিস্ফোরণে একজন আহত হন। এ ছাড়া রেজু আমতলীর মাঝখানে গতকাল দুপুরে বিস্ফোরণে একজন নিহত ও অপরজনের পা উড়ে যায়। নিহতদের লাশ এপারে আনা সম্ভব না হলেও আহতরা চিকিৎসার জন্য এপারের হাসপাতালগুলোতে আসছেন। হতাহতদের বিষয়ে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার কর্নেল আনিস জানান, সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণের তথ্য আমরা পাচ্ছি। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসব ঘটনা হওয়ায় বিস্তারিত কিছু জানা সম্ভব হচ্ছে না। তুমব্রু ও রেজু এলাকায় মাইন বিস্ফোরনে তিনজন আহত হওয়ার কথা তিনি স্বীকার করলেও নিতহদের বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

এ দিকে রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। গতকাল সকাল থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু আমতলী, চাকঢালা ও আশারতলী সীমান্তের জিরো লাইনের সাতটি আশ্রয় শিবিরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরির কাজ করছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপকুমার বণিক জানান, সীমান্তের ওপার থেকে বান্দরবানে অনুপ্রবেশকারী কোনো রোহিঙ্গাকে এখানে থাকতে দেয়া হবে না। সব রোহিঙ্গাকে অল্প সময়ের মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী এলাকায় নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরিয়ে নেয়া হবে। এ কারণে জিরো লাইন ও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনকার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ দিকে বান্দরবানের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে খাদ্য ও খাবার পানির সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোহিঙ্গা শিবিরগুলাতে শুকনো খাবার দিচ্ছে।

গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলযোগের পর সেখানে সেনা অভিযানে এ পর্যন্ত বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এখনো জিরো লাইনে অবস্থান করছে ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/250782