৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:১৭

হাওরে বন্যার্তদের দুর্ভোগ

দীর্ঘস্থায়ী বন্যার ধকল পোহাতে হচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে। বন্যায় তাদের জীবন-জীবিকা রুদ্ধ হয়ে গেছে। হারিয়ে ফেলেছে বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকু। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোণা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বিশেষ করে সেখানকার হাওর অঞ্চল এখনও বানের পানিতে ভাসছে। হাজার হাজার বাড়িঘর, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ক্ষেত-খামার, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে আছে। চরম আকার ধারণ করেছে বন্যার্তদের নিত্যদিনের কষ্ট-দুর্ভোগ। গতকাল (মঙ্গলবার) আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে ফের ভারী বর্ষণ হয়েছে। উজানে ভারতে বরাক অববাহিকায় অতিবৃষ্টিতে সুরমা, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদীর পানির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটছে। তাছাড়া পানিহ্রাসের গতি এখনও ধীর। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর জনপদের তিস্তা নদী এবং যমুনা নদের পানি বিভিন্ন পয়েন্টে কিছুটা বৃদ্ধি পায়। যদিও এখন উভয় নদী বিপদসীমার বেশ নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ দিনের পূর্বাভাসে জানায়, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরাসহ বাংলাদেশের উজানভাগে লাগোয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর বৃষ্টিপাতের পরিধি আরও বেড়ে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ছাড়াও সাব-হিমালয়-পাদদেশ এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গেও হতে পারে ভারী বর্ষণ। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে উঠার কারণে সেসব অঞ্চলে ফের অতিবৃষ্টি হলে উজানের পানি গড়াবে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে। এরফলে সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে খুব ধীরে, দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে বন্যা। তবে নেত্রকোণার কংস নদীর পানি দীর্ঘদিন পর বিপদসীমার নিচে নেমেছে। প্রসঙ্গত ভারতের আসাম, মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে-বানের তোড়ে গত এপ্রিল মে মাসে সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল আকস্মিক ও অকালে ভয়াবহ বন্যা কবলিত হয়। তখন থেকে হাওর জনপদে চলছে টানা দুর্যোগে মানুষের মাঝে হাহাকার।

এদিকে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, গতকাল চারটি নদ-নদী ৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দেশের নদ-নদীসমূহের ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে পানি হ্রাস পায় ৬৩টিতে, বৃদ্ধি পায় ২০টিতে এবং অপরিবর্তিত থাকে ৭টি পয়েন্টে। নদ-নদীর পূর্বাভাসে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ এবং কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদে পানির সতমল আগামী ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সতমল হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। আর সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

গত এপ্রিল মে মাসে প্রথম হাওর জনপদ হঠাৎ বন্যা কবলিত হওয়ার পর জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চল, টাঙ্গাইলসহ দেশের মধ্যাঞ্চল, নেত্রকোনাসহ উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও বৃহত্তর সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভাসিয়েছে ব্যাপক বন্যা। কেড়ে নিয়েছে ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার, গবাদি পশু-পাখি এবং হাজার হাজার বাড়িঘর। সরকারি হিসাবমতে, দেশের ৩২টি জেলায় ৭৯ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে তা কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এখনও লাখ লাখ বন্যার্ত মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধের সঙ্কটে দিশেহারা অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। লাখো বন্যার্ত মানুষের নেই পরিবার-পরিজন নিয়ে মাথাগোঁজার আশ্রয়টুকুও। তারা অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা বাঁধের উপর, খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল-পলিথিন টাঙিয়ে রাত কাটাচ্ছে। বন্যার্তদের কাছে ত্রাণ সাহায্য পৌঁছেছে খুবই অপ্রতুল। অনাহারে-অর্ধাহারে তারা দিনগুজরান করছে। খাবারের আশায় তাকিয়ে আছে লাখো বন্যার্ত।
গতকাল বিভিন্ন নদ-নদীর বিপদসীমায় প্রবাহের সর্বশেষ অবস্থান ছিল, সিংরায় গুর নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত থাকার ফলে বিপদসীমার ৮ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেটে সুরমা নদীর পানির কিছুটা হ্রাস পেয়ে কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা অমলশীদে বিপদসীমার ৬৪ সেমি, শেওলায় ৬৪ সেমি এবং শেরপুর-সিলেটে ৯ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। দিরাইয়ে পুরাতন-সুরমা নদীর পানি প্রায় অপরিবর্তিত থাকায় বিপদসীমার ১১ সেমি উপরে এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৯ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে নেত্রকোণা জেলায় কংস নদীর পানি ক্রমেই হ্রাস পেয়ে বিপদসীমা থেকে এখন একশ’ সেমি নিচে রয়েছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/94567