১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৪৫

বইরগ্যার ও লাম্বাফারার বিলে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এবার মাংগালার দিকে আগাচ্ছে মগ বাহিনী

আরাকান মুসলিমশুন্য করতে মিয়ানমার সামরিক জান্তাদের কিলিং অপারেশন থেমে নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ৬ নং ওয়ার্ডের দারোগাডেইল পাড়ার বইরগার বিল ও লাম্বাফারার বিলে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে সেনাবাহিনী। এ সময় কয়েক হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও যাদের আটক করতে পেরেছে তাদের সবাইকে জীবিত অবস্থায় মাটি খনন করে কবর দিয়েছে এবং পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এরপরে সামরিক জান্তারা মাংগালার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছে পালিয়ে সীমান্তে আসা রোহিঙ্গারা। এছাড়াও আন্দাংয়ে পুনরায় অগ্নিসংযোগ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সৈন্যরা অগ্নিসংযোগ করতে করতে আন্দাংয়ের বড় মাদ্রাসা পর্যন্ত পৌছেছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও খুইন্যা পাড়া গেরেক খালী এলাকার সমস্ত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। মংডুর তুলাতলী, খুইন্যা পাড়া, দংখালী, ওয়াইক্ষ্যং, রাবাইল্যা, বচ্ছরা, বলিবাজার, কাওয়ারবিল, মগনামা, ঢেঁকিবনিয়া, পেরামপুর, হায়নখালীসহ আরো অনেক গ্রামে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদিন নারকীয় তা-ব চালিয়েছে মগসেনারা। তৎমধ্যে তুলাতলি, খুইন্যাপাড়া ওয়াইক্ষং এর অবস্থা খুবই নাজুক, রক্তাক্ত ও অমানবিক।

সূত্র জানিয়েছে, সকাল থেকে কয়েক প্লাটুন সৈন্য তুলাতলি ঘেরাও করে। তারপর চিরুণী অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা পুরুষদের ধাওয়া করে । খবরটি পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের নারী, শিশুসহ সকলে পালাতে শুরু করে। সেনাদের হিং¯্রতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ নদীতে ঝাপ দেয়। এসময় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে অনেক শিশু নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অন্যদিকে, পুরো গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেয় সামরিক জান্তারা। রোহিঙ্গাদেরকে যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানে গুলি করেছে। আটককৃত রোহিঙ্গাদের গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মেরেছে। যে সব বয়স্ক লোক হাঁটতে না পারার কারণে পালিয়ে যেতে পারেনি, তারা বসতঘর পুড়ে যাওয়ার সময় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। আগুনে দগ্ধ হওয়া বৃদ্ধদের একজন মাওলানা আহমেদ হোসাইন (৯৫)। তিনি রোহিঙ্গাদের বড় একজন পীর ও আলেম ছিলেন। তার হাত ধরে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেছে অনেক রোহিঙ্গা নাগরিক। বর্তমানে তুলাতলি গ্রামটি জনশূন্য।

এদিকে খুইন্যা পাড়া ও ওয়াইক্ষং-এ বহু বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দিয়েছে সৈন্যরা। এসময় শিশুসহ বেশ ক’জন রোহিঙ্গা পুড়ে মারা গেছে। খুইন্যা পাড়ার স্থানীয় ইয়াসিনের ছেলে রফিক আর হারুনকে আটক পরবর্তী গরু ছাগল জবেহ করার মত করে গলাকেটে হত্যা করেছে।

এদিকে প্রাণ রক্ষায় নিজ বাসভূমি আরাকান ছেড়ে পাশ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে আশ্রীত হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এক মুঠো খাবারের জন্য হাহাকার করছে। শরণার্থী ক্যাম্প সহ নতুন করে গড়ে উঠা আশ্রয়স্থল ঘুরে এপরিস্থিতি জানা যায়। তারা এলাকার প্রতিটি স্থানে ছড়িয়ে ছিঠিয়ে খোলা আকাশের নিছে বসবাস করছে। যেখানে নেই কোনো খাবার ব্যবস্থা। চিকিৎসার ব্যাবস্থা। কাটাছেড়ায় লতাপাতার রস লাগিয়ে চিকিৎসা চলছে। খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেওয়ায় একদিকে রোদ বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে। অন্যদিকে আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছে। চারদিকে কান্নার ¯্রােত আর হাহাকার। আর কত কষ্ট সহ্য করতে হবে তার কোনো সীমানা নেই। তবে সব কষ্ট সহ্য করা গেলেও ক্ষুধার জালা কিভাবে কত দিন সহ্য করবে তারা।

http://www.dailysangram.com/post/298339