রাজশাহী : কুরবানীর পশুর হাটে ভারতীয় গরুর দাপটে কোনঠাঁসা দেশী গরু। রাজশাহী সিটি হাটের দৃশ্য
২৯ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৪৬

রাজশাহীতে ভারতীয় গরুর দাপট ॥ বিপাকে খামারিরা

: রাজশাহীতে কুরবানীর পশুর হাটে ভারতীয় গরুর দাপটে দেশী গরু কোনঠাঁসা অবস্থায় পড়েছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন দেশী গরুর খামারিরা।
আসন্ন কুরবানী উপলক্ষে রাজশাহী অঞ্চলের হাটগুলোতে দেশি গরু-মহিষ আমদানি যেমন বেড়েছে, তেমনি এ অঞ্চলের সীমান্ত পথেও ভারত থেকে গরু-মহিষ আসছে। বন্যার কারণে স্থানীয় ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেপারিরা বিপুলসংখ্যক পশু কিনে চালান দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। হাট মালিকরা বলছেন, এবার দেশি গরুর আমদানি বেশি। এর ওপর ভারতীয় গরু আসতে থাকায় কোরবানির পশু সংকট নেই। তবে ভারতীয় গরু আমদানী বাড়তে থাকায় দেশী গরুর বাজার সংকটে পড়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট রাজশাহী সিটি হাটের লোকজন জানান, বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা এবং গো-খাদ্যের অভাবে গৃহস্থরা পোষা গরু-মহিষ বিক্রি করে দিতে হাটে তুলছেন। ফলে অন্যবারের তুলনায় এবার দেশি গরু-মহিষের আমদানি বেশি। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার করে গরু-মহিষ আসছে ভারত থেকে। এসব বোল্ডার (বড় আকারের) গরু-মহিষের অধিকাংশই চলে যাচ্ছে রাজধানীর গাবতলী হাট অথবা চট্টগ্রামসহ দূরের গন্তব্যে। রাজশাহী সিটি হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এ হাট গরু-মহিষে ঠাসা। এতটুকু স্থান ফাঁকা নেই। প্রতিদিন এ হাটে ৫ থেকে ৭ হাজার গরু-মহিষ বিক্রির জন্য আসছে। তবে স্থানীয়ভাবে বেচা-বিক্রি এখনো জমে উঠেনি। প্রাণিসম্পদ দফতরের হিসাব মতে, রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা ৩ লাখ ১০ হাজার। কিন্তু ১৭ হাজার খামারে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ পশু কোরবানির জন্য মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৫৮ হাজার। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করেও ৪৩ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকার কথা। এ বছর উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে গৃহস্থরাও তাদের পালিত পশু বিক্রির জন্য হাটে তুলছেন। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে এবার অতিরিক্ত আরও ৫০ হাজার পশু বিক্রির জন্য হাটে আসছে। এর ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও লক্ষাধিক গরু-মহিষ চালান হবে রাজশাহী থেকে।

এদিকে রাজশাহী জেলার খামারগুলোতে যে পরিমানে পশু আছে তা কুরবানীর চাহিদা পুরণ করলেও ভালো দাম পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় পড়েছে খামারিরা। ভারতীয় গরু হাটে আগের চেয়ে বেশি আমদানি হওয়ার কারণে খামারিদের মধ্যে এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্রাহামা জাতের গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক খামারি। জানা গেছে, পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের দিকে রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর জেলার আট উপজেলায় শুরু হয় ব্রাহামা জাতের গরু পালন। এ পর্যন্ত ওই তিন জেলার ৪০০ প্রান্তিক খামারির গোয়ালে এসেছে ২৫৬ এঁড়ে এবং ২০৩ বকনাসহ ৪৫৯টি বাছুর। এর মধ্যে দুই শতাধিক খামারি বিক্রি করে দিয়েছেন গরু। মাংসের ঘাটতি পূরণে পরীক্ষামুলক বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২৪ মাস বয়সেই ব্রাহামা জাতের গরু ৮০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার কেজি বা এক টন মাংস উৎপাদনে সক্ষম। যেখানে অন্তত দশ বছরে একটি দেশী গরু থেকে মাংস উদপাদন হয় সর্বোচ্চ ৪০০ কেজি। এরই মধ্যে উৎপাদনের পদ্ধতি, সফলতা ও জনপ্রিয়তা বিস্তৃত হতে শুরু করেছে।

http://www.dailysangram.com/post/298027