২৬ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ৯:৪৮

ঈদের মূল যাত্রা শুরুর আগেই যানজটে নাকাল

ঈদযাত্রায় মহাসড়কের কোনো কোনো স্থানে দুর্ভোগ হতে পারে, এমন আশঙ্কার মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব স্থান পরিদর্শন করছেন। কিন্তু যানজটে আটকে মানুষের কষ্ট দূর হচ্ছে না। ঈদের মূল যাত্রা শুরু হওয়ার আগের এই দুর্ভোগ ভয় জাগাচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর মহাসড়ক পরিদর্শন করেন ওবায়দুল কাদের। বিকেলের পর উত্তরের পথের বিভিন্ন অংশে ১০ কিলোমিটার জট ঠেলে যানবাহন চলেছে। টাঙ্গাইল অংশে যানবাহনের ধীরগতি ছিল। ঢাকা-খুলনা পথে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া এবং দক্ষিণের পথে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে যানবাহনের সারি দেড় থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল।

গত বৃহস্পতিবারও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। ওই দিন দুপুরে সেতুমন্ত্রী মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল প্লাজা পরিদর্শনে গিয়ে ঈদযাত্রায় আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ঈদে যান চলাচল সচল রাখার সব চেষ্টার কথাও জানান। কিন্তু গতকাল অবস্থার কোনো হেরফের হয়নি।

গতকাল মন্ত্রীর সফরের সময় পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা দাবি করেছেন, ঈদে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি এবং যানবাহন বিকল হওয়ার কারণে যানজট হচ্ছে। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী সোমবার থেকে ঈদের মূল যাত্রা শুরু হবে। তাই এখনো ঈদের চাপ পুরোপুরি শুরু হয়নি। ঢাকামুখী কোরবানির পশুবাহী যানবাহনও তেমনভাবে আসা শুরু হয়নি। এখনকার যানজটের মূল কারণ সড়কের খানাখন্দ। কিছু কিছু স্থানে খানাখন্দ মেরামতের কারণেও যানবাহনের গতি কমে জট হচ্ছে। সেতুর টোল আদায়ে ধীরগতি ও ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে হয়রানিও বড় কারণ। ব্যবস্থাপনাতেও ত্রুটি আছে।
জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এক পরিচিত ব্যক্তি গতকাল ১০ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে ফেনী যান। ঈদ এলে তড়িঘড়ি ভাঙা সড়ক মেরামত একটা অপচয়-লুটপাটের সুযোগ করে দেয়। একই তোড়জোড় ঈদুল ফিতরেও ছিল। কিন্তু তা দুই মাসও টেকেনি।
প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, কালিয়াকৈরে মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে গতকাল সকালে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদের ছুটি বাতিল করার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘বর্ষাকালে বৃষ্টি তো হবেই। বৃষ্টিকে ভিলেন বানিয়ে, অজুহাত সৃষ্টি করে রাস্তা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী থাকবে, এটা হয় না। বৃষ্টিরও ট্রিটমেন্ট আছে। যখন বৃষ্টি চলে, তখনো রাস্তার ট্রিটমেন্ট থাকতে হবে। যখন যেই রোগ, সেই রোগের চিকিৎসা করতে হবে।’
ঢাকা থেকে উত্তরের পথে সকালে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বিকেলে কালিয়াকৈরে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর তীব্রতা আরও বাড়ে। মহাসড়কের কিছু কিছু স্থানে খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও মেরামতকাজও চলছে।
ট্রাকচালক সোলায়মান হোসেন অভিযোগ করেন, সড়কে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও শৃঙ্খলার জন্য তৎপরতা ছিল না। এ জন্যও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হোসেন সরকার বলেন, বিভিন্ন স্থানে সড়ক মেরামতের কারণে যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, গতকাল কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা এলাকায় রাস্তা সংস্কারের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সামনেও চার-পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ জট দেখা যায়।
হাইওয়ে পুলিশের এলেঙ্গা ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সার্জেন্ট জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে তিনটি যান বিকল হয়। সরানোর পরও এর রেশ থাকে সারা দিন।
প্রথম আলোর দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে গোমতী সেতু থেকে চট্টগ্রামের দিকে আমিরাবাদ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এবং ঢাকার দিকে ২০ কিলোমিটারে যানজট হয়। তা রাতেও অব্যাহত ছিল। আগের দিন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে পুলিশ বলেছিল, যানবাহন বিকল হওয়ার কারণে জট হয়েছে। কিন্তু গতকাল যানবাহন বিকল না হওয়ার পরও জট কমেনি।
হানিফ পরিবহনের যাত্রী বিজিবি সদস্য ইউনুস ও জসিম উদ্দিন বিকেলে দাউদকান্দির তালতলী এলাকায় বলেন, সাড়ে চার ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার মেঘনা সেতু থেকে ঢাকার দিকে যে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়, তা শুক্রবার রাতেও অব্যাহত ছিল। দুপুরের দিকে মেঘনা সেতুর টোল প্লাজার ওজন পরিমাপ কেন্দ্রে দেখা যায়, শত শত ট্রাক-লরি দাঁড়িয়ে আছে।
টোল আদায়ে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে বলে দেরি হচ্ছে।’
ইউএনও শাহীনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের বিষয়টি প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে।
যানজটের কারণে সোনারগাঁ থেকে ঢাকার পথে চলা পরিবহনের মালিকেরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। রাজধানীর গুলিস্তান পথে চলা দোয়েল পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলজার হোসেন বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসেও যানজটের প্রতিকার হচ্ছে না। শিগগিরই সমাধান না হলে বাসমালিকেরা বাস চালানো বন্ধ করে দেবেন।
দুই ফেরিঘাটে জট
ফেরিস্বল্পতা ও নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে কিছুদিন ধরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে স্বাভাবিক যান পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ বাজার পদ্মার মোড় পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ জট দেখা যায়। এর মধ্যে যাত্রীবাহী বাস ছাড়াও কোরবানির পশুবোঝাই ট্রাক ছিল।
ট্রাকের চালক মো. শামীম বলেন, ১২টি গরু বোঝাই করে তিন ঘণ্টায় দুই কিলোমিটার এগিয়েছেন। ঘাট আরও তিন কিলোমিটার দূরে।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া ঘাটে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া যানবাহন দেড় থেকে তিন কিলোমিটার দূর পর্যন্ত আটকে থাকতে দেখা গেছে। এই পথে ১৯টি ফেরির মধ্যে ১৪টি চালু আছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাউদ্দিন বলেন, স্রোতের কারণে ফেরির যাতায়াত কমে গেছে। যানবাহনেরও চাপ বেশি। এ জন্য কিছুটা জট হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, গতকাল দুপুরে শিমুলিয়া ফেরিঘাটে প্রায় ৫০০ যানবাহনের সারি দেখা গেছে। এর মধ্যে ট্রাক ও ছোট গাড়িই বেশি ছিল।
ঘাটের সহকারী পরিচালক শাহ মো. খালিদ নেওয়াজ বলেন, স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে সময় বেশি লাগছে। এ জন্য কিছুটা জট হচ্ছে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1302616