২৫ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩৮

রোহিঙ্গা সঙ্কটে চরমপন্থা বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে

শক্তি প্রয়োগ না করার আহ্বান কফি আনানের

জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান বলেছেন, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ না করে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্কট নিরসন করতে হবে। অন্যথায় চরমপন্থার বিস্তার ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
রাখাইন রাজ্যের সঙ্কট নিরসনে গঠিত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে কফি আনান গতকাল ইয়াঙ্গুনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি গত বছর কফি আনানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিলেন। এটি আনান কমিশন হিসেবে সমধিক পরিচিত। কমিশন এর আগে দেয়া অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিল।
কফি আনান বলেন, নিজ ভূখণ্ড রক্ষার পূর্ণ অধিকার মিয়ানমারের রয়েছে। তবে অতি মাত্রায় সামরিক পদক্ষেপ রাখাইনে শান্তি আনতে পারবে না। যে পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন জনগণ দুর্ভোগ না পোহায় এবং মানবিক প্রয়োজনগুলো তারা যেন মেটাতে পারে।

জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব বলেন, রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান সম্পর্কে আমি সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অংয়ের সাথে আলোচনা করেছি। দূরবর্তী এলাকায় হওয়ায় এ অঞ্চলে পরিচালিত অভিযানে বেসামরিক জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি সামান্যই রয়েছে বলে সেনাপ্রধান মনে করেন।
আনান বলেন, সহিংসতা যাতে বেড়ে না যায় এবং আন্তঃসম্প্রদায় উত্তেজনা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকেÑ সে জন্য একটি সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। কিন্তু মানবাধিকারের প্রতি যদি শ্রদ্ধা দেখানো না হয় এবং জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে ফেলা হয়, তবে উত্তর রাখাইন চরমপন্থীদের জন্য উর্বর ভূমি হতে পারে। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার এবং তাদের বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে রোহিঙ্গাদের দাবি, তারা শতাব্দীকাল ধরে রাখাইন রাজ্যে বাস করে আসছেন এবং এখানেই তাদের উৎস নিহিত। তথাপি রোহিঙ্গারা কোণঠাসা হয়ে পড়া একটি সম্প্রদায় এবং মাঝে মধ্যেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়। কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার পর কফি আনান তিনবার রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেছেন। কমিশনের প্রধান হিসেবে গতকাল তিনি প্রতিবেদনটি সেনাপ্রধানসহ অং সান সু চির কাছে হস্তান্তর করেছেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসঙ্ঘের দেয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটিত হয়েছে, যার সম্ভাব্য লক্ষ্য তাদের ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’ করা।
এরপর জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বা সরেজমিন তদন্ত মিশন গঠন করে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার জাতিসঙ্ঘ বিশেষজ্ঞদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সু চি সরকার বলেছে, তারা আনান কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ করবে। রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি তদন্তে মিয়ানমার সরকার গঠিত অভ্যন্তরীণ তদন্ত দল চলতি মাসে জাতিঙ্ঘের প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
আনান কমিশন বলেছে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ তাদের ব্যাপকভিত্তিক ম্যান্ডেট রয়েছে। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট ঘটনা তদন্তের অধিকার তাদের দেয়া হয়নি। কমিশন শুধু বলেছে, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সরকারের উচিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
কমিশন দ্রুত ও স্বচ্ছতার সাথে নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে।
গত অক্টোবরে তিনটি চৌকিতে হামলায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৯ জন সদস্য নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাখাইনে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করে নতুন করে অভিযোগ পরিচালনার কথা জানা যায়। এর ফলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ অভিমুখী স্রোতও বাড়তে থাকে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/246886