ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের ভোগড়ায় গতকালের চিত্র।
২৪ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৬:১৪

ভোগান্তির ভয়

প্রতি ঈদে ঘরমুখো মানুষের বিভীষিকার নাম সড়কপথের ভোগান্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়, দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। আগামী ২ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। এবারও সড়কপথে ঈদ যাত্রায় তেমন কোনো সুখবর নেই। বৃষ্টিতে বেশির ভাগ মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ-গর্ত। ঈদের আগে গোঁজামিল দিয়ে সড়কের ক্ষত সারার চেষ্টা চলছে। তবে তা কতটুকু টেকসই হবে তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
এবারের ঈদ যাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের। এ মহাসড়কের অসংখ্য স্থানে খানাখন্দ-গর্ত। বর্ষণে উঠে গেছে সড়কের কার্পেটিং। রাস্তার দুই পাশের মেরামতকাজ চলায় ভোগান্তি থাকবে আরো বেশি।

মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়েই সবচেয়ে বেহাল।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা অংশ পার হতে লেগে যাবে তিন-চার ঘণ্টা। কারণ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার সড়কজুড়েই অসংখ্য গর্ত। বর্ষা সিনেমা হল, ভোগড়া চৌরাস্তা, মালেকের বাড়ি, বোর্ডবাজার, গাজীপুরা, হোসেন মার্কেট, টঙ্গীর চেরাগআলী মার্কেট, স্টেশন রোড এসব এলাকার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। তবে দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজার ওভারলোড স্কেল মেশিনের জন্য যানজটের সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। সীতাকুণ্ডে মহাসড়কে জোড়াতালির সংস্কার চলছে, তবে বৃষ্টিতে তা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মিরসরাই অংশে এবারও ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশে খানাখন্দবিহীন সড়কে স্বস্তি মিলবে ঘরমুখী মানুষের। তবে সিলেট অঞ্চলের বিকল্প সড়ক হিসেবে পরিচিত পাঁচদোনা টঙ্গী আঞ্চলিক সড়কে দুর্ভোগে পড়বে যাত্রীরা।
ঢাকা-খুলনা, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কগুলোতে খানাখন্দ ও গর্তে ভরা। এই পথে চলাচলকারী ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে রাজবাড়ী অংশে।
সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীরা বলছেন, সড়কগুলোর খানাখন্দ ও গর্ত আপাতত ইট-সুরকি ও বিটুমিন দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। তবে অতি বৃষ্টির কারণে যদি তা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কিছুই করার থাকছে না। বর্ষার পরে সড়ক মেরামত পুরোদমে শুরু হবে।

বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক : এবারের ঈদ যাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলকারী ঘরমুখো যাত্রীরা। এই সড়কের অসংখ্য স্থানে খানাখন্দ ও গর্ত। বর্ষণে উঠে গেছে সড়কের কার্পেট। রাস্তার দুই পাশে মেরামতকাজ চলায় ভোগান্তি থাকবে আরো বেশি।
মহাসড়কের কালিয়াকৈর ও চন্দ্রা অংশে চলছে খানাখন্দ মেরামত। এই কাজ শেষ না হলে ঈদ যাত্রায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। মহাসড়কের গাজীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলার বেশির ভাগ অংশে সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য খানাখন্দ ও গর্তে কখনো ইট, কখনো পিচ ঢালাই করে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। তবে হালে টানা বর্ষণে কার্পেটিং উঠে গিয়ে সমস্যা আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গতকাল পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। ঈদের ছুটি হলে এ যানজট তীব্র আকার ধারণ করবে। চন্দ্রা-ত্রিমোড় হয়ে প্রতিদিন উত্তরবঙ্গের ১১৭টি সড়কের হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এই মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়েই সবচেয়ে বেহাল অবস্থা। এ ছাড়া কোনাবাড়ী ও কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক, সফিপুর বাজার, পল্লীবিদ্যুৎ, জোড়াপাম্প, খাড়াজোড়া, গোয়ালবাথান, সাহেববাজার এলাকায় খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর এলাকায় দুটি সেতুও ঝুঁকিপূর্ণ।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের সেকশন অফিসার বশির আহম্মেদ বলেন, ‘সড়কের যেসব স্থানে পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে মেরামত করা হচ্ছে। তবে প্রচুর বৃষ্টি থাকায় মেরামত করা স্থানে আবার সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদের আগে কাজ সুষ্ঠুভাবে করা যাবে। মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবে। ’
বঙ্গবন্ধু সেতুর সংযোগ মহাসড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঈদ উপলক্ষে সেই খানাখন্দ মেরামত করা হচ্ছে। এলেঙ্গা থেকে টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, পৌলী, রসুলপুর, বিক্রমহাটী, রাবনা এলাকায় খানাখন্দ মেরামত করা হয়েছে। এলেঙ্গায় মেরামতের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্তও মেরামতকাজ করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নুর ই আলম বলেন, ‘সড়কের খানাখন্দ মেরামত করা হচ্ছে। বড় অংশগুলো মেরামত শেষ। এখন ফিনিশিং চলছে। বৃহস্পতিবার কাজ শেষ হবে। বৃষ্টির কারণে কোথাও খানাখন্দের সৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করা হবে। ’
উত্তরাঞ্চলে প্রবেশের মহাসড়ক : বগুড়ার ৮০ কিলোমিটার মহাসড়কের ২৫ কিলোমিটারই ঝুঁকিতে রয়েছে। বগুড়ার সীমানা সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে গাইবান্ধার কাছে রহবল পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটারের ২৫ কিলোমিটারেই রয়েছে এসব গুপ্তগর্ত। এই খানাখন্দ মাড়িয়ে যাত্রীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। তবে আপাতত ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মাটি বালু ও ইটের মিশ্রণ দিয়ে গর্তগুলো ভরাটের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বগুড়া সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান জানান, একটি প্রকল্প তাঁরা হাতে নিয়েছেন। বর্ষা শেষ হলে কাজ শুরু করা হবে। আপাতত ইট ও পাথর দিয়ে সংস্কার (সিল) করা হয়েছে। রংপুর, গাইবান্ধা ও বগুড়া মিলে প্রায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। বৃষ্টি কমলেই মহাসড়ক মেরামতের কাজ করা হবে।
নাটোর-ঢাকা-পাবনা এবং নাটোর-বগুড়া মহাসড়কেরও প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকার বেহাল। মহাসড়কের বিটুমিন ও পাথর উঠে গিয়ে ছোট-বড় হাজার হাজার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কার না করায় এ অবস্থার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার যানবাহন। ঈদের আগে রাস্তাটি সংস্কার সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বগুড়া ও নাটোরের সওজ বিভাগ।
নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক উত্তরাঞ্চলের প্রবেশপথ। দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনগুলো নাটোর-পাবনা মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার এলাকার দুর্ভোগ পেরিয়ে নাটোর থেকে শেরকোল এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় আবার দুর্ভোগে পড়ছে। নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, রংপুরসহ পাশের কয়েকটি জেলার যোগাযোগের এটিই একমাত্র রাস্তা। এই রাস্তারও ১৫ কিলোমিটার অংশের বেহাল।

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুঃখ দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজার ওভারলোড স্কেল মেশিন। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তবে দাউদকান্দি থেকে কুমিল্লার ময়নামতি পর্যন্ত চোখে পড়ার মতো কোনো খানাখন্দ নেই। দাউদকান্দি বিশ্বরোড, শহীদনগর, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, রায়পুর, ইলিয়টগঞ্জ, মাধাইয়া, চান্দিনা ও ময়নামতি বিশ্বরোডে মহাসড়কের ওপর যাত্রীবাহী গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে বিধায় কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জোড়াতালির সংস্কার চলছে, তবে বৃষ্টিতে তা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে পারে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। সলিমপুর সিটি গেট থেকে বড় দারোগারহাট পর্যন্ত সৃষ্টি হওয়া গর্তগুলো বিটুমিন ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারহাট এলাকায় এখনো ডিভাইডার নির্মাণের কাজ চলছে। এ কারণে এ অংশে একটি সড়কে যানবাহন চলতে গিয়ে হালকা যানজট হচ্ছে।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় দারোগারহাট বাজারে মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে ছোটখাটো গর্ত রয়েছে এখনো। এ ছাড়া টেরিয়াইল, ছোট দারোগারহাট, বটতল, পন্থিছিলা, সীতাকুণ্ড পৌর সদর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, জোড় আমতল, বারআউলিয়া, ভাটিয়ারী এলাকায় মহাসড়ক সংস্কার করা হয়েছে।
মিরসরাইয়ের বড় দারোগারহাট থেকে ধূমঘাট সেতু পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সড়কের খানাখন্দ মেরামত প্রায় শেষের দিকে। সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ মেরামতকাজ পূর্ণাঙ্গ শেষ হবে। প্রতিবারের মতো এবারও ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।

গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের ২৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২২ কিলোমিটারজুড়ে কোনো খানাখন্দ নেই। মাস্তাননগর বাইপাস থেকে চিনকি আস্তানা এলাকা পর্যন্ত চট্টগ্রামমুখী লেনের কিছু অংশে সংস্কারকাজ চলছে। এ সময় দেখা গেছে সংস্কারকাজের জন্য এ লেন বন্ধ রাখা হয়েছে। যার ফলে ঢাকামুখী লেনে উভয় দিকের যানবাহান চলাচল করছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশে খানাখন্দবিহীন সড়কে স্বস্তি মিলবে ঘরমুখো মানুষের। তবে সিলেট অঞ্চলের বিকল্প সড়ক হিসেবে পরিচিত পাঁচদোনা টঙ্গী আঞ্চলিক সড়কে চলতি বর্ষায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে এই সড়ক দিয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষ দুর্ভোগে পড়বে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর অংশ ৫২ কিলোমিটার। বর্তমানে মহাসড়কের নরসিংদীর অংশটুকুর অবস্থা ভালো। মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ বিভিন্ন স্থানে রোড ডিভাইডার তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মহাসড়কের সামগ্রিক অবস্থা ভালো থাকার কারণে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তবে পাঁচদোনা-টঙ্গী আঞ্চলিক মহাসড়কের নরসিংদীর পাঁচদোনা থেকে ঘোড়াশাল অংশে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। পাশাপাশি সড়কের বিস্তৃত অংশের ইটের চটলা উঠে গেছে। বিশেষ করে ঘোড়াশাল ময়েজ উদ্দিন সেতুর সামনের ৩৫০ মিটার অংশের অবস্থা খুবই নাজুক। ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কের বড় বড় গর্ত ভরাটে ব্যস্ত সওজের কর্মীরা। ইট-পাথরের ছোঁয়া দিয়ে সড়কটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশে কোথাও কোনো সমস্যা নেই। ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারবে। আর পাঁচদোনা-টঙ্গী আঞ্চলিক মহাসড়কটি খানাখন্দ ভরাট করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক : গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে তিন-চার ঘণ্টা। কখনো কখনো পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। এ কারণে প্রায় দুই মাস ধরে যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নতুন নাম ঢাকা-গাজীপুর সড়ক। ঢাকা থেকে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল ও ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল জেলাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের ৫৭টি রুটের যাত্রীরা যাতায়াত করে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আসন্ন ঈদে ভোগান্তির কারণ হতে পারে এই ১২ কিলোমিটার সড়ক।

গতকাল দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ১২ কিলোমিটার সড়কজুড়েই অসংখ্য গর্ত। এর মধ্যে বর্ষা সিনেমা হল, ভোগড়া চৌরাস্তা, মালেকের বাড়ি, বোর্ডবাজার, গাজীপুরা, হোসেন মার্কেট, টঙ্গীর চেরাগ আলী মার্কেট, স্টেশন রোড—এসব এলাকার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
ময়মনসিংহগামী সৌখিন পরিবহনের চালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে নালার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে নালাসহ সড়ক ডুবে যায়। তখন সড়ককে মনে হয় খাল। অনেক স্থানে নালার মধ্যে গর্ত আছে। গর্তে পড়ে অনেক সময় গাড়ি উল্টে যায়। এখন বৃষ্টি না থাকলেও গাড়ির চাপে সড়কে এবং নালায় অনেক নতুন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ১২ কিলোমিটার সড়ক যেতে লেগে যায় চার-পাঁচ ঘণ্টা।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিন রেজা জানান, ২০১৪ সালে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক বাস র্যা পিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। এ কারণে গাজীপুর সড়ক বিভাগের সড়ক মেরামতের এখতিয়ার নেই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রীর নির্দেশে তাঁরা কিছু কিছু এলাকায় মেরামত করছেন।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মহাসড়ক : ঢাকা-খুলনা, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কগুলো খানাখন্দ ও গর্তে ভরা। এ পথে চলাচলকারী ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে রাজবাড়ী অংশে। এখানকার সড়কগুলোর বেহাল। ফলে এবারও ঈদ যাত্রা সুখকর হবে না। বৃষ্টিতে সড়কের বিটুমিন উঠে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দের। ব্যস্ততম এ সড়কে যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। ঈদের আগে কোনো সুসংবাদ দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। রাজবাড়ী জেলা সদরের বসন্তপুর থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার অংশ। এ অংশের বসন্তপুর রেলগেট, গোয়ালন্দ মোড়, খানখানাপুর, মোকবুলের দোকান, গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড ও পদ্মার মোড় এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ।
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া-ফরিদপুর সড়কের জেলা সদরের গোয়ালন্দ মোড় থেকে মাদরাসা সেতু পর্যন্ত বেহাল। পাংশা উপজেলার শিয়ালডাঙ্গি পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার এবং রাজবাড়ী-জৌকুড়া পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার ও রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি সড়কের ২০ কিলোমিটার রাস্তার পিচ-খোয়া উঠে গেছে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে বড় আকারের গর্ত। এ পথে যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সড়কের গর্তের জন্য ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও।

বরিশাল, খুলনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার যানবাহনগুলো আলাদা মহাসড়ক হয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড়ে এসে এক সড়কে মিলিত হয়। এ কারণে অন্যান্য মহাসড়কের চেয়ে সড়কে যানবাহনের চাপ থাকে বেশি। অন্যদিকে ফেরিঘাটে পৌঁছে আগে ফেরির নাগাল পেতে চালকরা এক প্রকার গতির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় এ এলাকায়।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, সড়কগুলোর বেহাল কোনোভাবেই ঈদের আগে দূর করা সম্ভব নয়। অতিবৃষ্টির পাশাপাশি ভারী যানবাহন চলার কারণে সড়কগুলোর এ দশা হয়েছে। সড়কগুলোর খানাখন্দ ভরাট এবং উঁচু-নিচু স্থান সমতল করতে গত ছয় মাসে তিন লাখ ইট, ৪০০ ড্রাম বিটুমিনের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট : রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২০টি জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে ফেরি ও লঞ্চ পারাপার। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে যানজট পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। গতকাল দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় থাকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের শত শত গাড়ি। মাত্র তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ওই নৌপথ পাড়ি দিতে গিয়ে গাড়িগুলো সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে থাকছে। প্রতিবারের মতো এবার ঈদেও সেখানে যাত্রী ও গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তাই এ নৌপথে এবারের ঈদ যাত্রা ঘিরে জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/08/24/535481