২২ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:১৭

বোরোর পর আমনেও বন্যার ধাক্কা

বোরোর পর এবার আমন ও আউশে বন্যার বড় ধাক্কা লেগেছে। বোরোতে শুধু হাওরের ফসল ডুবে নষ্ট হয়েছিল। আর এবার দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে মাঠের ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানের সঙ্গে ডুবেছে সবজিও। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ৪০ জেলায় ৬ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এবার প্রতি হেক্টর জমিতে সাড়ে তিন টন চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করা হয়েছিল। সেই হিসাবে তলিয়ে যাওয়া জমিতে অন্তত ২৩ লাখ টন চাল হওয়ার কথা ছিল। এর অর্ধেক ধানও নষ্ট হলে এবার আমন ও আউশে কমপক্ষে ১০ লাখ টন চাল পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বোরো মৌসুমে হাওরে ১০ লাখ টন চাল কম হয়েছিল। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে তা ২০ লাখ টন এবং চালকল মালিক সমিতির হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৪০ লাখ টন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে গেলেই তাঁদের বিনা মূল্যে বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহায়তা দেওয়া হবে। হাওরের ৬ লাখ কৃষকের তালিকা করা হয়েছে। খুব দ্রুত তাঁদের হাতে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া হবে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বোরো ও আমন-আউশ মিলিয়ে এবার দেশে ধানের বড় ধরনের ঘাটতি হবে। এই ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার এ পর্যন্ত চারটি দেশের সঙ্গে চাল আমদানির সমঝোতা স্মারক ও আমদানি চুক্তি করলেও এখন পর্যন্ত খুব সামান্য পরিমাণে চাল এসেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত সোমবারের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৪৬ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে ২ লাখ ৬২ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। আর সরকারি চালের মজুত বর্তমানে ২ লাখ ৯৫ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে মজুত ছিল প্রায় ৭ লাখ টন। সরকারি গুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ১৭ লাখ টন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বিশেষ ফেলো বা গবেষক এম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বোরো ও আমন মিলিয়ে মোট চাল উৎপাদনের ১০ শতাংশ এবার কম উৎপাদন হতে পারে। ফলে চালের দাম আরও বেড়ে গরিব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই সরকারের উচিত বেসরকারি খাতে আমদানি হওয়া চাল আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক মুনাফা দিয়ে কিনে নেওয়া এবং জরুরি ভিত্তিতে মজুত বাড়ানো।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিধারণ ও মূল্যায়ন ইউনিটের হিসাব বলছে, এবারের আমন ও আউশে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৫৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে আউশ ও আমনের চাষ
লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছিল। কিন্তু ৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যায় প্রথমে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম এবং পর্যায়ক্রমে ৪০টি জেলার ফসল তলিয়ে গেছে।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আলোকসংবেদনশীল নাবি জাতের আমন চারা রোপণ করা যাবে। ফলে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষক যাতে পর্যাপ্ত বীজ পান, সে জন্য দেশের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ৭২০টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষক পর্যায়ে ১ হাজার বীজতলা তৈরিতেও তারা সহযোগিতা দিয়েছে। ফলে বন্যার পরও অনেক এলাকার কৃষকেরা চাইলে সেখানে ওই চারা রোপণ করে আমন ও আউশের চাষ করতে পারবেন।
১৯৯৮ সালে বন্যার সময় সরকারের কৃষিসচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন এ এম এম শওকত আলী। চলমান বন্যায় কৃষির ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, নাবি জাতের বীজ পাওয়া যায় কম এবং ফলনও কম হয়। তাই সরকারকে দ্রুত খাদ্য এনে ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে। আর কৃষককে সহায়তা দিতে আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
১০ দিনে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি
মারা গেছে ১২১ জন
নিখোঁজ ৫ জন
৬,৫২,০০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি
সড়কের ক্ষতি ৪০৩ কিমি
২৬৮ সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত
বাঁধ (আংশিক) ভেঙে গেছে ৯৬টি
তথ্যসূত্র: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ২১ আগস্ট, ২০১৭

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1298426/