১৬ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ৩:৩৬

লাগামহীন পেঁয়াজের দাম

আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩২-৩৫ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬-২০ টাকা

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলের বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে নিত্যপণ্যটির দাম। কোরবানির ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম এক লাফে দ্বিগুণ হওয়ায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের রফতানিমূল্য প্রায় দ্বিগুণ করেছে ভারত।


সরেজমিন সোমবার দিনাজপুর শহরের প্রধান কাঁচাবাজার বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটে দেখা যায়, ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৫ টাকা কেজি দরে। আর দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা। বিক্রেতারা জানান, এক সপ্তাহ আগে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হতো ১৬-২০ টাকা কেজি দরে। আর দেশি পেঁয়াজ ২৮-৩০ টাকা।

হঠাৎ দাম দ্বিগুণ বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতারা জানান, আড়তদাররা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করায় বাধ্য হয়েই তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

হিলি বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মামুনুর রশিদ লেবু যুগান্তরকে জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে তাদের খরচ হয়েছে টনপ্রতি ১৫০ মার্কিন ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় ১২ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে)। কিন্তু গত ৭ আগস্ট ভারত এই দাম বৃদ্ধি করে টনপ্রতি পেঁয়াজের রফতানিমূল্য নির্ধারণ করে ২৫০ ডলার বা ২০ হাজার টাকা। এখানেই শেষ নয়। পেঁয়াজের রফতানিমূল্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। বুধবার ভারতীয় রফতানিকারকরা টনপ্রতি পেঁয়াজের মূল্য ৩০০ ডলার বা ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। তিনি জানান, গত ৭ আগস্ট তিনি প্রতি টন ২৫০ ডলার মূল্যে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলেন। কিন্তু সেই দামে এখন পেঁয়াজ দিতে পারছেন না ভারতীয় রফতানিকারকরা। বাধ্য হয়েই বুধবার সেই এলসি সংশোধন করে এলসিমূল্য ৩০০ ডলারে বৃদ্ধি করতে হয়েছে। ভারত রফতানিমূল্য আরও বৃদ্ধি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন হিলি বন্দরের এই আমদানিকারক। ভারতীয় পেঁয়াজ রফতানিকারক অজয় কুণ্ডুকে উদ্ধৃত করে হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব শাহীনুর ইসলাম শাহীন জানান, ভারতে বন্যা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে। সে কারণেই বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ দিতে পারছে না ভারত। তিনি জানান, আগে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ৮০-১০০ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করত। এখন তা নেমে এসেছে ২০-৩০ ট্রাকে।

হিলি ল্যান্ড কাস্টমসের উপকমিশনার মো. ফকরুল আমীন চৌধুরী ভারত পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বৃদ্ধি করার কথা স্বীকার করে জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কিছুটা কমেছে।

বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মমজাজ আলী জানান, ভারত হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছে। তাই আমদানিকারকদের কাছ থেকে বেশি দামে তাদের পেঁয়াজ ক্রয় করতে হচ্ছে। কোরবানির আগে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে বাহাদুরবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতা মজিবর রহমান জানান, এক সপ্তাহ আগে তিনি পেঁয়াজ কিনেছেন ১৬-২০ টাকা কেজি দরে। সেই পেঁয়াজই এখন তাকে কিনতে হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। হঠাৎ দ্বিগুণ দামে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। যদিও এখন প্রয়োজনের তুলনায় কম পেঁয়াজ কিনছেন তিনি। কিন্তু কোরবানির সময় তো আর কম কিনলে চলবে না। তিনি জানান, কোরবানির প্রধান মসলা জাতীয় এ পণ্যের দাম হঠাৎ দ্বিগুণ হওয়ায় এবার ঈদে তাদের বেশ সমস্যায় পড়তে হবে।

 

http://www.jugantor.com/industry-trade/2017/08/16/148444/