ঢামেক হাসপাতাল মর্গের ফ্রিজ নষ্ট থাকায় লাশ বাইরে ফেলে রাখা হয়েছে। রোববারের ছবি -যুগান্তর
৭ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ১১:২৯

ঢামেক হাসপাতাল মর্গের করুণ দশা

পাঁচ ফ্রিজের ৪টিই বিকল

মেঝেতে রাখা হয়েছে ৪ জঙ্গিসহ বেশ কয়েকজনের লাশ * পচেগলে নষ্ট হচ্ছে আলামত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের ৫টি ফ্রিজের চারটিই বিকল। এ কারণে সচল ফ্রিজে পাঁচটি মৃতদেহ রেখে বাকিগুলো রাখা হয়েছে মর্গের মেঝেতে। ফলে পচেগলে মরদেহের আলামত নষ্ট হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গসহ অন্যান্য মর্গের ফ্রিজ ও এসি মেরামত বা বদলে ফেলতে ২৪ জুলাই হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়।


রোববার ঢামেক মর্গে গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমের মেঝেতে রাখা আছে ১০টি লাশ। এর মধ্যে ট্রুলিতে রাখা আছে ৩টি, সচল ফ্রিজটির পাশে রাখা আছে একটি। মর্গের আরেকটি রুমের মেঝেতে রাখা আছে ৪ জঙ্গির লাশ। মর্গ সূত্র জানায়, উত্তরার আশকোনায় এবং বিমানবন্দর গোলচত্বরে নিহত আত্মঘাতী দুই জঙ্গি, রূপনগরে নিহত এক এবং খিলগাঁওয়ে নিহত ১ জঙ্গির লাশ এগুলো। তারা জানান, ফ্রিজ বিকল হওয়ায় লাশ মেঝেতে না রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের ইনচার্জ সেকান্দর যুগান্তরকে বলেন, একটি ফ্রিজ সচল রয়েছে। এতে দু’জন ভারতীয় নাগরিক, একজন নাইজেরিয়ান নাগরিক, একজন সাউথ আফ্রিকান নাগরিকের লাশ এবং হিন্দু-মুসলিম দুই স্ত্রীর দ্বন্দ্বে আদালতের নির্দেশে রাখা খোকন নন্দী ওরফে খোকা বাবুর লাশ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি ফ্রিজে ৪টি লাশ রাখার নিয়ম থাকলেও আমরা ৫টি লাশ রেখেছি বাধ্য হয়ে।

জানা গেছে, মর্গের চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি নষ্ট প্রায় এক বছর ধরে। আর তিনটি ফ্রিজ তিন-চার মাস ধরে বিকল। আর দুটি ফ্রিজের মধ্যে একটি ফ্রিজ রোববার বিকল হয়ে পড়ে। ঢামেকের এই মর্গে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। রাজধানীর অধিকাংশ থানা ছাড়াও গাজীপুর, সাভার ও অন্যান্য এলাকা থেকে হত্যা, আত্মহত্যা, বিষপান, ধর্ষণ, সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিদগ্ধ ও বহুতল ভবন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। এ মর্গে প্রতিদিন গড়ে দুটি আবার কোনো সময় চার থেকে পাঁচটি অজ্ঞাত লাশ আসে। এসব লাশ সংরক্ষণ করতে হয় ফ্রিজে। ফ্রিজ বিকল থাকায় বেওয়ারিশ লাশগুলো কোনোভাবেই সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জানতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। অবশ্য এর আগে ডাক্তার সোহেল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেছিলেন,

লাশ নিয়মমতো সংরক্ষণ না করা হলে পচেগলে আলামত নষ্ট হয়। বেওয়ারিশ লাশসহ মর্গের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে আমরা রীতিমতো বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি।

জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তিনটি ফ্রিজ বিকল ছিল। তা মেরামত করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছিলাম। তারা ফ্রিজগুলো দেখে মেরামতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এরপর আমরা ফ্রিজ মেরামতের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছি। এখন দরপত্রে সাড়া দিয়ে কেউ এগিয়ে এলে আমরা তাদের দিয়ে ফ্রিজগুলো মেরামত করিয়ে নেব।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/08/07/145965/