৫ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ১২:০৩

লবণ আমদানি নিয়ে ভুুয়াদের সিন্ডিকেট

সরকারের লবণ আমদানির সিদ্ধান্তের সুযোগে কেবল কাগজ-কলম সর্বস্ব অস্তিত্বহীন লবণ মিলের নামে লবণ আমদানির অনুমতি পেতে উঠেপড়ে লেগেছেন ভুয়া লবণ মিল মালিকেরা। ইতোমধ্যে ‘পারমিট’ নিশ্চিত করতে বিসিকের কক্সবাজার ও ঢাকা অফিসের কয়েক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কোনো ধরনের লবণ উৎপাদনে নেই, বছরের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে এমনকি বিসিকের তালিকায় নেই আবেদনের শেষ দিনে এমন মিলের নামেও আবেদন জমা পড়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এতে প্রকৃত মিলাররা হতাশ।

কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির দেয়া তথ্যে ভুয়া লবণ মিল তালিকায় রয়েছে মহেশখালীর আলিফ সল্ট, আল মোস্তফা সল্ট, সাগরিকা সল্ট, নিউ বিসমিল্লাহ সল্ট, মাহমুদা চূর্ণবিচূর্ণ কারখানা, ওয়াজেদিয়া সল্ট, নূর সল্ট, কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরে ন্যাশনাল আয়োডাইজ সল্ট, রাইসা সল্ট, মাজেদা সল্ট, শাহ মজিদিয়া সল্ট, পপুলার সল্ট, গোমাতলীতে সাগর সল্ট, চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারায় চৌধুরী সল্ট।

সরকারি সুবিধা নিতে ইসলাম এন্ড ব্রাদার্স, কক্সবাজার সল্ট, আমানত সল্ট, এফ আলম সল্ট, গ্রামীণ সল্ট, এম এম সল্ট মাঝে মধ্যে চালু করা হলেও বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। বিসিকের এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে আলিফ সল্টের নামে গতবারও লবণ আমদানি করা হয়েছিল।

অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর এক ব্যক্তি ও শিল্প মন্ত্রণালয়েরর এক যুগ্মসচিব বিসিককে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব পছন্দের ৩০-৪০ মিল নিয়ে সিন্ডিকেট করেছেন। পারমিট নিশ্চিত করতে প্রতি মিল থেকে তারা নিয়েছেন ন্যূনতম দেড় লাখ টাকা।

প্রকৃত মিল মালিকদের অভিযোগÑ ভুয়া লবণ মিল মালিকদের প্রত্যয়ন ও ফাইল প্রসেসিং কাজে বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো: আবছার উদ্দিন ও মনিটরিং অফিসার নিতাই চন্দ্র রায় সরাসরি জড়িত রয়েছেন। তারা অস্তিত্বহীন মিলের নামে আনুষঙ্গিক ডকুমেন্ট তৈরি করে দিয়েছেন।

অন্য একটি সূত্রের দাবি, বিসিককে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে লবণ আমদানির আবেদন ফাইল সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা করেছেন অস্তিত্বহীন লবণ মিল মালিকেরা।

কক্সবাজার লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি সামশুল আলম আজাদ বলেন, আমরা শুনেছি অস্তিত্বহীন কিছু লবণ মিলের নামে ফাইল জমা পড়েছে। কারা এ জালিয়াতির সাথে জড়িত তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার; তা না হলে প্রকৃত মিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

প্রকৃত লবণ মিলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো: আবছার উদ্দিন বলেন, ‘আমার অফিসে কোনো তালিকা নেই। এ বিষয়ে কিছুই জানি না। মনিটরিং অফিসার নিতাই চন্দ্র রায় জানবেন। সম্ভবত তার মাধ্যমে সব করা হয়েছে।’

বিসিক কক্সবাজারের একজন সর্বোচ্চ কর্তা হয়ে কেন কিছুই জানেন নাÑ জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

সূত্র জানায়, দেশে লবণের সরবরাহ ও বাজার স্বাভাবিক রাখতে গত জুনে শিল্প মন্ত্রণালয়ে খাত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিন লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে পাঁচ লাখ টন লবণ আমদানির।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরে দেশে লবণের চাহিদা ১৫ দশমিক ৭৬ লাখ টন। এর বিপরীতে গত জুনে শেষ হওয়া মওসুমে উৎপাদন হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ লাখ টন। এ হিসাবে চাহিদার চেয়ে লবণের ঘাটতি আছে দুই লাখ ১২ হাজার টন। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী (আংশিক) অঞ্চলের ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়।

কক্সবাজার সদরের বিসিক শিল্পনগরী ইসলামপুরকেন্দ্রিক ৩৫টিসহ জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০টি লবণ কারখানা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/241592