সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত খালেদ আহমদ লিটু
১৮ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৩৫

বিয়ানীবাজার কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ ॥ দলীয় কর্মীকে গুলী করে হত্যা

সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দু‘গ্রুপের উত্তেজনার পর এক কর্মী খুন হয়েছে। এ খুনের ঘটনা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটু (২৫) ছাত্রলীগের পাভেল গ্রুপের কর্মী। বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ বলছে, গতকাল সোমবার সকালে কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর নিহত লিটুসহ ছাত্রলীগের পাবেল গ্রুপের কর্মীরা কলেজের একাডেমিক ভবনের ইংরেজি বিভাগের একটি কক্ষে অবস্থান নেন। হঠাৎ কক্ষে গুলীর শব্দ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লিটুকে মাথায় গুলীবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে বিয়ানীবাজার সরকারি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় পুলিশ কলেজের মূল গেইটে অবস্থান করছিলো। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ভেতর এ ঘটনা ঘটে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ঘটনার সময় কোন ধরনের উত্তেজনা ছিলো না। কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলার সময় একটি কক্ষে গুলীর শব্দ শুনা যায়। পরে পুলিশ এসে লিটুর লাশ উদ্ধার করে। তবে সকালে ছাত্রলীগের পাবেল গ্রুপ ও পল্লব গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার বিষয়টি পুলিশ ও ছাত্রলীগের উভয় গ্রুপের নেতারা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ লিটুর সঙ্গে থাকা ৩ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ২২ জুলাই পর্যন্ত কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছেন।

পুলিশ জানায়, লিটুর ডান চোখের উপরে গুলীর আঘাত লেগে মাথার পেছন থেকে বেরিয়ে যায়। এ সময় কক্ষে অন্য কাউকে পায়নি পুলিশ। এমনকি কক্ষে কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়নি। নিহত লিটু পৌরশহরের নয়াগ্রাম রোডে একটি মোবাইল দোকানের মালিক। সে পৌরসভার পন্ডিতপাড়া গ্রামের হাজী ফয়জুর রহমানের পুত্র। সে কলেজে শিক্ষার্থী নয় বলে নিশ্চিত করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ।
পুলিশ-ছাত্রলীগ ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকে ছাত্রলীগ পাবেল গ্রুপের এককর্মীর সাথে ছাত্রলীগ পল্লব গ্রুপের এক কর্মীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং দুই পক্ষের সাথে কথা বলে পরিস্থিত শান্ত করে। এর পরপরই পাবেল গ্রুপের কর্মীরা কলেজের ঔ কক্ষে অবস্থান নেন এবং দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিটু খুনের ঘটনা ঘটে। বিয়ানীবাজার থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, সকালে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের ভিতরে উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং কলেজের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এর ৪০ মিনিট পরে গুলীর শব্দ হয়। ওসি বলেন, কি কারনে বহিরাগতরা কলেজের ভেতরে অবস্থান নিল ও খুনের ঘটনা ঘটল তার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র এবং খুনিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ জানান, কি কারনে হত্যাকান্ড তারা নিশ্চিত নন। নিহত লিটু কলেজের শিক্ষার্থীও নয়। কিভাবে একজন বহিরাগত ছাত্র কলেজে ঢুকলো বা কক্ষে কাদের সাথে ছিলো এটি রহস্য বলে দাবি করেন তিনি। এই রহস্য উদঘাটনে কলেজের পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করা হবে বলে জানান তিনি। উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় কলেজের সকল কার্যক্রম আগামী ২২জুলাই পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ঘটনার কারণ ও হত্যাকারীদের আইনের আওতায় নেয়ার দাবি জানান।
বিয়ানীবাজার উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবকে ছাত্ররীগ নেতা আবুল কাশেম পল্লব বলেন, অস্ত্র নিয়ে নিজের মধ্যে টানাটানির জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ ক্যাম্পোসের মূল গেইটের সামনে উপস্থিত থাকার পরও এমন ঘটনা কেমনে ঘটে তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, পাবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। লিটু খুনের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে ছাত্ররীগের পাবেলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের গুলীতে ছাত্রলীগ কর্মী লিটু খুন হয়েছেন। যারাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক না কেন জড়িতদের দ্রুত বিচার ও গ্রেফতার দাবি করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুনেছি ঘটনার সময় পুলিশ ক্যাম্পাসের মূল গেইটে দায়িত্ব পালন করছিলো। পুলিশের উপস্থিতিতে এমন ঘটনা কেমন করে হয় এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সামাদ বলেন, পুরো বিষয় রহস্যে ঘেরা। প্রশাসনের কাছে তিনি আহ্বান জানান, অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে রহস্যে উদঘাটনের জন্য।

 

http://www.dailysangram.com/post/292148-