বগুড়ায় তুফানের নির্মাণাধীন আলিশান বাড়ি; ইনসেটে তুফান ও তার ভাই মতিন :নয়া দিগন্ত
৩ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৬

দল ও প্রশাসনের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া তুফান ও মতিন সরকার

বগুড়ায় বর্বরোচিত নারী নির্যাতনের মূল হোতা শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকার ও তার প্রধান আশ্রয়দাতা বড় ভাই মতিন সরকারের সাথে স্থানীয় প্রশাসন, নিজ দল আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ে ছিল গভীর সখ্যতা। তাই তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন। এলাকাবাসী ও অন্য লোকজন তাদের ভয়ে তটস্ত খাকত। তাদের পরিবার সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সবকিছু জেনেও কখনো তাদের গায়ে হাত দিতো না। এ কারণে তারা ছিলেন বেপরোয়া। অপর দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ নেতারা তাদের অবৈধ আয়ের বড় অংশ পেয়ে কখনো তাদের মতের বাইরে যেতেন না। দলের উচ্চপর্যায়ে তাদের অবাধ বিচরণের ফলে দলের নেতাকর্মীরাও মুখ ফুটে কখনো কিছু বলার সাহস পেতেন না।
বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুরের বাসিন্দা কসাই মজিবরের একসময় দিন চলত না। বাবার সাথে ছেলেরা কসাই (গরু কাটা) ও চামড়ার দোকানে কাজ করতেন। সেই মজিবরের সাত ছেলের সবাই এখন অঢেল সম্পদের মালিক। তারা এখন এলাকার শুধু নয় দেশের মধ্যেও নামকরা সম্পদশালী।
তুফানের বড় ভাই মতিন সরকার শেখ হাসিনার বিগত (১৯৯৬Ñ২০০১) শাসনামলে বগুড়া জেলা যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান জেলা যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক মনজুরুল আলম মোহনের শিষ্য হিসেবে যুবলীগে যোগ দেন। এরপর ক্ষমতার দাপটে তিনি এলাকায় মাদক কারবার, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় মতিন পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর তারা পর্দার অন্তরালে চলে যান। কিন্তু ২০০৯ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তারা আবারো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এবার মতিন সরকার তার ছোট ভাই তুফান সরকারকে লাইম লাইটে নিয়ে আসে। জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শামছুদ্দিন শেখ হেলালের মাধ্যমে তুফান পেয়ে যান শহর শ্রমিকলীগের যুগ্মআহ্বায়কের পদ। কিন্তু বেশি দিন না যেতেই তিনি আহ্বায়কের পদ দখল করেন। এরপর ক্ষমতার দাপটে এমন কোনো অপকর্ম নেই যার সাথে তুফান জড়িত হননি। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত হত্যা, হত্যা চেষ্টা,মাদক কারবার, কিশোরী ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ ছয়টি মামলা হয়েছে। তিনি নিজের ক্যাডারবাহিনী দিয়ে শহর জুড়ে অপরাধ সংঘটিত করেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে পুলিশের কোনো অ্যাকশন ছিল না। কারণ ক্ষমতার দাপট এবং কাঁচা পয়সা দিয়ে সব ঠাণ্ডা করে দেয়া হতো বলে লোকমুখে প্রচার রয়েছে। বগুড়ায় যেন তাদের দু’ভাইয়ের সরকার কায়েম হয়েছিল।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/240955