২ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১০:১৮

তুফানের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বগুড়ায়

ভালো কলেজে ভর্তির টোপ দিয়ে সুন্দরী কিশোরীকে ধর্ষণের পর মা ও মেয়ের মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে বগুড়া। মূলহোতা শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকার ও পরিবারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বগুড়া জেলায়। মামলার এজাহারভুক্ত একজন ছাড়া সবাইকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও শান্ত হচ্ছেনা পরিস্থিতি। ক্রমেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে। প্রতিদিনই হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ নেমে আসছে রাস্তায়। দাবি জানাচ্ছে তুফান সরকারের নেপথ্যের গডফাদারদের বিচারের।
ধর্ষক শ্রমিকলীগ নেতা তুফান ও তার পরিবারের অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষ গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের জিরোপয়েন্ট সতমাথায় জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে শত শত মানুষ মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ধর্ষক ও তার সহযোগীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানায়। একই সাথে তুফান সরকারের গডফাদারদের খুঁজে বের করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ। একই দাবিতে জেলার শেরপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন।
এদিকে, ধর্ষক শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারসহ গ্রেফতারকৃত সকল আসামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল সকালে দলীয় অফিসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জেলা বিএনপি। জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে।তবে, পুলিশী বাধার কারণে তারা সমাবেশে মাইক ব্যবহার করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।
ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
বগুড়া শহর শ্রমিকলীগের সভাপতি তুফান সরকার কর্তৃক কিশোরীকে ধর্ষণ ও মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় যখন গোটা দেশ তোলপাড় ঠিক সেই সময়ে জেলার ধুনট উপজেলায় মাতাল অবস্থায় বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় যুবলীগ নেতা শাহ আলী (৩০)। স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। বর্তমানে সে জেলহাজতে রয়েছে। শাহ আলী উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং পৌরশহরের পূর্ব ভরনশাহী গ্রামের ইমান আলীর ছেলে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে যুবলীগ নেতা শাহ আলীসহ কয়েকজন যুবক ধুনট শহরের সোনামুখী সড়কের পূর্বপাশে একটি বাসার অদূরে সরকারি অফিসের সামনে বসে মাদকদ্রব্য সেবন করে। সেখানে অতিরিক্ত মাদক দ্রব্য সেবনের ফলে বেসামাল হয়ে পড়ে শাহ আলী। এরপর সীমানা প্রাচীর টপকে বাসার ভেতর প্রবেশ করে মাতলামি শুরু করে। একপর্যায়ে শাহ আলী ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় গৃহবধূর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে শাহ আলীকে আটক করে থানায় খবর দেয়। রাতেই পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
ধুনট থানার ওসি মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাতে বাসায় ঢুকে অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগে মাদকাসক্ত অবস্থায় শাহ আলীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না পেয়ে মাদকদ্রব্য সেবনের দায়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে, মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ধর্ষিতা তরুণীকে ঘিরে চলছে ফটোশেসনের মহড়া
বগুড়ায় ধর্ষিতা তরুণীকে নিয়ে চলছে ফটোশেসনের মহড়া। অসহায় মেয়ে ও মায়ের সাথে ছবি তুলে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেদারছে প্রচার করছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা।
ধর্ষণের শিকার কোনো নারীর ছবি গণমাধ্যম কখনো প্রকাশ করেনা। বলা হয় এটা সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। কিন্তু বগুড়ায় শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারের লালসার শিকার হয়ে তার বউ-শ্যালীকার পৈশাচিকতায় মাথার চুল হারানো মেয়ে ও মায়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গর্বের সাথে প্রচার করছেন নেতা-নেত্রীরা। প্রথম অবস্থায় কিছু গণমাধ্যমও অতিউৎসাহ নিয়ে ছবি প্রকার করেছে। যদিও পরবর্তীতে তারা আর ভুল করেনি। কিন্তু রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা বসে নেই। রাজপথে দাঁড়িয়ে ধর্ষকদের বিচারের দাবি জানানোর পরিবর্তে তারা হাসপাতালে গিয়ে ভিকটমের সাথে ছবি তুলে প্রচারেই বেশি মনযোগী হয়েছেন।
ধর্ষিতার সাথে হাসপাতালে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সাক্ষাতের পর শুরু হয়েছে লম্বা লাইন। যেখানে চিকিৎসক বলছেন ধর্ষিতা মেয়েটি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা হাসপাতালে গিয়ে তার সাথে কথা বলা এবং ছবি তোলা কতোটা অমানবিক সেটা কেউ ভাবছেনা। এমনকি আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও কাউকে বাধা দেয়া হচ্ছেনা। ফলে অসহায় ধর্ষিতা ও তার মা এখন অনেকটাই খেলনার পাত্র হয়ে উঠেছেন! যার যখন ইচ্ছা হাসপাতালে গিয়ে তাদের সাথে ফটোশেসন করছেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে নিজেকে মানবতাবাদী হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছেন।
গত কয়েকদিনের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যারা রাজপথে দাঁড়িয়ে ধর্ষকদের বিচার দাবি করছেন তারা কেউ হাসপাতালে গিয়ে ফটোশেসন করেননি। অন্যদিকে, যারা হাসপাতালে ছুটে গিয়ে শান্তনা দেয়ার নাম করে ফটোশেসন করছেন তাদেরকে রাজপথে প্রতিবাদমুখর হতে দেখা যায়নি।
বগুড়ায় অসংখ্য নারীবাদী সংগঠন রয়েছে যারা বিভিন্ন সময়ে নারীর অধিকার নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। সাতমাথায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন। অথচ কিশোরী ধর্ষণ ও মাথা ন্যাড়া করার মত জঘন্য ঘটনায় সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেও সেইসব নারী সংগঠনগুলো এখনো নিরব। যারা কথায় কথায় নারীর অধিকার নিয়ে গলাবাজি করেন সেইসব এনজিও নেত্রীরাও ঘরের কোণায় লুকিয়ে তামাশা দেখছেন। বগুড়ার রাজপথে প্রকাশ্যে এসব নারী সংগঠনের কর্তাদের সমালোচনা হচ্ছে। তাদের নিরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। তবুও তারা নিজেদের লুকিয়ে রেখেছেন পর্দার আড়ালে। ফলে তাদের নারী অধিকার আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

 

http://www.dailysangram.com/post/294314-