২ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১০:১৩

সস্তা বাজারের খোঁজে সরকার

খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কম্বোডিয়ায় * খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক ৯ আগস্ট * ভিয়েতনাম থেকে আরও আড়াই লাখ টন চাল কেনার চিন্তা

চালের সরকারি মজুদ প্রায় তলানিতে। গত বছরের এ সময় ৫ লাখ ৮২ হাজার টন মজুদ থাকলেও এবার রয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার টন চাল। আমদানির মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য রফতানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার। আর এ খবর জানতে পেরে চালের দাম টনপ্রতি ১০০ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত ও থাইল্যান্ড।


বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চালের দাম মনমতো না হওয়ায় বাজার যাচাই করতে সোমবার রাতে কম্বোডিয়ায় গেছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সেখানকার দরদাম বনিবনা না হলে এই দলটিই মিয়ানমার যেতে পারে। পাশাপাশি ভিয়েতনাম থেকে আরও আড়াই লাখ টন চাল আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজার ও আন্তর্জাতিক দরপত্রে কাক্সিক্ষত সাড়া না মেলায় জিটুজি পদ্ধতিতে চাল আমদানির দিকে ঝুঁকছে সরকার। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়েছে জানিয়ে খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কম্বোডিয়ায় গেছেন। সেখানকার অবস্থা জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী ৯ আগস্ট খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানে অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা থাকবেন। মূলত সেখানেই চালের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যা, ব্লাস্টরোগের কারণে সারা দেশে বোরোর ফলন কম হওয়া এবং ১০ টাকা কেজিদরের সাড়ে ৭ লাখ টন চাল বিতরণের ফলে এবার চালের মজুদ তলানিতে ঠেকেছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মজুদ মাত্র দেড় লাখ টনে নেমে আসে। আর এর সুযোগ নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাদের কারসাজিতে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৫০ টাকায় ওঠে। চালের এই ঘাটতি পূরণ ও দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরে মোট সাড়ে ১২ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এজন্য প্রথমেই বেছে নেয়া হয় ভিয়েতনামকে। জিটুজি পদ্ধতিতে ইতিমধ্যে সেখান থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। দুই লাখ টন আতপ চাল টনপ্রতি ৪৩০ এবং ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল ৪৭০ ডলার করে আমদানি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে চার দফায় এক লাখ ৭ হাজার টন চাল ভিয়েতনাম থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি চালও আসবে।

এরপরই ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে চাল আমদানির বিষয়ে কথা বলে সরকার। থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানির জন্য স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সে দেশে যান। কিন্তু হতাশ করে দেশ দুটি। বাংলাদেশে চালের সংকটের সুযোগ বুঝে তারা প্রতি টন চালের রফতানিমূল্য ১০০ ডলার বেশি দাবি করে। কয়েক মাস ধরে তারা ৩৮০-৪০০ ডলারে বিভিন্ন দেশে চাল রফতানি করলেও বাংলাদেশের কাছে দাবি করছে ৫০০ ডলার করে। বাংলাদেশ ৪৫৫ ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি হলেও মন গলেনি দেশ দুটির।

এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান রোববার যুগান্তরকে বলেন, সুযোগ বুঝে ভারত ও থাইল্যান্ড চালের দাম বেশি হাঁকছে। থাইল্যান্ড থেকে ২ লাখ টনের মতো চাল আমদানির উদ্যোগ ছিল। কিন্তু দাম বনিবনা না হওয়ায় আমরা কম্বোডিয়া যাচ্ছি। আশা করছি সেখানে আমাদের কাক্সিক্ষত দামে চাল পাব। ওদিকে সরাসরি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমেও চাল কেনার প্রক্রিয়ায়ও মিলছে না কাক্সিক্ষত সাড়া। এপ্রিলেই ৬টি দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ টন চাল কেনার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখন পর্যন্ত এক কেজি চালও গুদামে ওঠেনি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, এসব চালের দুটি চালান আগামী সপ্তাহে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে ভিড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ উৎস বা চালকলের মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহের চিত্র আরও হতাশাজনক। ১০ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খাদ্য অধিদফতর গত দুই মাসে মাত্র এক লাখ ৫৬ হাজার টন ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে। যদিও চালকল মালিকদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টন। এজন্য অবশ্য সময় আছে আরও এক মাস। তবে এ সময়ের মধ্যে বাকি চাল সংগ্রহ হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী যুগান্তরকে বলেন, ক্ষতি হলেও ব্যবসার খাতিরে চুক্তি অনুযায়ী মিলাররা সরকারকে চাল দেবে। তবে সরকার যে পরিমাণে সংগ্রহ করতে চায় তা অর্জন করা সম্ভব কিনা তা বলা দুরূহ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য অধিদফতরের একজন পদস্থ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো মূল্যে সরকার চালের মজুদ বাড়াতে চায়। বোরো সংগ্রহ কাক্সিক্ষত মাত্রায় না হওয়ায় দরদাম যাই হোক, চাল আমদানি করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে কম্বোডিয়ায় কাক্সিক্ষত দামে চাল না পাওয়া গেলে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে চাল কেনা হবে। সেখান থেকে তুলনামূলক কম দামে তিন লাখ টন চাল আনার বিষয়ে কথাবার্তা কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। প্রয়োজনে পাকিস্তানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে। পাশাপাশি একই দামে ভিয়েতনাম থেকে আরও আড়াই থেকে তিন লাখ টন চাল আমদানি করার বিষয়েও যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, সাধারণত ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া বিভিন্ন দেশে চাল রফতানি করে থাকে।

 

http://www.jugantor.com/last-page/2017/08/02/144665/