১ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:১৭

ভাঙছে বেড়িবাঁধ : কোনো চেষ্টাই কাজে আসছে না

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে উপক‚লীয় অঞ্চল : ৩ কোটি মানুষের টিকে থাকার অবলম্বনই এখন ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে : ১২ বার ভাঙনে চৌহালীতে ১০৯ কোটি টাকার বাঁধ কাজে আসেনি

ইনকিলাব ডেস্ক : ভাঙন আর ভাঙন। চারিদিকে এখন শোনা যাচ্ছে শুধু নদীভাঙনের শিকার মানুষের আহাজারি। বন্যার পানি নামার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে ভাঙন। ভেঙে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ, সাজানো গোছানো ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ। এর ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী মানুষ। একাধিক বার বাড়ি সরিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না ভাঙন কবলিত মানুষ। শুধু ধেয়ে আসছে আগ্রাসী নদী। বন্যা-ভাঙনকবলিত মানুষের ছন্নছাড়া জীবনের করুণ কথা নিয়ে আমাদের সংবাদদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট-
খুলনা থেকে আবু হেনা মুক্তি জানান, পক্ষকালব্যাপী টানা মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিতে ভাঙনতরান্বিত হচ্ছে। আবারও চরম ঝুঁকিপূণহয়ে উঠছে উপেক্ষিত গোটা উপকুলীয় অঞ্চলের বাঁধ। দুর্যোগ আসলেই কেবল টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। মন্ত্রী এমপি জনপ্রতিনিধিরা সস্তা বাহাবা নিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তড়িৎ কিছু কর্মকান্ড শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ ও স্থায়ী কোন পদক্ষেপ দুর্যোগের আগে নেয়া হচ্ছে না। এমনকি এ অঞ্চলে এ সরকারের শাসনামলেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। গত একমাসে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের তিন জেলার ঝুঁকিপূর্ণ অন্তত শতাধিক স্পটে বাঁধ তলিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। ভাঙন বেড়েছে এসব অঞ্চলে। আসন্ন ভরা কটালে পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা ৫-৬টি উপজেলার বিভিন্ন বাঁধ নদী গর্ভে যাওয়ার জন্য প্রহর গুনছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন নদ নদীতে। ফলে আমন মৌসুমে কৃষক বড় ধরনের হোচট খেতে পারে। স¤প্রতি টানা বৃষ্টিতে খুলনার ৯ উপজেলায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর আমন বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। একই সাথে ২শ’ হেক্টর রোপা আমান আবাদের জমিও পানিতে নিমজ্জিত। কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উচু স্থানে বীজতলা তৈরীর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে কপোতাক্ষ নদের ভাঙন ভয়াবহ আকারে রুপ নিয়েছে। গত ক’দিনে উজানের পানির তোড়ে আগরঘাটা বাজারের আশপাশের এলাকাসহ হরিঢালী ও কপিলমুনি ইউনিয়নের চার গ্রামের বহু মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলী জমি, গাছপালা নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে অবিলম্বে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে ক্ষতিগ্রস্তরাসহ এলাকাবাসী। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বররা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাঙন পরিদর্শন কালে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এলাকার এমপি এক বছর আগে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভাঙনে দু’ইউনিয়নের মালথ, রামনাথপুর, দর্গামহল ও হাবিব নগরের বাসিন্দা জজ, নুরইসলাম সহ হাজারো পরিবারের শত শত বিঘার কৃষি জমি ও জনবসতি, সহায় সম্পদ নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ণ বোর্ডের শাখা প্রকৌশলী শহীদউল্লাহ মজুমদার ভাঙন এলাকা তাদের আয়ত্তের বাইরে তবে তাঁদের ডিজাইন মতো সড়ক ও জনপদ বিভাগের অর্থ সহয়তায় ভাঙনমোকাবেলার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে, সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর এলাকার দাতিনাখালী গ্রামে চূনা নদীর ওয়াপদার ভেড়ীবাঁধে ৫ নম্বর পোল্ডারে আবারও ফাটল ধরেছে। প্রায় ৫শ’ ফুট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ফাটল দেখা দিয়েছে। খুলনার শেষ প্রান্ত সুন্দরবন উপকুল কালাবগী এলাকায় ভেড়ীবাধ চরম হুমকির সম্মুখীন। বাগেরহাটের শরনখোলা ও মংলার জয়মনিতে যে কোন মুহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হতে পারে। অর্থাৎ কোন রকম ঝড় ঝঞ্জা হলেই এসব এলাকাকে রক্ষা করা কঠিন হবে।
সূত্রমতে, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাওনিয়া এলাকায় প্রবল জোয়ারের চাপে কপতোক্ষ নদের ভেড়ীবাধ ভেঙে গেছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলী জমি। স¤প্রতি ৭/২নং প্লোডারের কাছে ভেড়ীবাঁধটি বিলীন হয়। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডে-২ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ ইনকিলাবকে জানান, ভেড়ীবাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। অপরদিকে গতকাল দাকোপের সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদ ও স্বপ্নলোক কেন্দ্রের ব্যানারে নলিয়ানের নদী ভাঙনসহ ১৪টি ঝুঁকিপর্ণ ভয়বহ নদী ভাঙনমেরামতের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে। এদিকে, তালার কপতোক্ষ নদের পূরাতন নদী জেঠুয়া ভাটা হতে জেঠুয়া বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার বাঁধ এখন হুমকির মুখে। এখানে সৃষ্টি হয়েছে চরম পানিবদ্ধতা। বৃষ্টিতে আশেপাশের গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে। শ্যামনগরের বেশ কয়েকটি গ্রাম জোয়ারের পানির নিচে তলিয়ে আছে।
এদিকে, বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী ২০ বছরের মধ্যে উপকূলের ৪ হাজার কিলোমিটার বাঁধ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার কিলোমিটারে পৌছাতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তরে নেতিবাচক প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে উপকূলবেষ্টিত বেড়িবাধসহ সারাদেশের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসমূহের উপর ভয়াবহ রকমের এই ঝুঁকি ক্রমেই ত্বরান্বিত হচ্ছে। ভেড়িবাঁধের ঝুঁকি ছাড়াও খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার উপকূল এলাকার ১০ উপজেলা ২ থেকে ৩ ফুট লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনি একটি বিপদাপন্ন অবস্থায় উপকূলের চিরচেনা হাজার হাজার কৃষি, পরিবেশ, অবকাঠামো এবং জীবন-জীবিকাসহ ৩ কোটি মানুষের টিকে থাকার অবলম্বনই এখন ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট চেঞ্জ সেল প্রণীত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ইমপ্যাক্ট এবং ভালনারেবেলিটি শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখিত গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সূত্র জানায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে উপকূলজুড়ে যে বাধ রয়েছে তা এখনই প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বলা হচ্ছে, এই ঝুঁকি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪,২৭১ কিলোমিটার উপকূলীয় বাধ ধ্বংস হয়ে যাবে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই ঝুঁকি আরও ধ্বংসাতœক হয়ে ১৩,৯৯৫ কিলোমিটারে পৌছাবে।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশে স্থায়ী বাধসহ ব্যাপকভবে কনক্রিটের নানা অবকঠামো তৈরী শুরু হয় ৫০ এর দশকে। প্রকৌশল দৃষ্টিভঙ্গিতে বন্যা নিয়ন্তণ, লোনা পানির আগ্রাসন বন্ধসহ পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এটি এ সময়ের জন্য অপরিহার্য ব্যবস্থা হিসেবে গুরুত্ব পায় এবং স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্র্জন করে।
সিরাজগঞ্জ সদরে রিং বাঁধে ধস : নদী পাড়ে তীব্র ভাঙন
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও লাগাতার ভারী বর্ষনে প্রমত্ত যমুনা নদী পানি ফুঁলে ফেঁপে উঠেছে। শুরু হয়েছে নদীর বাঁধ, রিং বাঁধ ও শহর রক্ষা বাঁধসহ নদীর তীরবতী পাঁচটি নদীর পাড়ের ভাঙন। ভাঙন রোধে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ কোন কাজে আসে না। গতকাল সোমবার দুপুরে চৌহালী শহর রক্ষা বাঁধে ১২ বারের মত ভাঙন দেখা দেয়। মূহুর্তের মধ্যে খাসকাউলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশে অন্তত ৩০ মিটার এলাকায় ধস নামে। এনিয়ে জুলাই মাসেই ৭ম বারের মত ধস দেখা দিল। ভাঙন এলাকাবাসীর অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতা, ঠিকাদারদের গাফিলাতি ও কাজের নিম্নমানের কারনে প্রতিবছর ভাঙনরোধের টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। বন্যা দুর্গত মানুষ পাত্তারি গোটাতে প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। সর্বত্ত চলছে আতংঙ্ক। সব কিছু মিলিয়ে রাক্ষসী যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকায় মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে যমুনা নদীর ভাঙন রোধে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা ও টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর রক্ষায় ১০৯ টাকা ব্যায়ে ৭ কিঃমিঃ নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ২ মে, ১৬ মে, ৮ জুন, ২৩ জুন, ৩ জুলাই,৭ জুলাই, ১৯ জুলাই, ২১ জুলাই ও ২৩ জুলাই শেষ দফায় ৩১ জুলাই ১২ দফায় এই প্রকল্পে বিভিন্ন পয়েন্টে ধস নামে। এতে আতংঙ্ক গ্রস্ত হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বর্ন্যা দুর্গতি ভাঙন এলাকার মানুষ। তারা প্রচন্ড ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে এ প্রতিনিধিকে জানান, সবকারী এ প্রকল্পের ১০৯ কোটি টাকা কোন কাজেই আসলো না। পুরোটাই জলে ডুবে গেল। কজের কাজ কিছুই হলো না।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মিয়া পাড়া এলাকার প্রায় সাড়ে ৩০ মিটার তলায় ধস নামে। চৌহালী উপজেলার যমুনা নদী তীর সংরক্ষনে নির্মানাধীন বাঁধে এ নিয়ে গত তিন মাসে ১২বার ধস ও ভাঙন দেখা গেছে। পানি উন্নয়ন র্বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ্জাহান সিরাজ জানান, যমুনার মুল প্রবাহটি সরাসরি প্রতিরক্ষা বাঁধে আঘাত হানছে। এতে পানির ঘূর্নামান স্রোতে নদীর তলদেশের লোনামাটি ক্ষয়ে ভাঙনের গভীরতা বাড়ছে। এতে করে প্রতিরক্ষা বাঁধের ম্যাটিরিয়াল বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি বøক ধসে যাচ্ছে। বাঁধটির এলাকা জুড়ে পানির গভীরতা অনেক বেশি খাকার কারনে নিয়ন্ত্রনে আসচ্ছে না।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদেকুর রহমান জানান, খবর পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নিয়ে তিনি ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা ঘটনা স্থলে না এলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারে লোকজন বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে ধস ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে একই এলাকায় ১২ দফা ধস নামার কথা তিনি স্বীকার করেন।
এদিকে নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার বাহুকায় পাউবোর বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রন রিং বাঁধের ৩০ মিটার ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে আতংঙ্ক সৃষ্টি করে। মাত্র ৩ ঘন্টার মধ্যে যমুনা প্রচন্ড স্রোতে ১৫/২০টি বাড়ীÑঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায় এবং পানিতে প্লাবিত হয় বাহুকার, চিলগাছা, ইটালি, ভেওরামারা ও গজারিয়াসহ রতনকান্দি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য পরিবার কল্যান কেন্দ্র, বাহুকা উচ্চ বিদ্যালয়, রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ। ক্রমান্বয়ে আরো ৩০ -৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। আতংঙ্কিত লোকজন আসবাবপত্র নিয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে ওফদা বাঁধ ও স্কুলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। এ ভাঙন রোধে মেজর মোঃ সাইফুল হকের (পিএসসি) নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ১১ রিভার ইঞ্জিনিয়র ব্যাটেলিয়ন কাজের দায়িত্বভার গ্রহন করে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন র্বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম, প্রবল স্রোতের মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন ও ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় সেজন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে স্থানীয়রা বাঁধ ভাঙার জন্য পানি উন্নয়ন র্বোডের উদাসীনতা ও ঠিকাদারকে দায়ী করেছেন। তারা জানান, গত সে মাসের শুরুতে ২কি.মি. রিং বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামীম কনস্ট্রাকশনসহ বেশ কয়েকজন ঠিকাদারকে কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গড়িমসি এবং পাউবা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। স¤প্রতি রিং বাঁধের সন্নিকটে ভাঙন দেখা দিলে এলাকাবাসীরা পাউবো কর্তৃকক্ষকে আবারও শর্তক করেন কিন্তু বিষয়াদিকে গুরুত্ব না দেয়ার ফলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে হাজারও মানুষ।
এদিকে লগাতার ভারী বর্ষনের সঙ্গে দক্ষিনা বাতাস যুক্ত হওয়ায় জেলায় ৫টি উপজেলার নদীর পাড় যমুনা নদীতে আছড়ে পড়ছে। সিরাজগঞ্জ সদর এলাকার বাহুকা, রতনকান্দী, কাজীপুর চরগিরিশ, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর নদী তীর এলাকার ভাঙন ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। জেলার তাঁত কারখানা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে শ্রমিকেরা। তারা অর্ধহারে অনাহারে দিনপাত করছেন। শাহজাদপুর নদী ক’লের বাসিন্দা আলম, রওশন ও মোকাদ্দেম জানায়, একেতো বন্যা তার পর মরার উপর খড়ার ঘা’ তর মত মুষলধারে বৃষ্টিপাত ঘটায় তারা তাঁত কারখানার মালামাল সুতা শুকাতে না পেরে বিপদে পড়েছে। অনেকে মাচাল পেতে তাঁত ঘরের বসবাস করছে। অপর দিকে নদীর তীরবতী চরাঞ্চলের মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে। দিনের বেলায় সাপ-পোকার কামড় রাতে নৌ-ডাকাতি। উভয় সংকটে পড়ে চরাঞ্চলের মানুষ নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সব কিছু মিলিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার বানভাসা মানুষ, ও ভাঙন এলাকার সর্বশান্ত মানুষ অনেক কষ্টে পিষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তাদের আরো অভিযোগ প্রয়োজনের তুলনায় ত্রান তৎপরতাও অপ্রতুল।

https://www.dailyinqilab.com/article/89913/