২৬ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১১:৫৮

জানাযায় অংশ নিতে আসা আটক ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

দক্ষিণ বঙ্গের বিশিষ্ট আলেম, সাতক্ষীরা জেলা ইসলাম প্রচার সমিতির সভাপতি, বিশিষ্ট অধ্যাপক, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমীর আবু সালেহ মোঃ রফিকুল ইসলাম। তাঁর আকষ্মীক মৃত্যুতে গোটা জেলার ইসলাম প্রিয় ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা শোকাহত। এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর মত আলেমের ইসলাম প্রচারের সাতক্ষীরাতে জামায়াতে ইসলামের পতাকা তলে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছে। সরকারে নৈরাজ্য পূর্ণ অবস্থায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে গোটা সাতক্ষীরাকে সঠিক পথের সন্ধান দেখিয়েছেন। তাই সরকারের নজর ছিল তাঁর প্রতি একটু বেশি। বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। পুলিশের অত্যাচারে তিনি গত ৫বছর বাড়ি ছাড়া ছিলেন। ২০১৫ সালে দীর্ঘ ২২ দিন সরকারের একটি বাহিনী তাকে গুম করে রাখে। তার হঠাৎ মৃত্যুতে দক্ষিণাঞ্চলে ইসলাম প্রিয় মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি মাদ্রাসা,মসজিদ,মক্তব সহ অসংখ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ায় তার অবদান অসামান্য। ব্রেনস্টোক জনিত কারণে তিনি রোববার খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তিকাল করেন।
মরহুমকে শেষ বিদায় জানাতে সাতক্ষীরা সহ আশপাশের জেলা থেকে তার অনেক শুভাকাঙ্খি আসেন তার বাড়িতে। প্রচন্ডবৃষ্টি উপেক্ষা করে সোমবার মরহুমের বাড়ির সামনে আগরদাড়ি কামিল মাদ্রাসা মাঠে হাজারো লোকের অংশ গ্রহণে তার জানাযা নামায অনুষ্ঠিত হয়। নামাযে ইমামতি করেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বারী। পুলিশ প্রহরায় এবং ব্যাপক পুলিশি নজরদারির মধ্যে এ জানাযা নামায অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমকে দেখতে গেলে পুলিশ নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে।
জানাযায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের ক্যামেরা বন্দী করে পুলিশ। সকল মুসল্লিকে ভিডিও অডিও ক্যামেরার ধারণ করে পুলিশ। এতে গোটা এলাকাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের ক্যামেরায় ভিডিও ধারণের কারণে গোটা এলাকায় গ্রেফতার ও অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও পুলিশ জানাযায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে গত সোমবারের অনুষ্ঠিত জানাযাতে অংশ নিতে আসা শতাধিক নারী ও পুরুষকে আটক করে পুলিশ। রাতভর আটক রেখে গতকাল বিকিলে পৃথক দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আটককৃত ৪৯ জনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ। সদর থানা মামলা নং ৭৯ ও ৮০। এসব মামলায় একটিতে ২২ ও অপরটিতে ২৭ জনকে আসামী করা হয়েছে। যার জিআর নং ৫৪৭ ও ৫৪৮। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে আটক কৃতদের বিরুদ্ধে।
এদিকে জানাযা নামায থেকে মুসল্লি গ্রেফতারে সোসাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছে। সোসাল মিডিয়াতে নিন্দার ঝড় বইছে। স্তানীয় কালৈর চিত্র,সাতনদী,কাফেলা,পত্রদূত সহ শতাধিক গণমাধ্যমে পুলিশের আচারণ নিয়ে সমালোচনা করা হয়। এমনকি কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ সংগ্রহে পুলিশের ভূমিকার নিন্দা জানানো হয়েছে।
জেলা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, অতিউৎসাহী পুলিশের এমন কর্মকান্ডে খোদ আ’লীগ বিব্রত। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে।
জেলা শহরের গতকাল অনেক সাধারণ মানুষের সাথে কথা হয়। একজন বলেন আমার বয়সে শুনিনি জানাযা নামায পড়তে গেলে পুলিশ গণগ্রেফতার করে। অপর একজন বলেন এর পর মসজিদে নামায পড়তে গেলেও পুলিশ হয়রানি করবে। এক জন বলেন, আগে নামায পড়তাম। এখন ছেড়ে দিয়েছি।
যাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদের মধ্যে সাতক্ষীরা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আব্দুস সোবহান মুকুল, কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর মুজাহিদ , সেক্রেটারি আব্দুল ওহাব, কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব পারভীন, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডঃ শহীদুল ইসলাম, তালার খলিষ খালিষখালি ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মাষ্টার শহিদুল ইসলাম সহ, বুদহাটা জামায়াতের আমীর আব্দুস সালাম,শ্রিউলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর লুৎফর রহমান,সদর জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সবুর, দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের মহিলা সভানেত্রী মনওয়ারা বেগম,সখিপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভানেত্রী আনজুয়ারা উল্লেখযোগ্য।
জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনার একটি হাসপাতলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার মৃত্যুবরণ করেন। সোমবার বিকালে সদর উপজেলার আগরদাড়ি মাদ্রাসা ময়দানে বাদ জোহর তার জানাযা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় সাতক্ষীরার আশাশুনি, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর, কলারোয়া, তালা ও সদর উপজেলা ও ঝিকরগাছা, মনিরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস ও মাইক্রোযোগে জামায়াতের নেতা-কর্মীসহ সহাস্রাধিক লোক অংশ গ্রহণ করে। জানাযা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাস, বাস ও ইঞ্জিন ভ্যান থেকে জামায়াতের নেতা-কর্মীসহ ৬৯ জনকে আটক করা হয়।

http://www.dailysangram.com/post/293406-